প্রসঙ্গঃ
১. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা
২. তেজগাঁও এলাকায় করোনা হাসপাতাল তৈরির কাজে বাধা
৩. ঈদের আমেজ নিয়ে জনগণের বাড়ি যাওয়া
৪. বিদ্যানন্দ
১.
মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা প্রতিদিন নতুন শাড়ি পড়ে করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশবাসীকে জানান দেন। এখানে প্রসঙ্গ “নতুন শাড়ি”।
বাঙালি আসলেই ছোট মানসিকতার, এই মহিলা তার যোগ্যতায় এইখানে বসেছেন, নিজের টাকায় নতুন নতুন শাড়ি পড়ছেন। এটা নিয়ে এতো কথা বলার কি আছে?? এই জনগণকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।
প্রকৃত চিত্রঃ
মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা যখন দেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশবাসীকে জানান দেয়া শুরু করেছিলেন তখন কিন্তু জনগণ উনার সাবলীল উপস্থাপনকে প্রশংসাই করেছিলো এমনকি আক্রান্তদের পরিচয়/ ঠিকানা বিষয়ে সংবাদ কর্মীদের প্রশ্নের উত্তর না দেয়া কিংবা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়াটাকেও সাধুবাদ জানিয়েছিল জনগণ।
কিন্তু দিন যেতে যেতে উনার তিন এর নামতা জনগণ বুঝে ফেলেছে, উনার মতে গত দুইদিনে দেশে কোনো করোনা রোগী মারা যায়নি এমনকি কেউ নতুন করে নাকি আক্রান্তও হননি! অথচ আজও জাতীয় দৈনিক গুলো খবর করেছে বরিশালে হাসপাতালে করোনা ভাইরাস ওয়ার্ডে ২ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা ইউনিটে এখন পাঁচজন রোগী ভর্তি আছেন। তারা কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে নিশ্চিত বলা যাবে না। কারণ করোনা শনাক্তের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই হাসপাতালে। এদিকে সাড়ে ৭ ঘণ্টার ব্যবধানে করোনা ইউনিটে দুই রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকরাও উদ্বিগ্ন
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। কিন্তু এদেরকে মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা গোনায় ধরছেন না কারন এদের কারোই করোনা টেস্ট করানো হয়নি তাই এরা করোনাভাইরাস এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও তারা হিসেবে আসবেন না।
তারমানে
লিমিটেড কিট, নো টেস্ট
নো টেস্ট, নো করোনা।
এই হচ্ছে রাষ্ট্রের মুখপাত্র তথা মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা তথা রাষ্ট্রের অবস্থান।
স্বাভাবিকভাবেই জনগণ এই তথ্য গোপন কিংবা অনবরত মিথ্যাচার মেনে নিতে পারছে না আর তাই কিছু সংখ্যক মানুষ মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরার শাড়ি নিয়ে কথা বলছে কারন ওইযে কথায় আছে না “যাকে দেখতে পারি না তার চলন বাকা”। যদিও এটা ঠিক নয়, তবে এই শাড়ি নিয়ে পরে থাকা মানুষদের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন।
তবে এই নতুন শাড়ি প্রসঙ্গটাকে বড় করে উপস্থাপন করা লোক তার চাইতেও বেশি। কারণ এই উছিলায় জনগণকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে।
দেখুন মিথ্যাচার কিংবা তথ্য গোপন নিয়ে এদের মাথা ব্যাথা নেই একটুও।
তাহলে এরা কারা সেটা নিশ্চয়ই আমরা সবাই জানি।
২.
রাজধানী ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল তৈরির কাজে বাধা।
কারা বাধা দিলেনঃ স্থানীয় জনগণ।
দোষ কাদেরঃ অবশ্যই জনগণের।
ছিঃ ভাবা যায় এইগুলা, যে দেশের জনগণ এমন সেই দেশের সরকার একা কিইবা করতে পারে??
প্রকৃত চিত্রঃ
স্থানীয় সাধারণ জনগণ যদি বাধা দিতেন, তাদেরকে পিটিয়ে সরিয়ে দেয়া আমাদের পেটোয়া বাহিনীর জন্য ডালভাত। তাহলে কেনো সেটা সম্ভব হলো না? সম্ভব হলো না কারণ বাধাদানকারীরা অসাধারণ ক্ষমতাবান মানুষ, তাই তাদেরকে আটকানো হয় নি।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক গোলাম মোর্তজা আর ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কথোপকথন শুনুন –
“ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম গতকাল রাত ১০ টার দিকে। এই লেখাটি প্রকাশের পর,কোথাও কোথাও সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে যে,হাসপাতাল তৈরির কাজ আবার শুরু হয়েছে।
আজ দুপুর ১.৪২ মিনিটে আবারও কথা বললাম ডা.জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে।তিনি বললেন,‘কারো পেছনে ঘুরে সময় নষ্ট করার মত সময় আমার নেই।সরকারকে সহায়তা করার জন্যে,দেশের মানুষের জন্যে হাসপাতাল বানাতে গিয়েছি। সরকারি দলের লোকজন এসে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সরকার যদি আমাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলে আর কোনো সমস্যা হবে না, তাহলেই শুধু আমি হাসপাতাল তৈরির সঙ্গে থাকবো।তাছাড়া নয়।আজ কাজ শুরু হবে,কাল আবার বন্ধ হবে…এভাবে সময় নষ্ট করতে রাজি না আমি।সরকারকে সুনির্দিষ্ট করে বলতে হবে যে,আর কোনো সমস্যা হবে না।‘
এইবার আসেন, এখানে যে সাধারণ জনগণ ছিলো না সেটা কি আমরা বুঝি না। আমরা সবাই বুঝি। কিন্তু তারপরও একদল যারা মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরার শাড়ি নিয়ে কথা বলাটাকে ফলাও করে প্রচার করছে তারা জেনে-বুঝেই এবারও কাঠগড়ায় দাড় করাচ্ছে জনগণকে।
৩.
সরকারি বিদ্যমান ছুটি আর সাপ্তাহিক ছুটির সাথে মিলিয়ে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করাতে মানুষ যার যার গ্রামের পানে ছুটেছে সদলবলে ঈদের আমেজে।
অসচেতন কারাঃ জনগণ
দোষ কাদেরঃ জনগণের
জনগণের অবস্থা যদি হয় এইরকম তাহলে সরকার দুর্যোগ মোকাবেলা করবে কিভাবে??
প্রকৃত চিত্রঃ
সরকার যেদিন ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করলেন সেদিন তারা বললেন আমাদের অতো দুশ্চিন্তার কারণ নেই। আর একপ্রান্ত আগলে রেখে মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা ম্যাডাম তো তিনের নামতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ করা হলো তারও দুইদিন পরে।
ঘরের দরজা খোলা রেখে চোর ধরার ফাদ পেতেছেন, চোরতো ধরা পরবেই।
বিষয়টি যদি এমন করা হতো, ছুটি ঘোষণার দিনই সাথে সাথে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরে কঠোর নির্দেশনা দিয়ে দেয়া যেন কেউ যেন তার বর্তমান অবস্থান পরিবর্তন না করেন, আর একই দিন থেকে দূরপাল্লার সমস্ত যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেয়া।
তাহলে কি বাসস্ট্যান্ডে, রেলস্টেশনে, লঞ্চ আর ফেরীঘাটে যাত্রীদের এই উপচে পড়া ভীড় দেখা যেতো?? যেতো না। কারন পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা অধিকাংশই পরিবার পরিজনদের সংক্রমণের কথা চিন্তা করে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতেন না, যারাওবা এসব আমলে না নিয়ে বাড়ি যেতে চাইতেন তারা-ও যেতে পারতেন না গণপরিবহনের অভাবে।
তো বরাবরের মতো এইখানেও সেই জনগণেরই দোষ ওই নির্দিষ্ট শ্রেণীর কাছে।
“রেখেছো বাঙালী করে মানুষ করোনি” টাইপের বহু কথা শোনা যায় তাদের কাছ থেকে জনগণকে গালি দেয়ার বেলায়।
৪.
সোস্যাল মিডিয়ায় বিদ্যানন্দের জনাব কিশোরকে নিয়ে লিখা কোনো এক আর্টিকেলের নিচে কোনো একজন এসে মন্তব্য করেছেন “লাভ কী, যাবে তো জাহান্নামেই”
এই ঘটনা উল্লেখ করে জনৈক সচেতন নাগরিক লিখেছেন “এরজন্যই বলি এই জাতির আসলেই মহামারীতে মরা উচিত”
এখানে কি ঘটলো, একজনের মন্তব্যের জন্য পুরো জাতিকে গালি দেয়া হলো।
প্রকৃত চিত্রঃ
বিদ্যানন্দ নামের সংগঠনটি এই সংকটময় মুহূর্তে যে কাজ করে যাচ্ছে তা এই জাতি সারাজীবন মনে রাখবে কৃতজ্ঞচিত্তে। ছাত্র ইউনিয়ন থেকে শুরু করে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন সহ বিভিন্ন সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে এই সংকট মোকাবিলায়। খুব কম সংখ্যক মানুষ পাওয়া যেতে পারে যে এদের কাজের প্রশংসা করছেন না কিংবা এদের বিরোধিতা করছেন। নাই বললেই চলে যদিও থাকে সেটা খুবই নগন্য।
এই নগন্য সংখ্যক অকৃতজ্ঞ মানুষের কথা আমলে নেয়ার সময় এখন নয়। শুধু এখন না এমনকি কখনোই নয়। কারন এই দুই একজনের কথাকে আপনি যখন কোড করে প্রচার করবেন তখন সেটা আলোচনায় স্থান পেয়ে সেটার পক্ষে বিপক্ষে মত দাঁড়াবে এবং সমাজে বিভেদ সৃষ্টি হবে।
তো সেই অতিনগন্য দুই একজনের মন্তব্যে কোড করে পুরো জাতিকে গালি দেয়া শ্রেণীর কথাই উপরে বলে আসছিলাম।
এরা উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে নিজেকে জাহির করার জন্য, কারণে অকারণে সব দোষ জনগণের ঘারের উপরে চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের প্রভুদের পা চাটার কাজে নিয়োজিত।
এদের থেকে সাবধান।
এরাই আতশবাজি দেখতে যাওয়া জনগণকে ইচ্ছে মতো গালি দেয় হাসি তামাশা করে, কিন্তু আতশবাজির আয়োজকদের সম্পর্কে টু শব্দটিও করে না।
এরাই ট্রল করে যে বাঙালী সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে কিনা সেটা দেখার জন্য হলেও বাইরে বের হবে। আসলেই কি এমনটা হয়েছে? যদিও হয় সেটা কত পারসেন্ট??
এরাই পুলিশ সহ প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের (যাকে তাকে পেটানো/ কানে ধরে ওঠবস করানো ইত্যাদি) জোর সমর্থক এই যুক্তিতে যে এতে করে একটা প্যানিক সৃষ্টি হবে এবং জনগণ পুলিশের ভয়ে বাইরে বের হবে না। অথচ এই সেম একটা প্যানিক সৃষ্টির আশংকায় তারা আবার মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরার তথ্য গোপন কিংবা মিথ্যাচারকে বৈধতা দেয়। একদিকে বলে প্যানিক সৃষ্টি হোক আবার অন্যদিকে বলে প্যানিক সৃষ্টি করা যাবে না, এতে বিরুপ প্রভাব পরবে।পরস্পরবিরোধী অবস্থান।
ভিন্নতাও আছে, আমি সরল সমীকরণ করছি না, জনগণের একটা বড় অংশ অজ্ঞতাবশত পুলিশ সহ প্রশাসনের কর্মকাণ্ডের সমর্থন করেছে শুধুমাত্র এই মহামারী ছড়িয়ে পরার ভয়ে আতংকে। ভেবেছে যে অন্যায় ভাবে হলেও সবাইকে বের হতে না দেয়াই সমাধান।
যাইহোক পরিশেষে বলছি যে দায় জনগণের তথা আমাদেরও আছে, আমাদেরকে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে। কোনো কিছু সমর্থন কিংবা বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে এর আফটার ইফেক্ট সম্পর্কে ভাবতে হবে। সরল সমীকরণ করা যাবে না।
শুনতে খারাপ শোনা গেলেও বলছি যে এই সরল সমীকরণের ফল হচ্ছে যশোরের মণিরামপুরের এসি ল্যান্ডের অমানবিকতা। চারিদিকে পুলিশের পেটানো আর কানে ধরানোর ছবি আর ভিডিওতে এতো বেশি বাহ্বা দেয়া হয়েছিল সেটা দেখেই হয়তো সেই এসি ল্যান্ড নিজের মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে বাহ্বা কুড়ানোর জন্য অমন কান্ড করে বসেন। খেয়াল করবেন উনি কিন্তু সেই দৃশ্য নিজের মোবাইলে ধারণও করেছিলেন।
ঐ শ্রেনী থেকে সাবধান।
মনে রাখবেন,
ওরাই জনগণকে নিজেদের মুখোমুখি দাড় করায়।
ওদের স্রোতে গা ভাসিয়ে নিজেকে নিজে ছোট করবেন না।