আমি কোন গণমাধ্যমের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নই। তবে সমাজের অসঙ্গতি নিয়ে না লিখলে কষ্ট লাগে তাই অসঙ্গতিগুলো নিয়ে মাঝে মাঝে কলাম লিখি এবং সেগুলো মিডিয়ায় ই-মেইলের মাধ্যমে পাঠাই।
সেগুলোর মধ্য থেকে যেটি মিডিয়াগুলোর পলিসির সাথে এডজাস্ট করে সেগুলো প্রকাশিত হয়। আবার কখনো মিডিয়ার সম্পাদকীয় বিভাগ থেকে জানানো হয় “আপনি নতুন আইডিয়া নিয়ে লিখেছেন। আপনার মতামতটি সঠিক। এই মতামতটি বিতর্ক তৈরি করবে। আমাদের পলিসির কারণে আমরা আপনার এই মতামতটি প্রকাশ করতে পারছিনা।“
তারা প্রকাশ না করলেও আমি সেই লেখাগুলোর সমন্বয়ে আবার বই আকারে প্রকাশ করার চেষ্টা করি।
মিডিয়া, সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যম যাই বলি না কেন এধরনের প্রতিষ্ঠানের কাজ হলো কোন বিশেষ খবর, বিশেষ আইডিয়া বিকৃত না করে নিজস্ব মতামত প্রকাশ ব্যতিত পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেওয়া যেন পাঠক প্রকৃত বিষয় জেনে স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারে।
মিডিয়ার কাজ নয় কোন খবর বা মতামতকে বিশেষ কোন ব্যক্তি, দল বা দেশের পক্ষে প্রকাশ করার চেষ্টা করে রিপোর্টার, লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট বা পাঠকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। অথচ তারা খবর বা মতামতগুলো প্রকৃত রূপে যেমন ছিল তা পরিবর্তন করে নিজস্ব স্টাইলে প্রকাশ করে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি হরণ করে।
মিডিয়াগুলোর বিশেষ কোন ব্যক্তি, দল বা দেশপন্থী হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কোন রিপোর্ট বা সংবাদ যদি কোন সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে হয় সেটি প্রকাশ করাও ঐ সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যমের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। তবে আমার এই মতামত কোন গণমাধ্যম প্রকাশ করবে কিনা সেটি নিয়ে আমি সন্দিহান। যদি কোন সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যমে এই লেখাটি প্রকাশিত হয় তাহলে তারা নিশ্চয়ই স্বাধীন গণমাধ্যম হিসাবে অগ্রগামী। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের কর্তব্য।
সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধ করার জন্য মিছিল, সমাবেশ করে সরকারের নিকট আবেদন জানানো হয়েছে জনগণের পক্ষ থেকে। মিছিল, সমাবেশ বা কোন চাপের কারণে রাষ্ট্রীয় নির্বাহী আদেশে কোন গণমাধ্যমের বন্ধ বা মৃত্যু হওয়া কাম্য নয়।
মিডিয়ার কাজ নয় কোন খবর বা মতামতকে বিশেষ কোন ব্যক্তি, দল বা দেশের পক্ষে প্রকাশ করার চেষ্টা করে রিপোর্টার, লেখক, সাংবাদিক, কলামিস্ট বা পাঠকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা। অথচ তারা খবর বা মতামতগুলো প্রকৃত রূপে যেমন ছিল তা পরিবর্তন করে নিজস্ব স্টাইলে প্রকাশ করে তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের স্বাধীনতা সবচেয়ে বেশি হরণ করে
তবে জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হলে গণমাধ্যম হোক বা যে কোন প্রতিষ্ঠান সেটির মৃত্যু স্বয়ংক্রিয়ভাবে অবধারিত।
শুধু ঐ গণমাধ্যমেগুলো নয় এদেশের অধিকাংশ গণমাধ্যম বন্ধ হোক বা না হোক অনেক আগেই অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা না করা এবং শুধু ইভেন্ট কাভার করার কারণে দেওলিয়া হয়ে গেছে। সঙ্গত কারণে তারা সঠিকভাবে শিরোনাম দিতেও ভয় পায় বা দিতে অক্ষম। যেটি পাঠকদের সাথে প্রতারণা এবং গণমাধ্যমের নীতি পরিপন্থী।
শিরোনাম বলতে আমরা বুঝি সম্পূর্ণ খবরের একটি সংক্ষিপ্ত নাম যেটির মাধ্যমে খবরের মধ্যে কি আছে সে সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। গণমাধ্যমগুলো প্রকৃত শিরোনাম ব্যবহার না করে ভিন্ন শিরোনাম ব্যবহার করার কারণে পাঠক অনেক সময় মনে করেন উক্ত সংবাদটি তার জানা প্রয়োজন। সংবাদটি সময় নষ্ট করে পড়ার বা দেখার পর পাঠক বুঝতে পারে এটি শিরোনামের কারনে তাকে আকর্ষণ করলেও সংবাদটি তার প্রয়োজন নেই বা সংবাদের ভিতর ভিন্ন খবর।
সকল খবর সকল পাঠকের জানা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু প্রকৃত শিরোনামের পরিবর্তে ভিন্ন শিরোনামের কারণে পাঠককে অপ্রয়োজনীয় খবরের জন্য সময় নষ্ট করতে হয়। এটি পাঠকের সাথে স্পষ্ট প্রতারনা। কয়েকজন অধিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সম্পাদক এবং কয়েকটি পুরনো গণমাধ্যমের শিরোনাম দেখলে আমাদের এরকম প্রতারণার বিষয়ে ধারণা পেতে সহায়ক হবে।
কিছু দিন আগে দেশের আলোচিত একটি গণমাধ্যমের বর্ষপূর্তি পালিত হলো। যদিও বিশ্বের অন্যান্য দেশে গণমাধ্যমের এভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে দেখা যায় না। অবশ্য এর কারণও আছে। আমাদের দেশের গণমাধ্যমের কর্মীরা সাংবাদিক হয়ে উঠতে পারেনি বরং গণমাধ্যমের প্রতিনিধি বা প্রতিবেদক হয়েছে। তাই তাদের মাঝে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করার সক্ষমতা বা মন-মানসিকতার অভাব রয়েছে।
সুতরাং গণমাধ্যমের কর্মীদের নিউজ করার জন্য হলেও এধরনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আমাদের দেশে অহরহ হয়। এটি আজকের আলোচ্য বিষয় নয়। উক্ত গণমাধ্যমের সম্পাদক তার গণমাধ্যমের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন তার সাংবাদিকতার পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতার কথা।
অভিজ্ঞতার পঞ্চাশ বছর বা অধিক অভিজ্ঞতার বিষয়ে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। এমন কথা শুনলে গায়ের মধ্যে শিহরণ দিয়ে উঠে এবং আমার সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে আশঙ্কা হয় এই পঞ্চাশ বছরের অভিজ্ঞতার সম্পাদকের হাতেই এই গণমাধ্যমটির মৃত্যু হয় কিনা?
ইতোমধ্যে এই গণমাধ্যমটিও বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন মিছিল, সমাবেশ বা জনগণের পক্ষ থেকে সরকারের নিকট আবেদন জোরালো হয়ে উঠেছে। গণমাধ্যমটির সত্যিই মৃত্যু ঘটছে বা ঘটবে কিনা সেটি সময় বলে দিবে।
অভিজ্ঞতা যে অনেক সময় অপ্রাসঙ্গিক তা ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের দিকে লক্ষ্য করলেও স্পষ্ট। কেননা এদেশের মাটিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করা অধিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত করতে পারেনি। তবে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাহীন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন অল্প দিনের মধ্যেই সেটি খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছে।
অভিজ্ঞতা যেকোন কাজের জন্য ভালো তবে অধিক অভিজ্ঞতা শুধু মুক্ত বা স্বাধীন গণমাধ্যম নয় যে কোনো বিষয়ের জন্য যেন কাল না হয় সেদিকে আমাদের লক্ষ্য করা যেমন জরুরি , অনাভিজ্ঞ বা কম অভিজ্ঞতাও আমাদের জন্য যে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে সেটিও আমাদের মনে রাখতে হবে।
মুহাম্মদ আল-হেলাল, এমফিল গবেষক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়