আবরারের হত্যা কান্ডের ধরন ছাত্রলীগের অন্যান্য হত্যার ধরনের (শিবির সন্দেহ) সাথে মিলে গেলেও এর কারন সম্পুর্ন ভিন্ন। ভিন্ন কারন, এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশের অন্যতম ছাত্র সংগঠন এখন ভারতের তাবেদার অথবা সেই ছাত্রলীগকে যারা চালায় তারা তাবেদার। সত্যিকথা বলতে কি ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আওয়ামীলীগ ভারতের বন্ধুত্বের নামে যেভাবে ভারতের নিয়ন্ত্রণর বলয়ে চলে এসেছে তা এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মাথা ব্যাথা। ভারত এখন “প্রধানমন্ত্রীর মাথাব্যাথা”? কথাটা শুনে হয়ত অনেকে অবাক হচ্ছেন, অনেকে চটেছেন অনেকেই ঠাট্টা হিসেবে নিয়েছেন। তবে কথাটার পেছনের যুক্তি কতটা শক্তিশালী তা নিজেরাই যাচাই করতে পারবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে তার ভাষ্য থেকেই। উনি ভারতের সাথে সাক্ষর করা চুক্তি এবং এর প্রতিক্রিয়ায় হওয়া আন্দোলন গুলো নিয়ে যা বলেছেন সেখান থেকেই বোঝা যায়।
আসলে যে চুক্তি তিনি সই করে এসেছেন তা কখনও বাংলাদেশের জন্য লাভবান তো না ই বরং চুক্তিতে বাংলাদেশ যা কিছু বিলিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা দেওয়া কোনভাবেই সম্ভব না। এক কথায় ফিজিবল না। সুতরাং প্রধানমন্ত্রী ভালোই জানেন যেটা দেয়া সম্ভব না সেটা দেয়ার এই চুক্তি, এই প্রতিশ্রুতি একটা জোরজবরদস্তি, একটা মিথ্যে চুক্তি ছাড়া আর কিছুই না। জ্বি এটা স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে জানেন তা তিনি স্বীকার করুক আর নাই বা করুক। এখন প্রশ্ন আসে ভারত কি বোঝে না যে বাংলাদেশ কি দেয়ার সমর্থ রাখে আর না রাখে? জ্বি ভারত ভালোমতই জানে এবং ভারত এটাই চায় যে বাংলাদেশ তার প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন করতে ব্যার্থ হোক এবং তারা এদেশের রাজনীতির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করুক। তবে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এগুলো কেন ভারতের সাথে এমন নিরেট এক পেশে বন্ধুত্ব অটুট রেখেছে?
আসল কথা হচ্ছে তিনি ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছেন মাত্র। অন্য দিকে ভারত এই বন্ধুত্বের সুযোগে সব কিছু বাগিয়ে নিচ্ছে, এবং দূরে ঠেলে দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে। অন্যদিকে ভারত তার এজেন্সি গুলো দিয়ে স্বয়ং আওয়ামিলীগ এ এতটা নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাচ্ছে তারই পিতার সংগঠন আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ থেকে। সুতরাং এই আওয়ামী বান্দারা যতই হাসিনা বন্দনা করুক না কেন মনে মনে তারাই (অবশ্যই সবাই নয়) হাসিনা বিরোধী এবং ভারত পন্থী। সুতরাং অচিরেই ভারত অর্থাৎ মোদীর সাথে প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দুরত্ব বাড়বে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী হয়ে পড়বেন নিরব এবং দুর্বল।
উপরের কথা গুলোই অনেকে দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন। তবে আমি কথা দিচ্ছি (যদিও আমি কিছুই না) এমনটাই হবে। এর কারনেই ভারতের সাথে চুক্তি গুলোর বিরোধীতা করতে হবে, আন্দোলনে দাড়াতে হবে। এতে অনেকেই মনে করবেন প্রধানমন্ত্রীকে গোদী থেকে নামাতেই হয়ত এই আন্দোলন। না তা, মোটেও নয়। বরং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেই এই আন্দোলন কে বেগবান করা উচিৎ। কারন কিছুদিন পরই ভারত যখন বুঝবে শেখ হাসিনা এখন ভারতকে আর কিছুই দেয়ার সামর্থ রাখে না তখনই তাকে হটানোর পরিকল্পনা ভারত করবে তখন আর বিএনপি বা জামাত দরকার হবে না। তবে এমন হলে দেশে কি পরিমান অরাজকতা হবে তার উপযুক্ত ভাব হয়ত এই “অরাজকতা” শব্দটিও দিয়ে বোঝানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতেই হবে বা এই ফ্যসিজম বলবৎ থাকুক আমি সেরকমও বলছি না। তবে বলছি ভারত মারাত্মক অশান্তি তৈরী করবে, ভয়ানয়ক! ভয়ানক! ভয়ানক! সুতরাং প্রধানমন্ত্রীই চাইছেন এই চুক্তির বিরুদ্ধে কথা হোক, আন্দোলন হোক। তিনি যেন নিরব থেকেই ভারতকে বোঝাতে পারেন যে তিনি চাইলেও জনগণ এরকম চুক্তির পক্ষে নেই।
জ্বি এই ব্যাপারটা এতটাই সরল, কোন কুটিলতা নেই। যারা সহজ ব্যাপার টা সহজ ভাবে ধরতে পারছেন না তারা সহজ চিন্তা করতেই ভুলে গ্যাছেন হয়ত। আর ভারতের চুক্তি বিরোধী কথা বলা মানে কিন্তু ভারত বিরোধী, ভারতের জনগণ বিরোধী কিংবা হিন্দুবিরোধী হওয়া নয়। বরং পররাষ্ট্রের প্রতি দাসত্ব এবং দাসমূলক বাংলাদেশী কূটনীতি বিরোধী হওয়াকেই বোঝাবে। সুতরাং নির্দিধায় এরকম আন্দোলন গোড়ে তোলা জরুরী। দেশকে রক্ষা করতে চাইলে এখনি রাস্তায় নামা জরুরী। আবরার হত্যার উপযুক্ত এবং সর্বোচ্চ বিচারারের মাধ্যমেই শুরু হোক একাট্টা বাংলাদেশের শুরুয়াত। বলে রাখি ভারত আমাদের এমন কোনঠাসা করবে যে আমরা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে বাধ্য হব কিন্তু ততক্ষণে দেরী হয়ে যাবে অনেক। তাই সময় এখনই। রাস্তায় আছি। রাস্তায় নামেন।
লেখাঃমাশকুর রাতুল, মুক্তিফোরামের একটিভিজম উইং এর সাথে জড়িত
1 Comment
Are you sure about this? “সুতরাং প্রধানমন্ত্রীই চাইছেন এই চুক্তির বিরুদ্ধে কথা হোক, আন্দোলন হোক। তিনি যেন নিরব থেকেই ভারতকে বোঝাতে পারেন যে তিনি চাইলেও জনগণ এরকম চুক্তির পক্ষে নেই।”
Again who will let the people know that she wants such a protest to take place?