প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত সরকারের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বর্ণবাদী পদক্ষেপ এনআরসি (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন অফ সিটিজেনস) ও সিএএ (সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট এক্ট) এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ জানিয়ে, ভারতীয় জনগণের এ সম্পর্কিত প্রতিবাদি আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে, ঢাকায় ছাত্র অধিকার সংরক্ষন পরিষদের এ সম্পর্কিত প্রতিবাদি সমাবেশে হামলার নিন্দা ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার আহবান জানিয়ে এবং পাঁচ দফা দাবী পেশ করে সমাবেশের আয়োজন করে সম্মিলিত মানুষের মঞ্চ।
বৃহষ্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ইং তারিখে বিকাল ৪টায়, জাতীয় যাদুঘরের সামনে, সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি, লেখক, সাংবাদিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং স্বাধীন এক্টিভিস্টরা। ব্যক্তি হিসেবে সংহতি জানাতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, গণসংহতি আন্দোলন, মৌলিক বাংলা, গণতান্ত্রিক সমাবেশ, বাংলাদেশ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া, রাষ্ট্রচিন্তা ও মুক্তিফোরামের সদস্যরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ভারতের বিজেপি – আরএসএস – এর মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য হয় নাই ।
প্রথমত, এনআরসি বা সিএএ — এই পদক্ষেপ বা আইনগুলো ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক, বিভাজনমূলক এবং একটি নির্দিষ্ট হিন্দুত্ববাদী চিন্তা ও চর্চাকে বহুত্বের পরিবর্তে একত্বকে, ন্যায্যতার পরিবর্তে সংখ্যাগুরুর আধিপত্যকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে এই আইন অসঙ্গতিপূর্ণই কেবল নয়, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী।
তৃতীয়ত, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের টার্গেট করা হয়েছে হিন্দুত্ববাদীদের বক্তব্যে ও আইনে। চর্তুথত, এই আইন বাংলাদেশের `সংখ্যালঘুদের‘ প্রতি বিদ্বেষ ও অবিশ্বাস ঘনীভূত করতে প্রয়াসী। সংখ্যালঘুদের অবস্থা ও অবস্থানকে নড়বড়ে করে তুলতে ভূমিকা রাখতে চায় এই পদক্ষেপ বা আইনগুলো।
সম্মিলিত মানুষের মঞ্চের বক্তারা মনে করেন, ঐতিহাসিকভাবেই এই অঞ্চলের পরিচয়বাদী রাজনীতি একে অপরের সঙ্গে লেপ্টে রয়েছে। অতীতে ভারতে সংখ্যাগুরুত্ববাদী নিপীড়ন আমাদের দেশেও নিপীড়নকে উসকে দিয়েছে (উদাহরণ, ১৯৯২ সালে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের পরে বাংলাদেশে পরিচালিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা)। তাই এই আইনের পরবর্তী প্রভাব হতে পারে ভয়াবহ। কিছু কিছু প্রমাণ আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের দেশে লক্ষ্য করছি (যেমন পুশ-ইনের ঘটনায়)।
দীর্ঘস্থায়ী ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্টতাবাদী মতাদর্শের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ কোনোভাবেই স্বাধীন বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের জন্য ইতিবাচক হবে না। এ পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের চলমানতা ও মৌলিক চিন্তার সঙ্গে মতৈক্য পোষণ করেন এমন সকল বাংলাদেশের নাগরিকের এই আইনের বিরোধীতা করা উচিৎ, এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে সংহতি বোধ ও প্রকাশ করা উচিৎ এবং প্রতিবাদকারীদের উপরে হামলার বিরুদ্ধে কথা বলা উচিৎ। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের একথাই শিখিয়েছে।
কিন্তু সম্মিলিত মানুষের মঞ্চে অংশগ্রহণকারী বক্তারা লক্ষ্য করছে যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এইসব আইন ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এতে আমাদের কিছু হবে না। শুধু তাই নয়, সরকারের ইন্ধনে এইসব আইনের দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনা করে এবং স্রেফ মানবিক কারণেও এদেশে যে ছাত্র-তরুণেরা প্রতিবাদ করছে তাদের উপর হামলা চালানা হচ্ছে।
অতএব, একটা বহুত্ববাদী সমাজের যে অঙ্গীকার মুক্তিযুদ্ধের, সেই অঙ্গীকার থেকে এই বিজয়ের মাসে সম্মিলিত মানুষের মঞ্চ জাতীয় জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে নিম্নলিখিত সুষ্পষ্ট দাবী পেশ করেনঃ
১। বাংলাদেশ সরকারকে এনআরসি-সিএএর নামে ভারতীয় মুসলমানদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেয়ার প্রতিবাদ করতে হবে ।
২। মানুষের মানবিক,নাগরিক ও আইনী মর্যাদা লঙ্ঘন করে যাতে কাউকে পুশইন না করা হয়, সে বিষয়ে বাংলাদেশকে স্পষ্ট অবস্থান নিতে হবে । ইতিমধ্যে যাদেরকে পুশইন করা হয়েছে তাদের বিষয়ে আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে ।
৩। বাংলাদেশকে একটি ধর্মান্ধ রাষ্ট্র হিসেবে সিএএ আইনে এবং বিজেপি নেতাদের ভাষায় যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তার তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হবে ।
৪। সিএএ-এনআরসিকে রোহিঙ্গা সংকটের মতন নতুন একটি সংকটের সূতিকাগার আখ্যা দিয়ে বিবৃতি দিতে হবে এবং নতুন একটি গণহত্যা বা কাঠামোগত নির্যাতনের মাধ্যমে শরণার্থীকরণের প্রক্রিয়াকে রুখে দিতে হবে ।
৫। ভারতের আন্দোলনরত ছাত্র জনতার সাথে সংহতি জানাতে হবে ও দক্ষিণ এশিয়ার ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্য রক্ষায় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করতে হবে।
ব্যক্তি হিসেবে সমাবেশে সংহতি জানাতে আসা উপস্থিতির মাঝে চল্লিশ জনের একটি আংশিক তালিকা নিচে দেয়া হলোঃ
অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী- শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাবি
আখতার হোসেন- সমাজসেবা সম্পাদক, ডাকসু
জাহিদ জামিল– বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন
জুলহাসনাইন বাবু– গণসংহতি আন্দোলন
আরমানুল হক– বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন
মোহম্মদ তারেক রহমান– বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ
নয়ন আহমেদ- গণতান্ত্রিক সমাবেশ
তাসলিমা আখতার – গণসংহতি আন্দোলন
সাদিক রেজা – ছাত্র ফেডারেশন
তওফিক হাসান – ছাত্র ফেডারেশন
আরমানুল হক–ছাত্র ফেডারেশন
শশান ঠাকুর – মৌলিক বাংলা
স্বপ্নীল চৌধুরী– লোকায়ত বিদ্যালয়
হাসিবুল হাসান শান্ত–লোকায়ত বিদ্যালয়
নাঈম সিনহা–জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চ
সাখাওয়াত হোসেন – বাংলাদেশ পুর্নগঠন প্রক্রিয়া
মো: আ: রাজ্জাক তালুকদার সজীব, বাংলাদেশ পূণর্গঠন প্রক্রিয়া
মিজানুর রহমান – একটিভিষ্ট
হানিফ বাংলাদেশী- একটিভিষ্ট
আরমান হোসেন – একটিভিষ্ট
নাঈম সিনহা-একটিভিষ্ট
রিফাত বিন সালাম রুপম – এক্টিভিষ্ট
আবদুর রাজ্জাক–এক্টিভিস্ট
হুমায়ূন কবির–এক্টিভিস্ট
এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম-রাষ্ট্রচিন্তা
হাবিবুর রহমান রাজা- সদস্য রাষ্ট্রচিন্তা
রাখাল রাহা -রাষ্ট্রচিন্তা
ফরিদুল হক- রাষ্ট্রচিন্তা
সারোয়ার তুষার–রাষ্ট্রচিন্তা
মাহমুদুল হক- রাষ্ট্রচিন্তা
কাইয়ুম আহমেদ–রাষ্ট্রচিন্তা
হাবিবুর রহমান–রাষ্ট্রচিন্তা
আব্দুল জলিল– রাষ্ট্রচিন্তা
ইমরান ইমন–রাষ্ট্রচিন্তা
তুহিন চৌধুরি– রাষ্ট্রচিন্তা
অনুপম দেবাশীষ রায়- মুক্তিফোরাম
মারুফ আহমেদ– মুক্তিফোরাম
রুম্মান আফরোজ ফাহমিদা– মুক্তিফোরাম
ইরাবতী চৌধুরী– মুক্তিফোরাম
সুবিনয় মুস্তফী ইরন–মুক্তিফোরাম