দেখুন,লন্ডনের বৈঠকটা বিএনপি আদায় করে নিয়েছে।উপদেষ্টা পরিষদের একটি ইম্পলিসিট ইন্ডেমনিটি ডীল দরকার ছিল। আবার বিএনপির দরকার ছিল এমন একটা সুইট ক্যালিব্রেশনের, যাতে সাপও না মরে, লাঠিও না ভাঙে।লন্ডনের বৈঠকের আগ পর্যন্ত বিএনপির লিডারশিপের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের কিছু কুশীলব এবং তাদের কাছাকাছি বিচরণরত কিছু চরিত্রের মোটিভ নিয়ে সুগভীর সন্দেহ ছিল (এখনো সেই সন্দেহ পুরোপুরি গেছে আমি বলবো না, তবে খানিকটা প্রশমিত হয়েছে তো অবশ্যই)।
তবে ওই টানাপোড়েনের মধ্যে (প্রফেসর সাহেবের পদত্যাগের গুঞ্জন এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলি) বিএনপি এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে যে এই মূহুর্তে বাংলাদেশে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করার মতো (বিএনপি নির্বাচন পরবর্তীকালে সরকার সফলভাবে চালাতে পারবে নাকি অথবা তাদের ইলেক্টোরাল ম্যানিফেস্টো এখনো নেই কেনো, এগুলো ভিন্ন আলাপ) অর্গানাইজেশনাল ক্যাপাসিটি একমাত্র দলটিরই আছে।
অন্যান্য দলগুলোর যেটা নিয়ে রাগ, যে সংষ্কার সংক্রান্ত জাতীয় ঐক্যমত কমিশনের আলাপে একমাত্র বিএনপিরই ইম্পলিসিট ভেটো পাওয়ার রয়েছে, অন্যদের তেমন নেই, এটা বিএনপি এসব ম্যানুভারিংয়ের মাধ্যমেই আদায় করে নিয়েছে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে এটাই বিএনপির সফলতা।আপনাদের নেই, সেটা আপনাদের ব্যর্থতা, পিরিয়ড।
রক্তাক্ত জুলাইয়ের পর আপনাদের সবার সামনে অবারিত সুযোগ ছিল, ফিল্ড এত ওপেন ছিল যে বিএনপির মতো বড় দল, যারা অনেকাংশেই ডিজঅর্গানাইজড ছিল তখন, ভার্চুয়ালি তাদের সমকাতারে পৌঁছে গিয়েছিলেন।কিন্তু বাস্তবে পারেননি।বিএনপি অন্তঃত জাতীয় লেভেলে সেটা পেরেছে, এবং ভেটো পাওয়ারটা আদায় করে নিয়েছে।যদি আপনাদের ইলেক্টাবিলিটি থাকতো, তবে উপদেষ্টা পরিষদ কখনোই লন্ডন বৈঠকের দিকে ঝুকঁতো না, এটাই সাইন্স।
হুট করে নিম্নকক্ষের জন্য প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশনের (পিআর) মতো দাবি তোলা এই লণ্ডন বৈঠক-পরবর্তী স্ট্যাটাস কোউকে ডিজরাপ্ট করার অভিপ্রায় থেকেই তোলা হয়েছে, সেটা বোঝা খুব কঠিন কিছু না।আমি একে ভালো, খারাপ কিছুই বলবো না, তবে মানুন বা নাই মানুন, যদি এই ইস্যু নিয়ে আরো জল ঘোলা হতে থাকে, তবে ইলেক্টোরেটরা একে ভালোভাবে না নেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।পিআর একটি অত্যন্ত জটিল পদ্ধতি, এবং খুব কমদেশে নিম্নকক্ষের নির্বাচনের জন্য শুধু পিআর পদ্ধতি প্রচলন আছে। যেসব শক্ত ডেমোক্রেসিতে পিআর প্রচলিত আছে, তা আছে ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোষ্টের সাথে সম্মিলিতভাবে।
এর গালভরা একটি নামও আছে।মিক্সড-মেম্বার প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (যাদের আগ্রহ আছে গুগল করে দেখে নিতে পারেন)।আমি জার্মানির বুন্ডেস্টাগ নির্বাচনে এটা দেখেছি এবং সেই সাথে এটাও বুঝেছি এই কম্পলেক্স পদ্ধতি বাংলাদেশের মতো নাবালক ডেমোক্রেসিতে প্রচলন করার মতো পরিস্থিতি এখনো আসেনি।একটা জিনিস মনে রাখবেন, ডেমোক্রেটিক উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। রাতারাতি সব বদলানো সম্ভব নয়।
লং জুলাই আমাদের জন্য অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে এটি যেমন সঠিক, তেমনি রাজনৈতিক স্টেইকহোল্ডারদের এটিও মাথায় রাখতে হবে যে বাংলাদেশি ইলেক্টোরেটরা সব ধরণের ট্রাঞ্জিশনের জন্য প্রস্তুত কিনা।নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের আলাপ তেমনি একটি আকাশ-কুসুম আলাপ।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের ভোটিং কালচারের রাতারাতি পরিবর্তনের এই চিন্তাভাবনা সঠিক নয়। ভোটাররা ভাবতে পারেন শুধুমাত্র নির্বাচন বানচালের জন্যই তাদেরকে শিখণ্ডী করে এই আলাপ তোলা হচ্ছে, যে সেন্টিমেন্ট এই দাবি তোলা দলগুলোর বিরুদ্ধে যাবে।আপনারা বিএনপির অগ্রযাত্রা রুখতে চান? হাজারো উপায় আছে। কিন্তু নিম্নকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি সেটা নয়।
আদিল মাহমুদ,সাবেক সাংবাদিক।