আমার ছোট বোনের স্কুলে গার্জিয়ানদের একটা নাম্বার জমা দিতে হয়, যেখানে প্রতিষ্ঠান থেকে যাবতীয় নির্দেশাবলি এসএমএস করে দেয়। আমার মায়ের নাম্বার দেয়া ছিল সেখানে, যেই নম্বর বর্তমানে আমি ব্যবহার করি। সেই নম্বরে সেদিন একটা এসএমএস এলো, আমার ছোট বোন এর স্কুল এর বিগত তিন মাসের বেতন, যেখানে ল্যাব ফি, বাস ভাড়া, মেইন্টেনেন্স ফি সব সব মিলিয়ে বিশাল এক এমাউন্ট খুব জলদি পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে আমার খুব সিম্পল কিছু প্রশ্ন আছে। তিন মাস একটা বন্ধ স্কুলে কী মেইন্টেনেন্স করতে হয়েছে? গত তিনমাসে সব গণ পরিবহন বন্ধ ছিল, গ্যারাজে বসে বসে বাসের কোথায় কোথায় খরচ করতে হয়েছে? মৌসুমী জীবিকা নির্বাহকেরা কাজ হীন এই সময়ে কোথা থেকে এই টাকা আনবে? কেবল আমার ছোট বোনের স্কুল না, খোঁজ নিয়ে দেখলাম, বাংলাদেশের শীর্ষ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যারা একেক বোর্ড পরীক্ষায় এ প্লাসের ভারে পত্রিকার ফ্রন্ট পেইজে ঠাসাঠাসি করে, তারাও ছাড় দিচ্ছেনা টাকা আদায়ে।
একটা জাতির গোটা প্রজন্ম তাদের শিক্ষা নিয়ে একসময় নেতৃত্বে যাবে। তাদের কয়জন এই নেতিবাচক শিক্ষা জীবনে কাজে লাগাবে না? তাদের কয়জনই বা মাথায় রাখবে না, দুর্যোগ মানে টাকা কামানোর উৎসব নয়, দুর্যোগ মানে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো মানসিক স্বাস্থ্য, অনুপ্রেরণা, ক্যারিয়ার গাইডলাইন এসবের কোনো কিছুর ধারে কাছে থাকে না। কেবল সিলেবাস মুখস্ত করিয়ে বমি করা শেখায়। এই বমির ওজনে এ প্লাস এনে পত্রিকায় মুখ দেখাতে পারলেই আল্টিমেট সফলতা।
এদের জন্য কোনো নীতিমালা আসে না কেনো? তাদের কতজন ছাত্র নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের, কতজন ছাত্র আর্থিক অনটনে আছে, তার কতটুকু খোঁজ রাখছে? বরং মাসে মাসে হাস্যকর এমাউন্টের রিসিট তুলে দিয়ে টাকা উঠানোর এটিএম এর মতো ব্যবহার করছে এসব তথাকথিত শিক্ষিত কর্তৃপক্ষ।
মানুষকে শিক্ষিত করার দায়িত্ব অনেক বড় কিছুই নয়, অনেক পবিত্র একটা কাজ। টাকার বান্ডিলে নিজেদের স্টেপল না করে, সেই দায়িত্বের পবিত্রতা রক্ষা করতে শিখুন। জাতি আপনাদের কাছে অনেক কিছু আশা করে।
নাফিস ফুয়াদ বিন জামান