ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী এক নেতার সাথে কথপোকথনে জানা গেছে যে ছাত্রলীগের একটি বড় অংশ মনে করে যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিটিয়ে হত্যা হওয়া ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার পেছনে ছাত্রলীগের হাত থাকবার প্রশ্নই ওঠে না।
এই প্রতিবেদককে সেই নেতা বলেন, “আপনাকে বুঝতে হবে যে ছাত্রলীগ একটি অত্যন্ত সুনিপুন ও সুসংগঠিত সংগঠন। আমরা কোনভাবেই পিটিয়ে মেরে ফেলাকে সমর্থন করিনা। আমাদের দলীয় পলিসি হলো শক্ত মাইর দিয়ে ছেড়ে দেয়া। মেরে ফেলা আমাদের পলিসি নয়।”
তিনি আরও বলেন, “মাইরের মাঝেও সিস্টেম আছে। এমনভাবে মারতে হয় যাতে শরীরে দাগ বসে যায়। পারলে হাত পা ভাঙ্গা, যাতে দেখেশুনে সবাই একটা ওয়ার্নিং পায় যে তেড়িবেড়ি করতে কি হাল হতে পারে। ভয় সৃষ্টি করাটাই আমাদের লক্ষ্য। এইজন্যে শক্ত মাইর দেই, তবে দলীয়ভাবে আমরা সবসময়ই মেরে ফেলতে মানা করি। মেরে ফেললে ভয় সৃষ্টি হয়না, সৃষ্টি হয় রাগ। রাগকে আমরা ভয় পাই। রাগিয়ে দিলেন, তো হেরে গেলেন।”
দলীয়ভাবে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও কেন ফাহাদকে মেরে ফেলা হলো সেটি জানতে চাইলে এই নেতা জানান, “দেখেন, এরা ছাত্রলীগের নবীন সদস্য। মাইর দেবার নিয়মকানুন এরা এখনও শেখেনাই। মারতে হয় কোমরের নিচে। কোমরের উপরে, পায়ের মাঝখানে, মাথায়, গলায়, এসব জায়গায় মারতে নাই। এসব জায়গায় মারলে ধুপ করে মরে যেতে পারে। এদেরকে এখন পূর্ণাঙ্গভাবে পিটানোর ট্রেনিং দেয়া হয়নাই, তাই এই অবস্থা। পূর্ণভাবে ম্যাচিওরড ছাত্রলীগ কর্মীদের মাইরের মাঝেও আর্ট আছে। সড়ক আন্দোলনে আমরা কতো বাচ্চারে পিটাইলাম, কেউ মরসে? বলেন, মরসে কেউ?”
অনেক চিন্তা করেও তখন এই প্রতিবেদন উক্ত আন্দোলনে মৃত কোন শিশুর কথা মনে করতে পারেন নাই এবং না মেরে পিটানোতে ছাত্রলীগের দেয়া উচ্চমানের ট্রেনিং এর প্রশংসা করেন।
সারাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই বিরুদ্ধমত থাকার দায়ে অথবা কেবলমাত্র সালাম না দেয়ার অপরাধে কিংবা নিজের ক্যালকুলেটর ফেরত চাওয়ায় অথবা কেবল নিঃশ্বাস নেবার কারণে নিয়মিত ছাত্রদের পেটানো হয়, নির্যাতন করা হয় এবং অপমান করা হয়।
তবে এটা ঠিক যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে, কমপক্ষে শারীরিকভাবে, কেউ মারা যায় না।
এটি একটি রম্য সংবাদ। মুক্তিফোরামের পক্ষে এটি রচনা করেছেন লেখক, গবেষক ও স্যাটায়ারিস্ট ফারুক রাসুল।