১.
একথা সত্য যে, একজন ভালো লেখকের আলাদা করে কোনো সভা-সমিতি কিংবা প্রতিষ্ঠানের দরকার পড়ে না। একজন ভালো লেখক নিজেই তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান। সেই লেখক যখন শব্দের পথ ধরে হেঁটে যান, তখন তাঁর পেছনে মিছিল নিয়ে হাঁটে বিশাল এক মহাসমাবেশ। লেখকের নিজের জন্য আলাদা সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয় না, বরং প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকতে প্রয়োজন হয় ভালো লেখকদের। কিন্তু, এই সত্যই একমাত্র সত্য নয়।
এরচেয়েও বড় সত্য হচ্ছে- বইমেলায় কোন বই থাকবে সেই মাতব্বরি করে পুলিশ।
কোন লেখকের বই ছাপালে প্রকাশনী বন্ধ করে দেয়া হবে- এই মাতব্বরি করে বাংলা একাডেমি।
কী নিয়ে লিখলে আর জীবন নিয়ে আর বাড়ি ফেরা যাবে না- তা নির্ধারণ করে দেয় রাষ্ট্রের মদদপুষ্ট মৌলবাদ।
কোন বিষয় নিয়ে লিখলে বইয়ের সকল ধরনের ডিসট্রিবিউশন বন্ধ করে দেয়া হবে- তা চাপিয়ে দেয় সরকার।
আর এরচেয়েও বড় সত্য হচ্ছে একজন সাহিত্যপাতাওয়ালা আলতাফ শাহনেওয়াজ। দিবালোকের মতো সত্য ঘটনা যথেষ্ট আড়াল করে না লিখলে কিছুতেই যেই সাহিত্য সম্পাদকের মন গলে না। লুকোচুরিহীন লেখা যে ছাপে না।
২.
আলতাফ শাহনেওয়াজ একটা মজার ফ্যালাসি তুলেছেন- লেখকের স্বাধীনতা স্বয়ং লেখক ছাড়া তাকে কেউ দিতে পারে না। পারতপক্ষে এটাও সত্য। স্বাধীনতা তো দিয়ে দেয়া যায় না। নিয়ে নিতে হয়। কিন্তু স্বাধীনতার আলাপের এই ফ্যালাসি তুলে একটা কঠিন বাস্তবতা তিনি আড়ালের চেষ্টা করলেন। লেখকসত্তাধারী মানুষের মাথায় রাষ্ট্রীয় রাইফেল তাক করার বাস্তবতা। স্বাধীনতা বলতে লেখকরা আসলে অতোটুকুই চাইছে। তাঁর মাথার মাঝ বরাবর যেই রাইফেলটা তাক করা, সেটা যেন নামিয়ে ফেলা হয়। আর কিছুই নয়।
৩.
অ্যাক্টিভিস্ট ও লেখকের মাঝখানে একটা বিশাল দেয়াল টেনেছেন আলতাফ। যেন এই দুটি সত্তার কিছুতেই একই দেহে বিরাজ করার অধিকার নেই। এইখানেই আরও এক মজা। ধরেন, ফুকো, সাত্রে, অরুন্ধতী, মহেশ্বতা দেবী, গায়েত্রী স্পিভাক, মায়া অ্যাঞ্জেলু, জহির রায়হান কিংবা হাঙরি জেনারেশনের কবিরা যদি আলতাফকে কান ধরিয়ে এই পৃথিবীর একশজন প্রভাবশালী লেখকের নাম লিখতে বলেন, দেখা যাবে তাঁর লেখা সেই একশ নামের ভেতর বেশিরভাগ নামই অ্যাক্টিভিস্ট লেখকদের।
এমনকি খোঁদ আলতাফের কথাই ধরুন (যদিও আলতাফ প্রভাবশালী তো দূরে থাক, সুলেখকও নন), তাঁর সহকর্মী রোজিনা ইসলামকে যখন পুলিশ ধরে নিয়ে যায়- তখন আমরা তাকেও দেখলাম অ্যাক্টিভিজম করতে।
কী জানি, হয়তো তখনো এই যুগান্তকারী থিওরি তিনি আবিষ্কার করতে পারেননি যে- লেখকের কাজ কেবলই লেখা, লেখা নিয়ে গ্রুপবাজি করা, গুটিবাজি করা, এর ওর পিছে লেগে থাকা, প্রতিষ্ঠানের জোরে হুমকি ধামকি দেয়া, তবু লেখকের কাজ কোনোভাবেই অ্যাক্টিভিজম করা নয়।
লেখকঃ সৈকত আমিন