রেসেপ তাইপ এরদোয়ান-এর তুরস্কে বাকস্বাধীনতা এবং বিরোধী মতবাদ কঠোর ভাবে নিরোধ করা হয়। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো তার সমালোচনা কিছুটা এড়িয়ে চলে, কারণ তুরস্ক প্রায় ৩৬ লাখ সিরিয়ান রিফিউজি আশ্রয় দিয়েছে। তুরস্ক যদি রেফুজিদের নিয়ে সহযোগিতা করা বন্ধ করে দেয়, ব্যাপারটা একটি গ্লোবাল ক্রাইসিসে পরিণত হবে, এবং তার ঘানী পশ্চিমা দেশগুলোকেও টানতে হবে।

কয়েক মাস আগে আল-জাজিরার মেহেদী হাসান প্রফেসর গওহর রিজভীর-র একটি সাক্ষাৎকার নেন। সেই সাক্ষাৎকারটি গওহর রিজভীর মতো একজন মানুষের জন্য বেশ লজ্জাজনকই, কারণ তার কাজগুলো ছিল অত্যন্ত দুরূহ: ১) তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন যে বিগত ২০১৮-সালের নির্বাচনটি নিরপেক্ষ ছিল ২) তিনি বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতার হাল নিয়ে মন্তব্য করতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু মেহেদী হাসান বেরসিক ভাবে ঘনঘন ড: শহিদুল আলম-এর ব্যাপারটি টেনে আনছিলেন, যাতে প্রফেসর রিজভী বারেবারে বিচলিত হয়ে যাচ্ছিলেন। এই পুরো ইন্টারভিউতে আমাদের অনির্বাচিত সরকারের কুৎসিত রূপটা প্রকট ভাবে ফুটে উঠছিলো। এই “Emperor has no clothes” পরিস্থিতিতে মুখ ঢাকার এক চিলতে বস্ত্র ছিল রোহিঙ্গ্যা রিফুজী ক্রাইসিসে বাংলদেশের ভূমিকা। 

কেমন আছেন বাংলাদেশের রোহিঙ্গ্যা শরণার্থীরা ?

গত সপ্তাহে সরকার ঘোষণা করে যে নভেম্বর (২০১৯) থেকে ১০০,০০০ হন রোহিঙ্গ্যা শরণার্থীকে ভাসান চর নামে একটি প্রত্যন্ত দ্বীপে স্থানান্তর করা হবে।  দ্বীপটি নিরাপদ নয় – সেখানে ঘনঘন বন্যা এবং সাইক্লোন হয়। যারা আপাতত কক্সস বাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে থাকছেন, তাদের নিরাপত্তাও প্রশ্নবিদ্ধ, কারণ অনেকে হামলার শিকার হচ্ছেন তাদের রক্ষকদের হাতে

বাংলাদেশী অনেক সংবাদ পত্রে প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায় যে কক্সস বাজারে আশ্রয় পাওয়া শরণার্থীরা অনেক রকম অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছেন, অথচ রোহিঙ্গ্যাদের বাংলাদেশে কাজ করার অথবা পড়াশোনা করার অনুমতি নেই, তাই তাদের জন্য অপরাধের বিকল্প কিছু নেই – সাধারণ কাজ করার পথ তাদের কাছে খোলা নেই। রোহিঙ্গ্যা হওয়ার অপরাধে যেখানে ইউনিভার্সিটি থেকে ছাত্রী বহিস্কার করা হচ্ছে, সেখানে এই মানুষগুলোর জন্য আর কি পথ খোলা থাকছে?

সম্প্রতি ফিলিপাইন্সের প্রেসিডেন্ট রোড্রিগো দুতের্তে রোহিঙ্গ্যা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেনযারা খবরের কাগজে প্রায়ই চোখ রাখেন তারা জানবেন দুতের্তে হাজার হাজার ফিলিপিনোকে বিচার বহিৰ্ভূত ভাবে হত্যা করেছেন “মাদক বিরোধী লড়াই” অজুহাত দিয়েএমন অজুহাতে ২০১৮ সালের মে মাসে বাংলাদেশেও প্রায় ৩০০-জন কে মারে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ যেমন দুতের্তে থেকে শিখেছে, দুতের্তেও এরই মধ্যে হয়তো টের পেয়েছেন যে শরণার্থী গ্রহণ করাটা আসলে যেকোনো সরকারের জন্য একটি সুযোগই বটে, কারণ তুরস্ক এবং বাংলাদেশের মতো কয়েকজন শরণার্থীকে জায়গা দিতে পারলে তার জন্যেও হাজার খুন মাফ।

শুধু বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গ্যাদের দিকে তাকিয়ে দেখলে বোঝা যাবে যেই এই পরিস্থিতিতে জিতেছেন এক এক দেশের সুযোগসন্ধানী অত্যাচারী শাসক আর  মুখ বাঁচাতে পারছেন ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি। হারছে কোনোমতে বেঁচে থাকা শরণার্থীরা, এবং কৌতুকের পাত্র হচ্ছে মানবিক নৈতিকতা।

মুক্তিফোরামের পক্ষে এই সম্পাদকীয়টি রচনা করেছেন তনিমা

Share.

I am an Example Writer. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt labored et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Leave A Reply