ঢাকাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা দাস ইন্সট্রুমেন্টের একটি গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে বর্তমান সরকারের অধীনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। দাস ইন্সট্রুমেন্টের পক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের একটি মিলনায়তনে এই গবেষণা তুলে ধরেন ডক্টর মিলন দালাল, ডক্টর তথাগত দাস এবং ডক্টর খাদেম হোসেন। ঘোষণার সময়ে তারা বর্তমান সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বর্তমান সরকার আমাদের কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞাই পরিবর্তন করে দিয়েছে। একটি দেশ যে এতো গণতান্ত্রিক হতে পারে এটি আমাদের জানাই ছিলও না।
মূল প্রবন্ধ পাঠ করতে গিয়ে নাট্যকলায় পিএইচডি ডক্টর তথাগত দাস বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে আমাদের মতন বুদ্ধিজীবিরা পাচ্ছে পূর্ণ স্বাধীনতা। কোন ধরণের ভয়ভীতি ছাড়াই তারা গবেষণা করতে পারছেন। এটুকু বলেই তিনি খুক করে হেসে ওঠেন। তবে সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি দাবি করেন যে এটি হাসি ছিল না, এটি ছিল কাশি। তার বাথরুমের এসি থেকে ঠাণ্ডা পানি বুকে এসে পড়েছে এবং বুকে জমেছে কফ। এমন সময়ে তিনি একটু কষ্ট হলেও দেশি পণ্য (এসি) কিনে সকলকে ধন্য হতে উপদেশ দেন। তার দেশপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে এ পর্যায়ে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান ডক্টর দালাল এবং ডক্টর খাদেম।
এর পরে গবেষণার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করেন ডক্টর খাদেম। তিনি বলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে এই সূচক নির্মাণ করা হয়েছে। কোন ধরণের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব দূর করবার জন্য বিরোধী দল অনুসরণ করতে পারে এমন বুদ্ধিজীবীদের বাতিল করা হয়েছে। যেসকল বুদ্ধিজীবীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে আবেগঘন রচনা লিখেছেন তাদেরকে দেয়া হয়েছে অগ্রাধিকার। দাস ইন্সট্রুমেন্ট মনে করে, যেসব বুদ্ধিজীবী গণতন্ত্রের মানসকন্যার কদর বুঝতে পারেন, তারাই গণতন্ত্রের প্রকৃত বোদ্ধা।
এ পর্যায়ে বাহাত্তর টিভির একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করে বসেন, আপনারা এতো অসাম্ গবেষণা কিভাবে করলেন? ক্যামনে পারো ম্যান? বাহাত্তর টিভিও আপনাদের মতন হতে চায়। বাথরুমের এসি থেকে আমরাও ঠাণ্ডা লাগাতে চাই।
এর উত্তরে ডক্টর দালাল বলেন, আমি যখন কোন গবেষণার অংশ হই, তখন সেটি এতোই উন্নত হয় যে তাকে সকলে বলে দালালী গবেষণা। আপনারাও সংবাদ ছেড়ে আমাদের মতন দালালী গবেষণা করুন, আপনাদের বাথরুমেও এসির ব্যবস্থা হবে ইনশাল্লাহ।
বাহাত্তর টিভির ওই সাংবাদিক তখন বিড়বিড় করে কিছু একটা বলে ওঠেন। এই প্রতিবেদকের কাছে মনে হয়েছে তিনি “দালালী সংবাদও লেখা যায়” জাতীয় কিছু বলেন।
এমন সময়ে মুক্তিফোরামের পক্ষে আমি প্রশ্ন করলাম, বাংলাদেশের উপরে কোন দেশ কি এই সূচকে আছে? যদি থাকে, তাকে আমরা কিভাবে টপকাতে পারি?
এর উত্তরে ডক্টর দাস বলেন, আপনি কোন দলের থুড়ি পত্রিকার লোক?
আম তখন বলি, মুক্তিফোরাম–এটা একটা বিকল্প গণমাধ্যম।
উত্তরে ডক্টর দাস বিড়বিড় করে বলেন, বিকল্প! এটা কোন ভাষার শব্দ? আমি তো অবিকল্প জানতাম। বিকল্প আবার কি জিনিস!
তারপরেই নিজেকে সামলে নিয়ে ডক্টর দাস বলেন, আমাদের উপরে রয়েছে বেশ কিছু দেশ। যেমন চীন, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান ইত্যাদি। তবে সবার উপরে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। আমরা এক লাফে তাদেরকে টপকাতে চাই। এজন্যে আমাদের বেশ কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। আমাদের পূর্ণাঙ্গ গবেষণাপত্রে তার উল্লেখ পাবেন। তবে আমাদের সর্বপ্রথম প্রস্তাবনা হলো বাংলাদেশের অফিসিয়াল নাম গণপ্রজাতন্ত্রিক বাংলাদেশ থেকে পরিবর্তন করে মহাগণতান্ত্রিক স্বাধীন-মুক্ত অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বাংলাদেশী প্রজাতন্ত্র করা হোক।
সবশেষে দাস ইন্সট্রুমেন্টের গবেষকরা ঘোষণা করেন যে শীঘ্রি তারা বিশ্বখ্যাত গবেষক রূপসী সরকারের সাথে অফিসিয়ালি সমঝোতা স্মরক স্বাক্ষর করবেন। সে পর্যায়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করা হতে পারে। সরকার-দাস গবেষণা ইন্সটিটিউট নামটি প্রস্তাবে রয়েছে, তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত হওয়া মাত্রই সেটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।
এটি একটি রম্য সংবাদ। মুক্তিফোরামের পক্ষে এটি রচনা করেছেন ফারুক রাসুল।