পতিতাবৃত্তি, বেশ্যাবৃত্তি, গণিকাবৃত্তি, বা যৌনবৃত্তি যাই বলা হোক না কেন, এই পেশাটি যতটা প্রাচীন, একে নিয়ে সমালোচনারও তেমন রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস এবং পটভূমি। পতিতাবৃত্তির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জর্জ স্কট তার ‘পতিতাবৃত্তির ইতিহাস’ নামের বইয়ে লিখেছেন, ‘যে নারীরা জীবিকা অর্জনের জন্য নিজেদের দেহ দিয়ে পুরুষদের যৌনসুখ ভোগ করতে দেয়, সেই সম্প্রদায়ভুক্ত নারীরাই হলো পতিতা’। আবার বলা হয়ে থাকে, প্রাচীন মহাভারতের যুগে সম্মানজনক পেশাগুলোর মাঝে পতিতাবৃত্তি ছিল অন্যতম, এবং রাজদরবারে, এবং অন্যান্য সকল রাজকীয় অনুষ্ঠানগুলোতে পতিতাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষ্য করা যেত। এছাড়াও আরো ছিল দেবদাসীরা, যারা নিজেদের মন্দিরে সীমাবদ্ধ রাখতো, এবং নিজেকে দেবতা এবং পুরোহিতদের সেবার জন্য উৎসর্গ করতো।
প্রবীর কুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘কালিকা পুরোনোক্ত দুর্গাপূজা পদ্ধতি,’ বই অনুসারে, বেশ্যারা সমাজকে কলুষমুক্ত করে নির্মল রাখে, এ কারণে হিন্দুধর্ম মতে বেশ্যাবৃত্তি অত্যন্ত পবিত্র একটি পেশা, আর একারণেই দুর্গাপূজায় দুর্গামূর্তি তৈরির সময় দশ ধরণের মাটির মাঝে বেশ্যার দরজার মাটিও অপরিহার্য।
এরপর ধারণা করা হয় সময়ের পরিক্রমায় ব্রিটিশ শাসন, এবং এর বাজারভিত্তিক অর্থনীতির প্রভাবে এই পেশাটিও একটি ব্যবসায়ী রুপ লাভ করে, এবং এই উপমহাদেশে এর একটি দৃঢ় ভিত্তি গড়ে ওঠে। অন্যান্য ব্যবসার মতো পতিতাবৃত্তি বা বেশ্যাবৃত্তি একটি অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হলেও, একে কখনোই অন্য ব্যবসার মতো একই চোখে দেখা হয়নি। ভারতীয় উপমহাদেশে, যেখানে নারীর যৌনতা বা সম্ভ্রমকে তার অলংকার বা জীবনের চেয়েও মূল্যবান বস্তু হিসেবে গন্য করা হয়ে থাকে, সেখানে সেই নারীর যৌনতাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি অর্থনীতি তাই শুরু থেকেই একটি দোদুল্যমান অবস্থায় পর্যবসিত ছিল।
একদিকে এই পেশার এবং বেশ্যাদের তুমুল চাহিদা, অপর দিকে আবার সভ্যসমাজে এদের নাম মুখে নেওয়াও মানা। তাই বেশ্যাবৃত্তির এই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানটি লোকচক্ষুর সামনেই সাদা মিথ্যার মত জেনেও না জানার ভান ধরে ধীরে ধীরে বীজ থেকে মহীরুহ আকার ধরে গড়ে ওঠে। তৈরি হয় বেশ্যাপাড়া, পতিতাপল্লী, এবং যৌনপল্লী, যেখানে কোন আলাদা পন্য নয়, স্বয়ং একটি মানুষই বার বার পন্য হিসেবে বিক্রি হয়।
পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ না বৈধ, এই আলাপ ঠিক এর ইতিহাসের মতই প্রাচীন। যেহেতু পুরুষতান্ত্রিক সমাজেই এর গোড়াপত্তন, তাই পুরুষরা তাদের সুবিধামতই এই পেশাকে ঢেলে সাজিয়েছিল। সভ্য সমাজে পতিতাবৃত্তি একটি নিষিদ্ধ পেশা এবং একই সাথে নিষিদ্ধ বেশ্যারা, কিন্তু অপরদিকে যাদের জন্য এই জোগান এবং যারা খদ্দের তাদের কখনোই অপরাধী বা নিষিদ্ধ বলে গন্য করা হয়নি।
পুরুষতন্ত্রের এই ধারাটিকে বর্তমান সমাজে এখনো প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যায়, এবং বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলেও একই প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।
ইউএনএআইডি’র ২০১৬ সালের রিপোর্ট অনুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশে নারী পতিতার সংখ্যা প্রায় ১,৪০,০০০ হাজার, এবং পতিতালয় রয়েছে ২০টি। এর মাঝে সবচেয়ে বড় পতিতালয় হচ্ছে দৌলতদিয়া পতিতালয়, যেখানে প্রায় ১৩০০ পতিতা কাজ করছে, এবং প্রতিদিন এখানে প্রায় কয়েকশ খদ্দের এসে থাকে। এত বিশাল সংরক্ষক একটি জনগোষ্ঠী, এবং তাদের নিয়ে বাংলাদেশের আইন কি বলে তা জানতে গেলে, সর্বপ্রথমেই বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮(২) অনুচ্ছেদ থেকে দেখা যায়, সেখানে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র জুয়া এবং যৌন ব্যবসার বিরুদ্ধে কার্যকরী সুরক্ষা প্রদান করিবে’। অর্থাৎ এ থেকে শুরুতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে পতিতাবৃত্তির বিরুদ্ধেই অবস্থান করে।
পরবর্তীতে ২০১২ সালে আমাদের দেশে ‘মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন’ আইন গৃহীত হয়। এই আইনের ১২(১) ধারায় বলা হয়, ‘কোন ব্যক্তি পতিতালয় স্থাপন বা পরিচালনা করলে, বা তা স্থাপন বা পরিচালনা করতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে, সেই ব্যক্তি অপরাধ করেছে বলে গন্য করা হবে, এবং তার পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল, এবং অনূন্য বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে’।
এছাড়াও এই আইনের ১৩ ধারায় আরো বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি যদি পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে, রাস্তায় বা জনসাধারণের ব্যবহার্য স্থানে, অথবা গৃহের অভ্যন্তরে বা গৃহের বাইরে মুখের ভাষায় বা অশালীন অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে অন্য ব্যক্তিকে আহ্বান জানায়, তাহলে সেই ব্যক্তিকে অপরাধী বলে গন্য করা হবে, এবং এর জন্য তাকে অনধিক তিন বছরের কারাদন্ডে, অথবা সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
এছাড়াও, আমাদের পেনাল কোড এর ২৯০ ধারা গণউপদ্রব এবং এর শাস্তি নিয়ে কথা বলে থাকে। এখানে বলা আছে কোনো ব্যক্তি গণউপদ্রপ স্বরূপ কোন কাজ করলে তাকে অনধিক দুইশত টাকা জরিমানায় দন্ডিত করা যাবে। অনেক সময় দেখা যায় বেশ্যাবৃত্তিকে অনৈতিক কার্যকলাপ এবং গণউপদ্রপ হিসেবে বিবেচনা করে, তাদেরকে এই ধারার অধীনে জরিমানা করা হয়ে থাকে।
পতিতাবৃত্তির কথা যখন আসে, স্বাভাবিকভাবেই এর সাথে মানবপাচার, মাদকাসক্তি, শিশু পতিতাবৃত্তি, এবং জবরদস্তিমূলক শ্রম, এই বিষয়গুলো চলে আসে। ইউনিসেফের ২০০৪ সালের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সে সময় প্রায় ১০,০০০ অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশুরা যৌনপেশায় নিয়োজিত ছিল, এবং তাদের ধারণা অনুসারে এর সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ২৯,০০০ ছাড়ানোর কথা। এবং এশিয়ান মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট অনুসারে, প্রায় ২০,০০০ এর বেশি শিশু পতিতালয়ে জন্ম নিয়েছে, এবং সেখানেই তারা অবস্থান করে। এবং এদের মাঝে বেশীরভাগ শিশু তাদের বয়স ১২ হবার পূর্বেই এই পেশার সাথে যুক্ত হয়ে যায়। এবং ‘গার্লস নট ব্রাইডের’ পক্ষ থেকে বাংলদেশে ৪টি পতিতালয়ের ৩৭৫ জন যৌনকর্মীর উপর করা একটি সার্ভে থেকে জানা যায়, এদের মাঝে ৪৭ শতাংশই এখানে আসার আগে বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছিল।
রাষ্ট্রের উচিত সর্বপ্রথম এই সকল সমস্যার দিকে নজর দিয়ে, এ সকল মানুষদের একটি সুস্থ জীবনের ব্যবস্থা করা এবং নাগরিক হিসেবে তাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করা। এবং পুরুষতন্ত্রের বেড়াজালে আটকে থেকে যৌনকর্মীদের অপরাধী হিসেবে না দেখে মূলধারার সমাজে তাদের গমনাগমন নিশ্চিত করাও তাদের প্রতি হওয়া সহিংসতা রোধের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
পেনালকোডের ৩৭২ এবং ৩৭৩ ধারা অনুযায়ী, পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে শিশুকে বিক্রি করা, এবং কেনা একটি দন্ডনীয় অপরাধ, এবং এর জন্য দশ বছর পর্যন্ত জেল এবং একই সাথে জরিমানা হতে পারে। এছড়া সিডও বা ‘নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদেও’ এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নারীপাচার, এবং পতিতাবৃত্তিতে নারীর প্রতি হওয়া সহিংসতা রোধে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, বর্তমানে আমাদের দেশে যেসব নারীরা যৌন পেশায় যুক্ত আছে, বা যারা আসতে বাধ্য হয়েছে, তাদের বেশীরভাগই ভয়ংকর শোষণের শিকার হন এবং মানবেতর জীবন যাপন করেন। এবং সবচেয়ে বেশি দুঃসহ জীবন কাটে শিশুদের, বয়সে বড় দেখানোর জন্য একই সাথে শরীরকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য তারা বিভিন্ন ধরণের স্টেরয়েড ড্রাগস ব্যবহার করে থাকে। আবার দেখা যায় ৪৬ শতাংশ যৌনকর্মীরাই কোন না কোন এসটিডি বা যৌনবাহিত রোগে ভুগে থাকে। এবং গবেষণা হতে প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায় প্রায় ৬৮ শতাংশ যৌনকর্মীরাই বলেন তারা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
এছাড়াও, গেব্রিয়েল সালফাতি তার ২০১৯ সালের একটি গবেষণা প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, অন্যান্য ভিকটিমদের তুলনায় যৌনকর্মীদের ধর্ষণের পর খুন হবার সম্ভাবনা প্রায় ৬০ থেকে ১২০ গুণ বেশি।
কাজেই ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যৌনবৃত্তি, বা পতিতাবৃত্তি নারীদের জন্য একটি অন্যতম শোষণ এবং সহিংসতার মাধ্যম হয়ে আছে। এবং আইনও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর বিরুদ্ধে কথা বলে। তবে মজার ব্যাপার হলো এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তিকে সম্পূর্নরুপে অবৈধ ঘোষণা করা হয় নি, এবং পতিতাদের পুনর্বাসনের জন্যও রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে নি। এ কারণেই ২০০০ সালে টানবাজার নিমতলী যৌনপল্লী যখন উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যৌনকর্মীদের পর্যাপ্ত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না থাকার কারণে, এবং বিশাল সংখ্যক একটি জনগোষ্ঠী আশ্রয়হীন হয়ে যাবে এই কারণে, বাংলাদেশের নারী আইনজীবী সমিতি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন, এবং তার রায়ে বলা হয়, ‘নারী যৌনকর্মীর বয়স ১৮ বছরের উপরে হলে, এবং তিনি যদি প্রমাণ করতে পারেন যৌন ব্যবসাই তার একমাত্র আয়ের উৎস, তবে তিনি বৈধভাবে এই পেশায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।’
বর্তমানে বাংলাদেশের আইন অনুসারে পতিতারা স্থানীয় প্রশাসন বা সরকারি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামা জমা দিয়ে এই পেশার জন্য অনুমতি বা লাইসেন্স গ্রহণ করতে পারে, এবং এভাবেই একটি আধা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমানে বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
আইনি-বেআইনি’র এই বেড়াজাল বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তিকে আরো একটি দুর্বিষহ পেশা হিসেবে গড়ে তুলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় লাইসেন্স নেওয়ার জন্য ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে থাকে, এবং প্রশাসনের সাথে ২-৩ মিনিটের ইন্টারভিউতে তা অনেক সময় বোঝাও যায় না। এবং যাদের পক্ষে লাইসেন্স সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না, তারা পুলিশদের দ্বারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম হয়রানির এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য সেবা পেতেও তাদের নানা রকম ভোগান্তি পোহাতে হয়, সমাজে তাদের এক ধরণের অচ্ছুৎ এর মতো জীবন যাপন করতে হয়।
তবে অনেক সময় তাদের এই জীবনের একটি উল্টো পিঠও দেখা যায়, যদিও বেশীরভাগ যৌনকর্মী তাদের এই জীবনটাকে একটি দুর্বিষহ জীবন হিসেবে দেখেন, অনেকে আবার একে তাদের স্বাধীন জীবন এবং অর্থনৈতিক জীবনের চাবিকাঠি হিসেবে দেখেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যেখানে সকল ক্ষেত্রেই দেখা যায় নারীরা কমবেশি নিষ্পেষিত, সেখানে এই কর্মক্ষেত্রে এসে অনেকেই তাই খুব একটা তফাৎ খুঁজে পায় না।
যেহেতু বেশিরভাগ নারীই এখানে আসেন অর্থের সন্ধানে, এখানে তারা অল্প সময়ে অধিক টাকা উপার্জনের সুযোগ পান, যা পুরুষ অধ্যুষিত অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে তারা পান না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পতিতালয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করেন বিভিন্ন ‘ম্যাডাম’রা, যারা নিজেরাও একসময় হয়তো এই কাজে যুক্ত ছিলেন বা এখনো আছেন। অনেক সময় পতিতাদের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা বাইরে থেকে এই জায়গায় নিজেকে নিরাপদ বোধ করে, কারণ বাইরে গেলে কেউ তাকে সামাজিকভাবে গ্রহণ করবে না, এবং সেখানেও তাকে বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
সংখ্যায় ক্ষুদ্র হলেও যৌনকর্মীদের এই ভিন্ন মানসিকতা আসলে নারীবাদের বিভিন্ন ধারার বিভিন্ন মতবাদকেই ব্যক্ত করে। অবশ্য মূলপন্থী বা মৌলবাদী নারীবাদিরা সর্বপ্রথমেই পতিতাবৃত্তির বিরোধিতা করেন, এবং তারা সর্বরূপে যৌনপেশাকে নারীর প্রতি সহিংসতা, এবং নারীকে পন্যে রুপান্তর করার একটি হাতিয়ার রুপে দেখেন।
অপরদিকে, উদারপন্থী নারীবাদীরা মনে করেন, যদি কোন নারী স্বেচ্ছায় এই পেশাকে নিজের জন্য বেঁছে নেয়, তবে তাকে বাঁধা দেওয়া উচিত নয়, কারণ কাজ করতে গেলে সবাই কোনো না কোনোভাবে তাদের শরীরের কোনো অংশকে বিক্রি করে থাকে, সেখানে কেউ যদি তার যৌনতাকে বিক্রি করার জন্য বেঁছে নেয় তার দোষ কোথায়!
তারা আরো বলেন যৌনপেশাকে অপরাধ হিসেবে শনাক্ত করার মাধ্যমে শুধুমাত্র যৌনকর্মীদের জন্য বিপদেরই সৃষ্টি হয়, কারণ সমাজে এই পেশার চাহিদা আছে এবং থাকবেই, কাজেই যৌনকর্মীদের অপরাধী হিসেবে গন্য করা হলে তা তাদের অনিশ্চয়তা এবং অন্যান্য ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়।
বৈধ হোক অথবা অবৈধ হোক, বাস্তবতা হচ্ছে বর্তমানে বাংলাদেশে বিশাল সংখ্যক একটি জনগোষ্ঠী এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছে, এবং জড়িতদের ৮০ শতাংশ হচ্ছে নারী, এবং তার উপর এদের একটি বড় অংশ হচ্ছে শিশু। দিনকে দিন এদের মাঝে যৌনবাহিত রোগের সংখ্যা বাড়ছে, শিশুরা শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, বাড়ছে মাদকাসক্তির পরিমাণ, এবং নারী ও শিশু পাচার।
রাষ্ট্রের উচিত সর্বপ্রথম এই সকল সমস্যার দিকে নজর দিয়ে, এ সকল মানুষদের একটি সুস্থ জীবনের ব্যবস্থা করা এবং নাগরিক হিসেবে তাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করা। এবং পুরুষতন্ত্রের বেড়াজালে আটকে থেকে যৌনকর্মীদের অপরাধী হিসেবে না দেখে মূলধারার সমাজে তাদের গমনাগমন নিশ্চিত করাও তাদের প্রতি হওয়া সহিংসতা রোধের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ফারহানা হক ফ্লোরা, শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট
Leave A Reply