তাদের আমরা সতর্ক করবো, তাদের সংবাদ আমরা প্রচার করবো এবং তাদের সাহায্য আমরা করতে চেষ্টা করবো যতটুকু পারি। ওদেরকে নামতে বলার কেউ আমরা ছিলাম না কখনো, ওদেরকে ফিরতে বলারও কেউ নই। এখন শুধু ওদের সাথে থাকার চেষ্টা করি, যে যতটা পারি।
বাংলাদেশের আজ খুব দুর্দিন। রাস্তায় ছেলেপেলেরা মার খাচ্ছে। নানান জায়গা থেকে আমাদের কাছে খবর আসছে। খুব অনিশ্চয়তা আর শংকার মাঝে আছে তারা। আমরা দেশের কিশোর-শিশুদের অনুরোধ করবো যাতে আর কেউ রাস্তায় না নামে। আমাদের রাজনৈতিক স্বপ্নের চেয়ে কিশোরদের নিরাপত্তা বেশি জরুরি।
তবে কিশোর বিদ্রোহীরা নিজেদের বিবেকের তাড়নায় রাস্তায় নেমেছে। আমাদের বা আর কারো কথায় তারা দমবে না। যারা রাস্তায় আছেন তাদের জন্য সতর্কবাণী। একেক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবেন না। একা পেলেই বেশি আক্রমণের শিকার হবে আমাদের শিশুরা তাই আমরা যারা রাস্তায় আছে তাদের সতর্ক করছি রাজনৈতিক গিরগিটিদের কাছে থেকে। তাদের বিদ্রোহ যাতে কেউ চুরি করতে না পারে। কেবল নিজেদের বিবেকের কথাই যাতে তারা শোনে।
তবে আমাদের মনে হচ্ছে আলাদা আলাদা থাকলেই বেশি মার খাবে আমাদের শিশুরা। এর মাঝেই অনেক ছোটভাই বোনদের কাছ থেকে ভয়ংকর কথা শুনছি। কাজেই তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে যাতে তারা সংসদ অভিমুখে বা অন্য কোন কেন্দ্রীয় স্থান অভিমুখে যাত্রা করে। আলাদা আলাদা হয়ে থাকলে বেশি আক্রমনের শিকার হবে বাচ্চাগুলা। যে যেভাবে পারেন ওদেরকে প্লিজ একত্র হতে বলেন আর সাবধানে থাকতে বলেন। বাচ্চাগুলার জন্যে আমাদের করতে হবে যতটুকু পারা যায়।
আপনারা রাস্তায় থাকা শিশুদেরকে প্লিজ সতর্ক করুন। পারলে এই সতর্কবাণীটা তাদের কাছে পৌছে দিন।
আমি খুব দরিদ্র একজন শিক্ষার্থী, হঠাৎ আমার তিনটি চাকরি ছেড়ে আমি প্লেনে উঠে বসতে পারছিনা, সেই মুরোদ আমার নাই। তবে আমার আপন ছোটভাই বোনেরা আজ রাস্তায়। তাদের কোন খবরও জানতে পারছিনা।
যোগাযোগ করতে পারছিনা। অনেক অস্বস্তিতে আছি। আমার খুব প্রিয় একজন নেতা একবার বলেছিলেন যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে। সেখান থেকেই আমি সকলকে সতর্ক করতে চেষ্টা করছি।
শুধু আশা করি এই দুর্দিন কাটবে, নতুন সূর্য উঠবে আর এই আন্দোলনকারী শিশু কিশোরেরা ঘরে ফিরে যাবে, স্কুলে ক্লাস করবে, বাসে চড়বে–হঠাৎ বেঘোরে মারা পড়বেনা মাফিয়াদের হাতে। তখন আমরা ওদের সবার কাছে ক্ষমা চাইবো যথেষ্ট করতে না পারার জন্যে। সবার কাছে ক্ষমা চাইবো আমাদের দায়িত্ব এড়ানোর জন্যে। সবার কাছে ক্ষমা চাইবো ওদেরকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করবার জন্য।
তবে এখন সেই সময় নয়। এখন আমাদের ছেলেমেয়েরা রাস্তায় আছে, দারুণ শংকায়, দারুণ ভয়ে, দারুন অনিশ্চয়তায়। তাদের আমরা সতর্ক করবো, তাদের সংবাদ আমরা প্রচার করবো এবং তাদের সাহায্য আমরা করতে চেষ্টা করবো যতটুকু পারি। ওদেরকে নামতে বলার কেউ আমরা ছিলাম না কখনো, ওদেরকে ফিরতে বলারও কেউ নই। এখন শুধু ওদের সাথে থাকার চেষ্টা করি, যে যতটা পারি।
অনুপম দেবাশীষ রায় বিকল্প গণমাধ্যম মুক্তিফোরামের সম্পাদক।