বাংলাদেশে এখন ক্ষমতার দুটি কেন্দ্র রয়েছে—একটি সেনাবাহিনী এবং অন্যটি সরকার। এর মধ্যে প্রকৃত শাসক কে, তা আপাতত নিশ্চিত করে বলা কঠিন। ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর সরকারের ব্যর্থতা ও ছাত্রনেতাদের ছায়া সরকারের কর্মকাণ্ডে দেশে স্থিতিশীলতা আসেনি; বরং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে, যাতে জামাত, বিএনপি এবং এনসিপির সদস্যরা অংশ নিয়েছে। এই তিন দল প্রতিযোগিতা করেছে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এবং দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ আহরণ করতে। এমন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সেনাবাহিনী একমাত্র বিকল্প কর্তৃত্বকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর থেকে সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। এতে আগামী দিনে দেশ আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে, এবং একাধিক রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে এতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে। এর ফলে ইউনূস সরকার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এমন প্রেক্ষাপটে সেনা অভ্যুত্থানের মতো একটি সম্ভাব্য ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যারা এরশাদের ক্ষমতা দখলের ঘটনার সাথে পরিচিত, তারা জানেন এই ধরনের পরিস্থিতি কিভাবে তৈরি হতে পারে।
বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য জাতীয় নির্বাচনই একমাত্র পথ। ছাত্রনেতাদের কাছে হয়তো এই কথা গ্রহণযোগ্য হবে না, কারণ আপাতত তারা নিজেদের ছাড়া অন্য সবাইকে ফ্যাসিবাদী ফ্রেমে দেখেন। কিন্তু সত্যি হলো, যদি নির্বাচন না হয় এবং স্থিতিশীলতা না ফেরে, তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন তারাই। যদিও তারা এখন ক্ষমতায় না থেকেও বহু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছেন, কিন্তু সাময়িক এই প্রভাবের জন্য ভবিষ্যৎ বিসর্জন দেওয়া নিছক বোকামি হবে।
যদি নির্বাচন বিলম্বিত হয়—যা জামাত, এনসিপি ও হেফাজতের মতো রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর বক্তব্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে—তাহলে তারা নিজেরাই সেনাশাসনের সম্ভাবনা ডেকে আনবেন। সংস্কার ও ঐকমত্য কমিশন পরিচালনাকারী প্রবাসী নেতারাও শেষ পর্যন্ত নিজেদের প্রবাস জীবনে ফিরে যাবেন। আপনারা কিন্তু দেশেই থেকে যেতে বাধ্য হবেন। বাস্তবতা হলো, নির্বাচন বিলম্বিত হলে ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করবে না। নির্বাচন বিলম্বিত করার লক্ষণ আমরা আশপাশে স্পষ্ট দেখতে পারছি।
আমি চাই একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ—যেখানে সবাই নিরাপদে থাকবে, রাজনৈতিক শক্তিগুলো ক্ষমতা লাভ করবে ব্যালটের মাধ্যমে। একমাত্র এই প্রক্রিয়াই সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য, একসময় গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা কমরেডরাই এখন এই সহজ সত্যটিকে বারবার জোর করে অস্বীকার করছেন।
আসিফ বিন আলী। শিক্ষক ও স্বাধীন সাংবাদিক।