ঢাকা শহরের রাস্তা দিয়ে যখনই কোনো ভিআইপি যায় তখনই রাস্তা আটকে দেয়া হয়। কেন এমনটা হয় তার উত্তর হিসেবে আমার মনে হয় ভিআইপিদের সময়ের দাম সাধারণ মানুষের সময়ের দামের চেয়ে অনেক বেশি। ব্যাপারটা এমন যে ভিআইপি শব্দটার কোনো সংস্কার সম্ভব নয়। তবে, যারা ভিআইপি তাদেরকে সাধারণের কাতারে ফেলা গেলে আমি বলবো সংস্কার হচ্ছে।
গত কয়েকদিন আমি রিকশা নিয়ে শাহবাগ থেকে ইস্কাটন আসছিলাম। শাহবাগ থেকে কিছুদূর যাওয়ার পরেই দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ আমি যে রিকশায় ছিলাম সেটিকে জোর করে অন্য রাস্তায় পাঠিয়ে দিলেন। এমন বৈষম্য কেন? কারণ কোনো একজন ভিআইপি যাবেন তাই।
একজন ভিআইপি যাবেন তাই ৩০ মিনিট আগে থেকে রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সের হুইসেল বাজছিলো, এমনকি এসএসসি পরীক্ষার্থীরাও থাকতে পারতো। কিন্তু ভিআইপি যাবেন তাই সবার সব কাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরে এমন রাষ্ট্রীয় বৈষম্য মানতে আমি নারাজ।
জনসমর্থনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি জনকল্যাণে ব্যাঘাত ঘটায় তবে তারা যোগ্য শাসক হয়ে উঠতে পারে না। কোথাও এক জায়গায় পড়েছিলাম- যে শাসক নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতায় বসে সেই যোগ্য শাসক, আর যে ক্ষমতার লোভে পড়ে ইচ্ছাকৃতভাবে শাসনভার নেয় সে কখনো যোগ্য শাসক হতে পারে না।
কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে একবার দেখেছিলাম সাইকেলে করে অফিসে আসতে। এমন উদাহরণ বিরল। বিগত সরকারের আমলে যেমন করে ভিআইপিদের জন্য রাস্তা ব্লক করে রাখা হতো এখনও তেমনটা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা সংস্কার চাই, তাহলে এই সংস্কারটি কেন নয়?
দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে আমি দোষারোপ করবো না কারণ তারা হুকুম পালন করতে বাধ্য। কিন্তু সরকারী কর্মকর্তারা, যার মধ্যে উপদেষ্টা বা মন্ত্রীরাও অন্তর্ভুক্ত, তারা জনগণের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থনে নির্বাচিত। জনগণের স্বার্থে সরকার নিবেদিত, তাহলে নিশ্চয়ই আগে জনগণ তারপর বাকিরা? তাহলে রাষ্ট্রের একজন পরিচালক কেন সাধারণ হতে পারছেন না?
ট্রাফিক পুলিশের নিয়মে ভিআইপিদের চলাচলের জন্য রাস্তা আটকে দেয়ার কোনো বিধান আছে কিনা আমার জানা নেই। আর যদি থাকে তাহলে এমন নিয়ম আমি মানি না। একজন ভিআইপির যাতায়াতের জন্য কেন আমার একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী ভাই বা বোনের কেন সময় নষ্ট হবে? অ্যাম্বুলেন্সে মৃত্যুপথযাত্রী একজন রোগী কেন একটু আগে হাসপাতালে পৌঁছাতে পারবে না?
জনসমর্থনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যদি জনকল্যাণে ব্যাঘাত ঘটায় তবে তারা যোগ্য শাসক হয়ে উঠতে পারে না। কোথাও এক জায়গায় পড়েছিলাম- যে শাসক নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে ক্ষমতায় বসে সেই যোগ্য শাসক, আর যে ক্ষমতার লোভে পড়ে ইচ্ছাকৃতভাবে শাসনভার নেয় সে কখনো যোগ্য শাসক হতে পারে না।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস নিশ্চয়ই একজন ভালো শাসক। তাকে আমরা ক্ষমতা দিয়েছি, সংস্কারের ভার দিয়েছি। সংস্কার যেহেতু হচ্ছেই তাহলে ভিআইপি মুভমেন্টের ক্ষেত্রেও সংস্কার হোক এটাই আমার চাওয়া।
অদিতি হক বাংলা সাহিত্যের একজন ছাত্রী ও পাঠক