সামাজিক ব্যবসা কোন ঐতিহ্যগত অর্থশাস্ত্র দ্বারা স্বীকৃত নয়, এটি একান্তই ব্যক্তিগত মুক্ত চিন্তা প্রসূত একটি অর্থনৈতিক প্রকল্প মাত্র। সামাজিক সমস্যা (যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ) দূরীকরণে কিংবা জীবন যাত্রার মানউন্নয়নকল্পে ব্যক্তিমুনাফাহীন যে ব্যবসা তাই সামাজিক ব্যবসা। এ ব্যবসা লাভজনক তবে লাভের পাশাপাশি এটি সমাজের নানাবিধ সমস্যা সমাধানের অব্যর্থ মহৌষধ। এ উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই নিঃস্বার্থ, ত্যাগী, সমাজসেবী, পরোপকারী, মানবিক, উদার ও নির্লোভ ব্যক্তিবর্গই এ ধরণের ব্যবসায়ের উদ্যোক্তা। তাদের হাতে আছে সমাজ উন্নয়নের পরশ পাথর, আছে আলোকবর্তিকা। তারা স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান, স্বপ্ন শেখান ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন নিরলস শ্রম ও মেধার সাহায্যে।
সামাজিক ব্যবসায়ের এই আধুনিক ও যুগোপযোগী ধারণাটির প্রবক্তা এক মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী পৌরুষ যাকে বলা হয় সামাজিক ব্যবসায় ও ক্ষুদ্র ঋণের জনক, বাংলাদেশের, বাঙালির সম্পদ, বাঙালির গর্ব ও অহংকার গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী (২০০৬), জগৎ বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একজন নোবেল বিজয়ী হিসেবে শুধু নন, বিশ্বখাদ্য পুরস্কার (১৯৯৪), সিডনি পুরস্কার (১৯৯৮) এবং সিউল শান্তি পুরস্কার অর্জনকারী এই মহান পুরুষ এখন এক মহান রাষ্ট্রনায়ক।
সামাজিক ব্যবসা সমাজ উন্নয়নের শক্ত হাতিয়ার। নানাবিধ লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে এর জন্ম। এর মূল লক্ষ ও উদ্দেশ্য হলো-
১। সমাজের জীবন মানের উন্নয়ন অর্থাৎ মানবকল্যাণ।
২। ব্যক্তিগত মুনাফা বর্জন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্প্রসারণ।
৩। দারিদ্র্য বিমোচন ও আয় বৈষম্য দূরীকরণ করে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন।
৪। অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন।
৫। মানসিক প্রশান্তি লাভ ও বিশ্বকে অধিকতর বাসযোগ্য করা।
সর্বোপরি এ ধরণের ব্যবসায় বিনিয়োগকারী বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার পর মুনাফার সম্পূর্ণ অর্থ ব্যবসায়ের উন্নয়ন সম্প্রসারণে, শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যয় করেন। ২০০৭ সালের শেষ দিকে এ ধারণাটির জন্ম হলেও বর্তমান বিশ্বে এটি বেশ জনপ্রিয় ও প্রশংসিত।
সামাজিক ব্যবসা একটি অনুপ্রেরণামূলক অনুশীলন। দৃশ্যত মুনাফা অর্জনকারী কোম্পানীগুলো যা উপেক্ষা করে সামাজিক ব্যবসা তার দুয়ার উন্মোচন করে সমাজের ভিত্তিকে অধিকতর টেকসই, মজবুত ও শক্তিশালী করে। দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি, পরিবেশ সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে এই ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম, অপরিহার্য ও অনস্বীকার্য। তাই এটি শুধু এশিয়ায় নয় ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তা ও সামাজিক কর্মীদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা অনন্যমাত্রায় গৃহিত হয়েছে।
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বের এক নক্ষত্রের নাম যার জন্ম ২৮ জুন ১৯৪০ সাল। বাংলাদেশে এই ২৮ জুন দিবসটি “সামাজিক ব্যবসা দিবস” হিসেবে ২০১০ সাল থেকে প্রথম উদযাপিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর দিবসটি ‘ইউনূস সেন্টারে’ পালিত হয়। দিবসটিকে আমি “আন্তর্জাতিক সামাজিক ব্যবসা দিবস” হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
পরিশেষে একটি কথা বলেই শেষ করব “স্বার্থপরতার ভিত্তিতে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার যে অবয়ব আমার কাছে পরিলক্ষিত হচ্ছে তার ফুসফুস খুবই শীঘ্রই যাবে পোকার দখলে”। তাই ভবিষ্যতের পথ বিনির্মাণের জন্য এখনই অতীব প্রয়োজন সামাজিক ব্যবসার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ।
মুহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম
সহকারী অধ্যাপক
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ
উত্তরা, ঢাকা, বাংলাদেশ।
ই-মেইল: mak.rumsc@gmail.com