“আমাকে শাস্তি দেয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হলো,আমাকে পড়াতে না দেয়া।” – বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী । বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যায়িত করে আদালতের দেয়া রায়ের পরেও ক্লাসে ফিরতে পারছেন না তিনি । ক্লাসে ফিরতে না পারলেও সিঁড়িতে ক্লাস নেয়া শুরু করলেন এই শিক্ষক। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১২ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট এর এক সভায় ড. রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর এক সপ্তাহ পর ১৯ জুলাই এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রিট আবেদন করেন তিনি। চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বাধ্যতামূলক ছুটির বিষয়টি হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও বিভাগে ফিরতে না পেরে গত পাঁচ দিন থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন এই শিক্ষক। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবাদস্বরূপ এক ভিন্নধর্মী প্রতীকী ক্লাসের আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়ন। গতকাল বেলা বারোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সিঁড়িতে অনুষ্ঠিত এই ক্লাসে অংশ নেয় শতাধিক শিক্ষার্থী। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই নয়, যোগ দিয়েছিলেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী এই ব্যতিক্রমী ক্লাসে আলোচনা করেন পরিসংখ্যান বিষয়ে। শিরোনাম ছিলো, “বেসিক ক্লিয়ার নাইঃ পরিসংখ্যান এর প্রথম পাঠ “
বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা ঠিক কতটা স্বচ্ছ, এ ব্যাপারেও আলোচনা হয় ক্লাসের প্রথম ভাগে । অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী দু’টি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে। যার প্রথমটি ছিলো,
“বিশ্ববিদ্যালয় কথাটার মানে কি? ” উত্তরে অনেকে বলেছেন, এখানে উচ্চশিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা আসে। অনেকে বলেছেন গবেষণার কথা। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই উত্তর আসে,“শুধু জ্ঞান বিতরণই হবে না, বরং এখানে জ্ঞান তৈরিও হবে” এই উত্তরের সাথে সহমত পোষণ করে অধ্যাপক বলেন, ” কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগে একটা বিদ্যালয় তো হতে হবে! এখানে তো ছাত্রছাত্রীদের বেসিক মানবাধিকারই নাই ! “
তাঁর দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিলো,
√ ” আপনারা তো সবচেয়ে বড় ভিক্টিম! এই যে আমরা শিক্ষকরা ভয়াবহ রকমের অনিয়ম করি, ক্লাসে যাই না ঠিকমতো, (সবার কথা বলছিনা)…আপনারা কিছু বলেন না কেন?” বেশ কিছুক্ষণ আলোচনার পর তিনি বলেন,” আমি যখন ছাত্র ছিলাম আমি নিজেও কখনও মনে করিনাই যে এটা একটা ঘোরতর অন্যায়। It’s a Crime. একজন শিক্ষকের বেসিক কাজগুলো ঠিকভাবে না করা যে ভয়াবহ অপরাধ, এই বোধই চলে গেছে আমাদের !” যারা ভিক্টিম তারা কিছু বলেনা তার আরেকটা কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ” তারা জানে তারা যদি প্রতিবাদ করে তাদের কেউ সুরক্ষা দিবে না। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়া সংক্রান্ত এই অনিয়মের তিনটি সুস্পষ্ট এবং সূক্ষ্ম কারণ দর্শালেন তিনি,
√ জবাবদিহিতার স্ট্রাকচার সম্পূর্ণ অনুপস্থিত
√ যে দেশে সুশাসন নাই সে দেশে Free Education কাজ করে না।
√ “নিয়োগপত্রের কোথায় লেখা নেই যে আমাকে ক্লাস নিতে হবে!”
‘শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন’ এই বোধদয় হওয়াটা যেমন জরুরী, তেমনি জরুরী “বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধা”টা।

সম্পাদক, মুক্তিফোরাম

Share.

I am an Example Writer. Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit, sed do eiusmod tempor incididunt labored et dolore magna aliqua. Ut enim ad minim veniam, quis nostrud exercitation ullamco laboris nisi ut aliquip ex ea commodo consequat.

Leave A Reply