এবারের ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় ছিলো পোস্টার। যার ভোটবর্জ্যের পরিমাণ আড়াই হাজার টন। যার মধ্যে ২ হাজার ৪৭২ টনই সরাসরি প্লাস্টিক। নগরীর অভিভাবকদের চাইতে নির্বাচন কমিশনকেই বিধিমালায় প্লাস্টিক পোস্টার নিষিদ্ধ করতে হবে। এমন দাবি নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনকে তাগাদা দিয়েছে মুক্তিফোরাম। এ সময়ে এই সমস্যার ভয়াবহতার প্রতীক হিসেবে তারা এক বস্তা প্লাস্টিক-পোস্টার বর্জ্য নির্বাচন ভবনে নিয়ে আসেন।
এ সময় তাদের সাথে কথা বলেন দায়িত্বরত নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম। এ সময় নির্বাচন কমিশনারকে মুক্তিফোরামের সংগঠক আসিফ ইমরান এ শহরে ভোটবর্জ্যের কারণে হওয়া প্লাস্টিক দূষণের বিষয়ে অবহিত করেন। পাশাপাশি আরেকজন সংগঠক অনুপম দেবাশীষ রায় দাবি করেন যে আগে থেকেই নীতিমালায় এই প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টারকে নিষিদ্ধ করা হলে আজ এই পরিস্থিতি দেখতে হতো না। এ সময় প্রতিউত্তরে নির্বাচন কমিশনার জানান যে তাদের এ বিষয়ে ন্যুনতম ছয়মাস সময় লাগবে।
পরে মুক্তিফোরামের প্রতিবাদলিপি ও দাবিনামা নির্বাচন কমিশনারের হাতে তুলে দেন সংগঠক আসিফ আদনান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিফোরামের অপরাপর সংগঠকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অনুপম দেবাশীষ রায়, ইয়াসির মোস্তাফিজ রিদম, আসিফ ইমরান, আরাফ ইবনে সাইফ। সেইসাথে এসেছিলেন নবীন ফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য আরিফ সোহেল ও নূর-ই-আলম নাহিদ। সাথে ছিলেন সম্মিলিত মানুষের মঞ্চের সংগঠক আইনুল হক।
বৈঠক শেষে মুক্তিফোরামের সংগঠকদের মধ্যে আসিফ আদনান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা প্লাস্টিকযুক্ত পোষ্টার ও পরিবেশ দূষনকারী দ্রব্যের নির্বাচনী প্রচারনা কাজে ব্যবহার বন্ধে নীতিমালা চেয়েছি। কমিশন বৈঠকে বিষয়টি আলোচনা করবেন বলে রফিকুল ইসলাম আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ঢাকা ইতিমধ্যে পরিবেশ দূষনে উপরের সারির একটি নগরে পরিণত হয়েছে। আর যেভাবে পোস্টারগুলো প্লাস্টিকে মোড়ানো হয়েছে, এতে পরিবেশের আরও ক্ষতি হবে। এটা থেকে রক্ষা পেতে একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন।
মুক্তিফোরামের স্মারকলিপিটি হুবুহু তুলে ধরা হল
বরাবর,
নির্বাচন কমিশনার,
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন ভবন,
প্লট নং-ই-১৪/জেড, আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭
বিষয়: প্লাস্টিক লেমিনেটেড পোস্টার নিরসন প্রসঙ্গে।
জনাব,
স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে যে কোন দেশেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন সবসময়ই গুরুত্বপূর্ন। আর সেই নির্বাচনকে আরো অর্থবহ করে তোলে বহুজনের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ। অনেকের অংশগ্রহণে সবাই চায় নিজেকে তুলে ধরতে। প্রয়োজন হয় প্রচারের। আর তার প্রধান নিয়ামক পোস্টার। যার আলোকে ২০২০ সালের ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্লাস্টিকে মোড়ানো পোস্টারের বহুল ব্যবহার হয়। যা নির্বাচন পরবর্তী ২ হাজার ৫ শত টন বর্জ্যের কারণ। যার মধ্যে ২ হাজার ৪৭২ টন সরাসরি প্লাস্টিক বর্জ্য। যে কোন পরিবেশ সচেতন মানুষের চিন্তার উদ্রেক ঘটাতে যথেষ্ট। উদ্বেগের কারণ হিসেবে গত ২২ জানুয়ারী পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার লাগানো কেন বেআইনি নয়, তা জানতে চেয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন আদালত।
ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার লাগানোর বিষয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। অথচ শুরু থেকেই নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে একদমই নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।
নির্বাচন শেষে পোস্টার সরিয়ে ফেলাই যে সমাধান নয় বরঞ্চ যেখানে প্রতিটি দেশ,রাষ্ট্র,প্রতিষ্ঠান প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদনে নিরুৎসাহীত করছে সেখানে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কার্যকর সময়ে এমন নীরব ভূমিকা পরোক্ষভাবে প্লাস্টিক দূষণের জন্যে দায়ী। এ দায় নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। শুধু তাই নয়, ২রা ফেব্রুয়ারি রোববার নির্বাচক কমিশন ইসি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিলবোর্ড,ব্যানার,ফেস্টুনসহ অন্যান্য প্রচার সামগ্রী সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্যাম্প সরানোর নির্দেশ রয়েছে স্বয়ং প্রার্থীদের উপর। কিন্ত প্লাস্টিক পোস্টারের নিরসনে শুরু থেকে শেষ সেরকম আক্ষরিক কোন পদক্ষেপ নেয়নি এ নির্বাচক কমিশন।
যেহেতু নির্বাচন কমিশনের এ বিষয়ক কোন সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই। সেইসাথে হাইকোর্টের রুল জারী হওয়ার এতোদিন পরও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাছাড়া হাইকোর্ট যেখানে ওয়ান টাইম প্লাস্টিক ব্যবহারকেও নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ফেলেছে। সেখানে নির্বাচনের মতো ব্যয়বহুল ও স্পর্শকাতর একটা আয়োজনকে ঘিরে নির্বাচন কমিশনের কোন নীতিমালা তৈরী না করাটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রাণ প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধ নাগরিক সমাজ রাষ্ট্রের এমন গুরুদায়িত্বে থাকা সংস্থার প্রতি ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ। তাই ২ হাজার ৪৭২ টন প্লাস্টিক ধ্বংসে এই প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ আমরা জানতে চাই।
তারিখ: ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলামের সঙ্গে মুক্তিফোরামের সংগঠক অনুপম দেবাশীষ রায়, আসিফ আদনান, আসিফ ইমরান, আরিফ সোহেল, নাহিদ, আরাফ আনিম, মারুফ আহমেদ ও এএসএম রিদম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত মানুষের মঞ্চের সংগঠক আইনুল হক ।
উল্লেখ্য এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (এসডো) নামের একটি সংগঠন সম্প্রতি ঢাকা দুই সিটি ভোটের পোস্টার থেকে আড়াই হাজার টন বর্জ্য পাওয়া যাবে বলে সম্প্রতি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
//মুক্তিফোরাম প্রেসডেস্ক-৪-২-২০২০//
প্রেস রিলিজ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে উল্লেখ্যঃ আমরা চাই যাতে কোন একক ব্যক্তির নামের সাথে নেতা শব্দটি যাতে যুক্ত করা না হয়। আমরা সংগঠক শব্দটি ব্যবহার করতে চাই, উল্লেখিত প্রত্যেকের ক্ষেত্রে মুক্তিফোরামের বানানে কোন স্পেস নাই। মুক্তি এবং ফোরাম থাকবে যুক্ত, ভিন্ন নয়। ধন্যবাদ।