প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই মহামারি কঠিন অর্থনৈতিক মন্দা এনে দিতে পারে, যার সমকক্ষ সম্ভবত বিগত অতীতে দেখা যায়নি।
এই অবস্থায় বাংলাদেশের অবস্থান কেমন হবে বা বিষয়টি নিয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকগণ কতটা ভাবছেন?
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই বিদেশ নির্ভর। কারন এদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হল প্রবাসীর রেমিট্যান্স ও তৈরীপোশাক রপ্তানীশিল্প। এছাড়াও বেশকিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারাও মূলত রপ্তানী নির্ভর।
বাংলাদেশী প্রবাসী শ্রমিকদের সবচেয়ে বড় অংশের বসবাস মধ্যপ্রাচ্যে, মধ্যপ্রাচ্যের পরে রয়েছে ইউরোপ এবং পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়শিয়া ও সিঙ্গাপুর, এছাড়াও অনেকে আছেন যুক্তরাষ্ট্রে।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে করোনা মহামারি ইউরোপ আমেরিকার মত ভয়াবহ না হলেও মহামারি ছড়িয়েপড়া ঠেকাতে সেখানে চলছে লকডাউন। শ্রমিকদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও সেখানকার সরকারের মাধ্যমে হলেও প্রতিষ্ঠান চালু না থাকায় বেতন ভাতার মত বিষয় গুলো এখনো অনিশ্চিত।
ইউরোপ জুড়ে বসবাস করা বাংলাদেশীদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয় কারন করোনা মহামারিতে মৃত্যুর মিছিলে সবচেয়ে এগিয়ে ইউরোপ।
পূর্বএশিয়ার দেশ মালয়শিয়া ও সিঙ্গাপুরেও চলছে করোনা সংক্রামণ ঠেকাতে প্রায় মাসব্যাপি লকডাউন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে করোনা সংক্রামন সেখানে বসবাস করা ২০ জনের বেশি বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে।
এই পরিস্থতিতে প্রবাস থেকে রেমিট্যান্স পাঠানোতে ধ্বস নামছে স্বাভাবিক ভাবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের তৈরীপোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ইউরোপিয়ান দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র, করোনা সংকটে একের পর এক ক্রয় আদেশ প্রত্যাহার করছে আমদানিকারক দেশগুলো। এমতাবস্থায় শ্রমিকদের বেতন ভাতা থেকে শুরু করে সবকিছু মিলে বড় ধাক্কা খেয়েছে পোশাক শিল্পে বিনিয়োগকারীরা। ইতমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ৫০০০ কোটি টাকার প্রনোদনা ঘোষণা দিয়েছেন।
তৈরীপোশাক ছাড়াও আরো বেশ কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে দেশে যেমন হিমায়িত খাদ্য, হস্তশিল্পের পণ্য, জুতো, খেলনা, চামড়াজাত পণ্য, চা, পাটজাত দ্রব্য সহ নানান সামগ্রী। স্বাভাবিক ভাবে এসব পণ্য রপ্তানীতেও পড়ছে প্রভাব।
একইভাবে বিভিন্ন পন্য তৈরীর কাঁচামাল আমদানিতেও পড়ছে প্রভাব।
এই অবস্থায় বৈশ্বিক ভাবে করোনা সংকট স্বাভাবিক হয়ে আসাও সময় সাপেক্ষ ব্যপার। সবকিছু বিবেচনায় বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তির দেশগুলো যেখানে করোনা সংকট পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে চিন্তিত সেখানে বিদেশ নির্ভর অর্থনীতি নিয়ে আমাদের চিন্তা ভাবনা কতটুকু?
প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক উন্নয়নের বুলি ছোঁড়া হলেও ছুটি ঘোষণার এক সপ্তাহ পেরুনোর আগেই হতদরিদ্র শ্রেণীর মাঝে চলছে হাহাকার। এমনকি ত্রানের ট্রাক হতে ত্রান লুটের ঘটনাও ঘটেছে।
দেশে করোনা সংকট অন্যান্য দেশের ন্যায় দীর্ঘ মেয়াদি রুপ নিবে কিনা সেই চিন্তায় ইতিমধ্যে নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কপালেও চিন্তার ভাঁজ ফেলছে। সবকিছু মিলিয়ে কিভাছেন আমাদের রাষ্ট্রের হর্তাকর্তারা? ঠেকানো যাবে এই বিপর্যয়? নাকি জনগণকে দিতে হবে চরম মূল্য।
করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আমরা কি প্রস্তুত?
আবু রাইহান, সম্পাদক মুক্তিফোরাম।