সূত্রঃ সারাবাংলা
সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী নারী গৃহকর্মী ও শ্রমিক নির্যাতন বন্ধে সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়, সে দাবি জানিয়েছে মুক্তিফোরাম ও গণঐক্য। সুস্পষ্ট চুক্তির মাধ্যমে নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রতারক দালাল গোষ্ঠীকে বিচারের আওতায় আনা ও ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ ১৩ দাবি জানিয়েছে সংগঠন দু’টি।
শুক্রবার (১ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন থেকে এই ১৩ দফা দাবি জানানো হয়।
গণঐক্যের আহ্বায়ক আরমান হোসেন পলাশের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, মানবাধিকারকর্মী নায়মা ইমাম চৌধুরী, গণতান্ত্রিক সমাবেশের সমন্বয়ক নয়ন আহমেদ, লেখক রাখাল রাহা, সাবেক ছাত্রনেতা আবু তৈয়ব হাবিলদার, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের মো. তারেক রহমান, মুক্তিফোরাম মিডিয়ার সম্পাদক অনুপম দেবাশীষ রায়সহ অন্যরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মুক্তিফোরামের আরাফ ইবনে সাইফ।
বক্তারা প্রবাসী নারীকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের ঘাটতিগুলোকে তুলে ধরেন এবং এগুলোর সংশোধন করে প্রবাসী নারীকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান করার দাবি তোলেন। একইসঙ্গে বিদেশি দূতাবাসগুলোকে শ্রমিকদের নিরাপত্তায় জোর ভূমিকা রাখার দাবি জানানো হয় এবং দায়িত্বে অবহেলাকারী এবং প্রবাসীদের হয়রানি ও অবমাননাকারীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি তোলা হয়।
মানববন্ধনে মুক্তিফোরামের পক্ষ থেকে ১৩ দফা দাবি তুলে ধরেন আসিফ ইমরান। দাবিগুলো হলো— ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও রেমিট্যান্সের লোভে স্রেফ সমঝোতার ভিত্তিতে সরকারের যারা বাংলাদেশি নারীদের ধর্ষণ, নির্যাতন ও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে; নারী শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন ও ধর্ষণের খবর জানা সত্ত্বেও দূতাবাস ও মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে; সৌদি মালিকের নির্যাতনে মৃত্যু ও আত্মহত্যার শিকার নারী-শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ন্যূনতম ২ কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
দাবিগুলোর মধ্যে আরও আছে— সৌদি থেকে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়া নারীদের বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রতি ন্যূনতম ১ কোটি টাকা দিতে হবে; যেসব নারী সৌদি আরবে নির্যাতন-নিপীড়নে শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তাদের সরকারের নিজ দায়িত্বে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে ও এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে; নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা ও আত্মহত্যায় প্ররোচণাদাতা হিসেবে অভিযুক্ত সৌদি নাগরিকদের বিচারের আওতায় আনতে সৌদি সরকারকে চাপ দিতে হবে ও সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; সৌদি আরবে শ্রমিক হিসেবে নির্যাতিত নারীর মামলা করার প্রক্রিয়া সহজ ও মানবিক করতে সৌদি সরকারকে চাপ দিতে হবে; মামলা নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট শ্রমিককে সৌদিতে থাকার বাধ্যবাধকতা বাতিল করতে হবে।
দাবিতে আরও বলা হয়, নির্যাতনের মুখে দেশে ফেরার প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ‘নিয়োগকর্তা তার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ বা শর্ত ভঙ্গ করেনি’ মর্মে লিখিত বিবরণী দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বাতিল করতে সৌদি সরকারকে চাপ দিতে হবে; নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরে আসা নারীদের পারিবারিক ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে; কোনো পরিবার জায়গা দিতে না চাইলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে ও এজন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা বা আইন প্রণয়ন করতে হবে; সৌদিতে নারী শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো অর্থ লেনদেনের শর্ত না থাকা সত্ত্বেও যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি নারী শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে থাকে, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে; অতিরিক্ত মুনাফার জন্য মধ্যস্বত্বভোগী রিক্রুটিং এজেন্সি, যারা নারী শ্রমিকদেরকে অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে; রিক্রুটিং এজেন্সি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট নারী শ্রমিকের দায়দায়িত্ব তিন মাসের বদলে পুরুষ শ্রমিকদের মতোই দুই বছর করতে হবে; কোনো সমঝোতা চুক্তির ওপর ভিত্তি করে নয়, সরাসরি আইনি প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ চুক্তির মাধ্যমে নারী শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাতে হবে; চুক্তিতে শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তার গ্যারান্টি যুক্ত থাকতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রক্তের মতো গুরুত্ববহ উপাদানের ভূমিকা রেখে চলেছে রেমিট্যান্স নামক যে প্রবাসী শ্রমিকদের শ্রম ও ঘামের অবদান, সেই অবদানকে সম্মান জানানো মানুষ হিসেবে প্রতিটি মানুষের কর্তব্য জ্ঞান করতে হবে এবং প্রবাসী শ্রমিকদের, বিশেষত নারী শ্রমিকদের ওপরে চলমান বাস্তবতা নিরসনে যদি সরকার সময়ে সঠিক পদক্ষেপ না রাখে তাহলে তারা সমাজ ও দেশের সর্বস্তরে ধিকৃত হবে।