বাংলা একাডেমি প্রেস রিলিজ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে– আদর্শকে বইমেলায় স্টল বরাদ্দ দিচ্ছে না তারা।
ফাহাম আব্দুস সালামের বই ‘বাঙালির মিডিয়োক্রেটির সন্ধানে’-তে বাংলা একাডেমির চোখে অশ্লীল, রুচিগর্হিত ও কটাক্ষমূলক উপাদান থাকায় তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ব্যাপারে আদর্শের প্রকাশক মাহবুব রহমান বইটি মেলায় প্রদর্শনের ক্ষেত্রে অনড় এবং দৃঢ় অবস্থানে থাকায় বাংলা একাডেমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রেস রিলিজে জানানো হয়েছে।
বাংলা একাডেমির এই প্রেস রিলিজটি লেখকের স্বাধীনতা হরণ এবং মুক্তাচিন্তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের অবস্থানের সবচেয়ে সিগনিফিকেন্ট অফিসিয়াল ডকুমেন্ট হয়ে থাকলো।
লেখকের স্বাধীনতা হরণ করতে এখানে অভিজিত রায়, অনন্ত বিজয় দাস সহ মুক্তচিন্তক লেখকদের খুন, প্রকাশক খুন, কুখ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন সহ আরো বহুকিছু করা হয়েছে। জেলখানার মধ্যে কাঠামোগত খুনের শিকার হয়েছেন লেখক মোস্তাক আহমেদ। গায়ের জোর, পুলিশের লাঠি, হামলা-মামলা-হয়রানির কোনো অন্ত ছিল না। কিন্তুকে সবকিছুকে ছাপিয়ে লেখালেখি ও চিন্তার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অফিসিয়াল স্মারক হয়ে থাকবে বাংলা একাডেমির আজকের এই প্রেস রিলিজ।
মধ্যযুগের উইচ হান্টিংয়ের বিবরণ শুনে এখন যেমন আমাদের গা শিউরে ওঠে; তেমনি খুব নিকট ভবিষ্যতে আমাদের উত্তর প্রজন্ম এই প্রেস রিলিজের ভাষা এবং স্পিরিট দেখে হতবাক হবে– কোন অন্ধকার যুগের মধ্যে আটকে ছিলাম আমরা এই ভেবে।তবে আদর্শ প্রকাশনীর সিইও মাহবুব রহমান বিপুল ক্ষতির সম্ভাবনাকে মেনে নিয়ে লেখকের স্বাধীনতার পক্ষে যে অসম্ভব সাহসী পদক্ষেপ রাখলেন– তা খুবই বিশেষ। সম্ভবত এই পয়েন্ট থেকে লেখালেখি এবং চিন্তার স্বাধীনতার পক্ষে একটা নতুন অগ্রযাত্রা শুরু হলো। খুব শিগগিরই এই অগ্রযাত্রায় সামিল হবে অসংখ্য মানুষ।
তবে আমি এখনো বাংলা একাডেমি সহ সংশ্লিষ্ট সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হোক সেই প্রত্যাশা রেখেই যাচ্ছি। আর লেখক, প্রকাশক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী সহ সকলের প্রতি আহবান– আপনারা আদর্শের পক্ষে দাঁড়ান। যার যেখানে যতটুকু করার আছে তা নিয়ে সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করুন। রক্ত দিয়ে স্বাধীন করা দেশ এইটা, স্বাধীনতার জন্য প্রয়োজনে আরো রক্ত ঝরানোর প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলা ভাষা, আমাদের চিন্তা ও সংস্কৃতির ঠিকাদারি একদল গাড়লের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না আমরা।
লেখকঃ বাকি বিল্লাহ