পর্ব-১
লেখাটি আমার ব্যক্তিগত একটি নির্বাচনী অভিজ্ঞতার আলোকে বলবো, বিচার-বিশ্লেষণ থাকবে আশা করি মাঠপর্যায়ে স্থানীয় নির্বাচন কেমন সেটা নিয়ে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে৷
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরশনে নতুন যুক্ত ওয়ার্ড ৬০ নং ওয়ার্ড৷ সাবেক দনিয়া ইউনিয়নকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ এর একটি ওয়ার্ড ৬০ নং ওয়ার্ড৷ নতুন ওয়ার্ডের প্রথম কাউন্সিলর নির্বাচন৷ মোট ভোটার ৩৯ হাজার৷ ১৩ টা ছোট পাড়া-মহল্লা। মোট ভোট কেন্দ্র ১১ টি৷
আমি ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত৷ ছাত্রলীগ করার সুবাদে একটা পরিচিতি ছিলো৷ এছাড়া স্থানীয় হওয়া ও ছোট থেকে বড় একই এলাকায় হওয়ায় অবস্থান শক্ত৷ এলাকার বিভিন্ন প্রোগ্রাম যেমন “ঘুড়ি উৎসব,দেওয়াল পত্রিকা লিখা,টুর্নামেন্ট, ঈদ পূণর্মিলনী, শিক্ষা উপকরণ বিতরণের মতো কর্মসূচীতে যুক্ত হবার দরুন ভালো একটা ইমেজ তৈরী হয়েছে৷ (কেন আমি গুরুত্বপূর্ণ রোল প্লে করতে পেরেছি বা ইলেকশন ক্লোস্লি অব্জার্ব করতে পেরেছি তা যাতে সহজে বুঝা যায় সেজন্য এসব উল্লেখ করা)
নির্বাচনের তফসীল দেওয়ার আগেই মোটামুটি আমাকে বিভিন্ন লোকজন নক দেওয়া শুরু করেছে ভোটে তাদের সাথে থাকার জন্য৷ আমি কারো পক্ষ্যই নিলাম নাহ৷ অপেক্ষা করলাম৷ আমার এলাকা স্মৃতিধারা, ভোটের বিবেচনায় চতুর্থ ইম্পোর্ট্যান্ট কেন্দ্র এই এলাকায়৷ তবে এ কেন্দ্রে ভোট পড়ার হার সব চাইতে বেশি সে হিসাবে এটি দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র৷ এই কেন্দ্রের হ্যাভি ওয়েট দুই ক্যান্ডিড্যাট হলেন রতন এবং শুভ৷
রতন সাহেব মোটামুটি শুরু থেকেই একচেটিয়া রাজনীতি করতে চেয়েছেন৷ তিনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী সব কিছু করতে চাইতেন। স্থানীয় পি এন পি স্কুলে তিনি অনির্বাচিত সভাপতি ছিলেন৷ তার সাথে আমাদের এমপি সাহেবের জেষ্ঠ্যপুত্র ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভালো সম্পর্ক৷
রতন সাহেবের সাথে আমার বাজে সম্পর্কের কারন ছিলো রার আমাদের বিরুদ্ধে বিষেদগার করার কারন৷ তিনি হয়তো ভেবেছেন এই পরিবারের কেউ তার জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে৷ ভাবার যথেষ্ট কারন ও বিদ্যামান৷ আমার দূর সম্পর্কের খালু এই ওয়ার্ডের মেম্বার ও ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন৷ এবং রতন সাহেব এবং মেম্বার সাহেবের মারামারি ও হয়েছিলো৷
শুভ শরীয়তপুরের ছেলে, উনি ব্যবসায়ী পুরোদস্তুর৷ শেখ পরিবারের যেকোন একজনের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় ও অধিক টাকা খরচের কারনে অল্প দিনে রাজনীতিতে একটা অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন৷
আমার সাথে রতন সাহেবের সাথে সম্পর্ক খারাপের আরেকটা কারন আমার আম্মুর স্কুল নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নমিনেশন নেওয়ার পর তিনি বাসায় এসে প্রছন্ন হালকা হুমকী দিয়েছেন নির্বাচন না করার জন্য৷ আমরা নির্বাচন করেছি এবং অল্প কিছু ব্যবধানে হেরেও গেছি। আম্মু হাজ্জ্বী মানুষ কেবল মুর্বীদের অনুরোধে আমরা রাজী হয়েছিলাম৷ আম্মু ক্যাম্পেইন করেন নি, আমিই বাসায় বাসায় যেতাম ক্যম্পেইন এ৷
তিনি আমাদের পরিচিতো করালেন অহংকারী রূপে৷ আমাকে নিয়ে বাজারে অনেক কথা ছড়ালেন৷ নির্বাচনের তফসীল ঘোষনা হলো৷ আমাকে শুভ ভাই কল দিলেন, রতন ভাইও দিলেন৷ কারো পক্ষ্যই নিলাম নাহ৷ আমার আগের ৪ টা নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা ছিলো, তবে সব কিছুর দ্বায়িত্ব নিজে পাইনি কখনো। রাজনৈতিক সহযোদ্ধা ছিলো শাকিল৷ কলেজের বন্ধু, মূলত তাকে সাহায্য করতে গিয়ে রাজনীতিতে স্বক্রিয় হওয়া৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক পিএস আওলাদ সাহেব ঢাকা -৪ এর ক্যন্ডিডেট৷ ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশানালের একটা প্রোগ্রামে বক্তব্য এবং তাকে প্রশ্ন করার পর তিনি ছবি তুলার সময় কাধে হাত রেখে বলেছেন– এতো কম্পলেইন থাকলে রাজনীতিতে পূর্ণদমে সক্রিয় হয়ে পরিবর্তন দেখাও, আমরা গূণগত পরিবর্তন চাই৷
শাকিল আর আমি একজনকে মানতাম, তিনি উজ্জ্বল ভাই। কারন তিনি আমাদের অবমূল্যায়ন করেন নি কখনো। কিন্তু নির্বাচনে তিনি শুরুতেই সালাম বাবাউ সাহেবকে পূর্ণ সমর্থন দিলেন৷ ভোটের বিচারে কিন্তু তিনি শুভ ভাই ও রতন ভাইয়ের চেয়ে এগিয়ে কিছুটা৷ কিন্তু তিনি ভোট না করে সমর্থণ দেওয়ায় আমি এক বিড়ম্বনায় পড়লাম৷
এদিকে শুভ ভাই লাগাতার কল দিচ্ছেন, যেই রতন ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক দা-কুমড়ার তিনিও স্কুলে যতো প্রোগ্রাম করতেন দাওয়াত দিতে থাকলেন৷ শুভ ভাইয়ের মূল সহযোগী আশিক ভাই৷ আমাদের বাসায় থাকার সুবাধে তিনি আমার বড় ভাইয়ের মতো। এদিকে স্থানীয় নির্বাচনে আওয়ামেলীগ সমর্থন দিবে কি দিবে নাহ সেটা নিয়ে একটা আলোচনা ছিলো।
এর মধ্যে শাকিল এক তরফা আলোচনা বাদেই সালাম বাবুর সাথে দেখা করেছে উজ্জ্বল ভাই সহ তার নির্বাচন করার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে গেছে৷ আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম এই ভোট আমি শিখতে করবো আর এমন কারো জন্য করবো যার জন্য ফলাফল ভালো করা কষ্টসাধ্য৷
আমি কেবল আমার নিজের কেন্দ্রকে প্রায়োরিটি দিলাম৷ স্মৃতিধারার এলাকার কেন্দ্র পিএনপি স্কুল৷ এটা আমার সাবেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান৷ আমার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী,স্থানীয় বেশিরভাগ ভোটার নোয়াখালী,বরিশালের । প্রতীক বরাদ্দ্বের আগেই আমি শুভ ভাইকে সমর্থন দিলাম। পার্টি অফিসে শুভ ভাইয়ের সাথে যাবার পর বুঝলাম, ভোট করার মতো এবিলিটি শুভ ভাইয়ের কর্মীদের কেবল হাতে গণা কয়েকজনের।
তবে আশিক ভাইয়ের সুবাধে শুভ ভাই এগিয়ে রইলো, কারন আশিক ভাই আমাদের যেই কেন্দ্র সেই পি এনপি স্কুলের দুইবারের নির্বাচিতো মেম্বার। প্রথমেই সিদ্ধান্ত হলো শুভ ভাইয়ের নির্বাচন পরিচালনার প্রধানকেন্দ্র স্মৃতিধারায় হবে। এই অফিস পরিচালনার দ্বায়িত্ব কিভাবে যেনো আমার উপর পরলো, যা পরবর্তীতে তার নির্বাচনের অন্যতম সম্ন্বয়কে রূপ নিলো৷
প্রতীক বরাদ্দ হলো, মোট প্রার্থী ১১ জন৷ আওয়ামেলীগের প্রার্থী ৭ জন, বিএনপির ২ জন৷ বাকী দুইজনের পরিচয় কিছুটা দূসর ছিলো। তবে স্মৃতিধারায় আলোচনায় ছিলো কেবল সালাম বাবু(রেডিও মার্কা)আবুল বাশার শুভ (এয়ারকন্ডিশন মার্কা), আনোয়ার মজুমদার(কাটাচামচ মার্কা),লুৎফর রহমান রতন মোল্লা(গরুর গাড়ী) আর রাইসুদ্দিন রাইসু ( লাটিম মার্কা) ।
তবে পিএনপি স্কুল কেন্দ্রে লড়াইটা কেবল যে এয়ারকন্ডিশন,কাটাচামচ ও গরুর গাড়ির মধ্যেই হবে তা মোটামুটুটি সিউর ছিলো। স্থানীয় এমপি পরিবারের সাথে কেবল রতন ভাইয়ের সম্পর্ক ভালো থাকায় রতন ভাইয়ের অবস্থান ভালো ছিলো৷ তিনি পিএনপি স্কুলের সভাপতি,স্থানীয় মসজিদ কমিটির প্রধান, স্মৃতিধারা পঞ্চায়েত ও তার ফেভারে। সেক্ষেত্রে শুভ ভাইয়ের নির্বাচন সরাসরি করেছে এর মধ্যে হেভি ওয়েট কেবল আশিক ভাই৷
আর কেউ শক্ত না থাকায় আমি এক্ষেত্রে সেকেন্ড ইন কমান্ড হবার সুযোগ পেলাম। এই নির্বাচনে সবচাইতে কম বয়সী হিসাবে কেন্দ্র পরিচালনার দ্বায়িত্ত্ব পেলাম। এই কেন্দ্রে ভোটার প্রায় ৭ হাজার৷ আমি কেবল আমার ছোট ভাইদের নিয়েই কাজ করলাম৷ হিসাবে শুভ ভাই এই কেন্দ্রে তৃতীয় অবস্থানে তফসীল ঘোষনার দিনেও এমন হিসাব নিকাশ চলছিলো৷
আমি কতোটুকু পেরেছি, নির্বাচনে কি স্ট্রেটেজী ছিলো সেসব পরের পর্বে থাকবে। কেবল বুঝার জন্য এতো বিস্তারিতো আলোচনা করা হচ্ছে, যাতে স্বচ্ছ ধারনা করা যায় কিভাবে কেনো কোন ফাংশন ঘটলো৷
(চলবে)
লেখকঃ শাহনেওয়াজ ফাহাদ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএর ছাত্র। একইসাথে তিনি বিজয়৭১ এর সাধারণ সম্পাদক।