“বাংলাদেশের নারীর রক্ত, শ্রম, আবেগ এবং সম্ভ্রমের (৯০ শতাংশ বাঙালি নারী সম্ভ্রমে বিশ্বাসী এখনও, এখানে আত্মসম্মানবোধটা বেশি শোভন মনে হয়, তারপরও সম্ভ্রম লিখলাম) বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে”।
এই দেশের দরিদ্র নারী এই দেশেও নিগৃহীত এবং সারা বিশ্বে দরিদ্র অশিক্ষিত অসহায় বাঙালি নারীগণ আরও হাজার গুণ বেশি নিগৃহীত, নিপীড়িত, নির্যাতিত… নারী গাড়ির এবং মোবাইলের মেকানিক হতে পারে, ড্রাইভার হতে পারে, ইলেকট্রিশিয়ান হতে পারে, রাজমিস্ত্রি হতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি সব হতে পারে, তাদেরকে এইসব লাইনে ট্রেইনিং দেন, দেশেই কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করেন। দেশে কাজ আছে বৈকি, নইলে দেশ চলে কীভাবে? দেশে অনেক নার্স দরকার, তাদেরকে নার্সিং এর ট্রেইনিং দিয়ে দেশেই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।
ঢাকার বাইরে থেকে শ্রমিক/ গৃহকর্মি হিসেবে আরব দেশগুলোতে যাওয়ার জন্য যেসব নারী আসেন, তাদেরকে দেখেছেন কখনো? কথা বলেছেন উনাদের সাথে? আমি উনাদেরকে দেখেছি কাছে থেকে, কথা বলেছি। উনারা জানেনই না যে উনাদের উপর কী অমানবিক নির্যাতন নেমে আসতে যাচ্ছে। উনাদেরকে বললেও উনারা বিশ্বাসই করেন না, কারণ উনাদের ধারণার বাইরে এসব। দালালরা, ট্রেইনাররা উনাদেরকে কেবল মিষ্টি কথা, পজিটিভ কথা, সুখ শান্তির গল্পই শুনিয়েছে আর দেখিয়েছে কাড়ি কাড়ি টাকার স্বপ্ন!
উনারা অনেক সিম্পল, উনারা ভাবেন এইখানে যেমন বাসা বাড়িতে রান্না করা, কাপড় ধোয়া, ঘর ঝাড়ু মোছা করা, থালাবাসন মাজা – সেইখানেও তাই, শুধু মানুষ বেশি, ঘর বড় তাই কাজের ভলিউম বেশি এবং তার জন্য তো উনারা দেশের তুলনায় প্রায় ৩/৪ গুণ বেশি টাকা পাবেনই! হায়রে…!!!
তাদেরকে যখন জিজ্ঞেস করলাম – কীভাবে কথা বলবেন ওদের সাথে, ওদের ভাষা তো জানেন না, এতো কাজ কীভাবে করবেন- বড় বাসা অনেক কাজ – কীভাবে পারবেন, ভিন দেশ অপরিচিত সব মানুষ- কীভাবে থাকবেন…? তারা কেউ কেউ হাসে, লজ্জা পায়, কেউ কেউ খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বলে, আবার কেউ কেউ চিন্তিত হয়ে বলে যে সব শিখে নিবে, বাঁচতে হইলে তো ওসব করতেই হবে, কী করবে অভাবের জীবনে, পরিবার সন্তানের দিকে তাকিয়ে ঐ সকল কষ্ট তারা করে ফেলবে, সব শিখে নিবে, মানিয়ে নিবে নিজেকে সবকিছুর সাথে! এই গ্রামীণ নারীরা সত্য শুনলেও বুঝতে পারে না, তাদের মাথায় ধরে না এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা ওখানকার বাস্তবতাই জানে না, স্বপ্ন বুনতে বুনতে যায় এবং ভেঙ্গে চুড়ে খান খান হয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় ফিরে আসেন!
পুরুষ শ্রমিক যখন প্রবাসে কাজে যায় তখন তার সাথেও অন্যায় হয়, কাজের চাপ, কম বেতন, মানবেতর জীবন যাপন, টাকা মাইর যাওয়া – এসব সমস্যা, নিপীড়ন পুরুষের সাথেও হয়, তাদের সাথে যৌন নিপীড়ন হয় বলে এখনও শুনিনি। নারীর ক্ষেত্রে উক্ত নিপীড়নের সাথে যোগ হয় যৌন নিপীড়ন, যার দরুণ দেশে ফিরে আসার পরও নারী শ্রমিকের সম্মানজনক স্বাভাবিক জীবন আর থাকে না।
একজন পুরুষ যখন প্রবাস শ্রমিক জীবন থেকে ফিরে দেশে আসে, তখন তার অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি/অবনতি হতে পারে, কিন্তু সামাজিক/পারিবারিক অবস্থান কিংবা স্ট্যাটাস সাধারণত নিম্নমানের হয় না। কিন্তু একজন নারীর জীবনে ঘরে বাইরে কোথাও কোন সুস্থ স্বাভাবিক জীবন আর অবশিষ্ট থাকে না প্রবাসের শ্রমিক জীবন থেকে দেশে ফেরার পর।
নারী তার সংসারের অভাব ঘুচাতে স্বামী কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের উৎসাহ অনুপ্রেরণা কিংবা চাপে পড়ে বিদেশে যায় গৃহকর্মির কাজ করতে এবং সে তার আয়ের প্রায় সবটুকুই তার পরিবারকে দিয়ে দেয়, আর তার সাথে থাকে লাঞ্ছনা, অপমান, নির্যাতন এবং লাগাতার গণধর্ষণ। দেশে যখন ফেরেন এইসব নারী, তখন তাদেরকে এই সমাজ সংসার আর গ্রহণ করে না, উল্টা নারীর জন্য এখানেও অপেক্ষা করে পারিবারিক ও সামাজিক গঞ্জনা, লাঞ্ছনা, ভর্ৎসনা, তিরস্কার, অপমান, অভাব, নানাবিধ রোগবালাই। নারীর জন্য কোথাওই তার মানে সম্মানজনক স্বস্তির জীবন নাই।
কিন্তু কেন? দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করতে বিদেশে নারীর কর্মসংস্থান একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হতে পারতো যদি নারীবান্ধব নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করে নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশে নির্বিঘ্নে কাজের সুযোগ করে দেয়া যেতো, কিন্তু কোনো চুক্তিরই কোনো নিশ্চিত বাস্তবায়ন এখন পর্যন্ত আমরা দেখতে পাইনি এবং সেই আশাও রাখতে পারি না। সরকার যদি মনে করে এমন ২/১ টা (???) ধর্ষণ-নির্যাতন উপেক্ষা করে রেমিটেন্স বাড়িয়ে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা বৈধ, তবে সেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প আসলে নাই আর।
রেমিটেন্সের লোভে এই দেশের নারীদেরকে জেনে শুনে সৌদি আরবের মতো পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়েন না অনুগ্রহ করে। আমাদের দেশের নারীদের থেকে বিপুল অংকের রেমিটেন্স পাওয়া যায়। পুরুষ শ্রমিকরা তাদের আয়ের ৫০% টাকা দেশে পাঠায়, অথচ নারীরা পাঠায় তাদের আয়ের প্রায় ৯০%। বিশ্বের যেকোনো দেশে পুরুষ শ্রমিক/গৃহকর্মির ইমিগ্রেশনের জন্য যেই পরিমাণ টাকা লাগে, নারী শ্রমিক/গৃহকর্মির জন্য তার চার ভাগের এক ভাগ টাকা লাগে এবং নারী তার আয়ের বৃহদাংশ পাঠায় বাংলাদেশে। সরকারের এইক্ষেত্রে ইনভেস্টমেন্ট কম এবং রিটার্ন বেশি, যার জন্য সব জেনে শুনে সরকার এই দেশের নারীদেরকে শ্রমিক/গৃহকর্মির নাম দিয়ে সৌদিসহ বিভিন্ন দেশের পতিতালয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে…!
মধ্যপ্রাচ্যে এই দেশের নারীরা অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে যায় এবং সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে চুড়ে যায় ধর্ষণ ও নানামুখী নির্যাতনের শিকার হতে হতে। বাসা বাড়িতে কাজ নেয়, অমানষিক পরিশ্রম করে আবার শারীরিক-মানসিক যৌন নির্যাতনের শিকারও হয়!
এসব ঘটনা শুধু সৌদি আরবেই না, আরব আমিরাত, জর্ডান, লেবানন, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে নারী কর্মীরা যাচ্ছে, তার প্রতিটিতেই কমবেশি নিপীড়ন নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। সৌদি আরবের বিরুদ্ধে গৃহকর্মি নির্যাতন নিপীড়নের অভিযোগ সব দেশের গৃহকর্মিদেরই আছে।
সবকিছু জেনে শুনে বাংলাদেশ সরকার কিভাবে নারীদেরকে আরব দেশে কাজের জন্য পাঠায়? কীভাবে আরব দেশে যাওয়ার অনুমতি দেয় এই সরকার নারীদেরকে? তারা বাস্তবতা এবং ঘটনার ভয়াবহতা জানে না? এই দেশ নির্যাতিত হতে পাঠায় নারীদেরকে এবং সেই নির্যাতনের কোন বিচারও হয় না কখনও, কোনো আইনি ব্যবস্থা নাই এসব বিচারের।
বিদেশের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে প্রায় সাত লাখ বাংলাদেশি নারী। জিরো মাইগ্রেশন খরচের কারণে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান, জর্ডান, লেবানন, কুয়েত, মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজে নিযুক্ত হচ্ছেন গ্রামের দরিদ্র পরিবারের অসহায় নারীরা… তাদের পাঠানো রেমিটেন্সে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে। এই দেশের নারীর রক্ত শ্রম এবং সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হচ্ছে, বুঝতে পারতেছেন কিছু? বাংলাদেশ নারী নেতৃত্বের আধার এবং সেই নারী নেতৃগণ বাংলাদেশের নারীর ‘সম্ভ্রমের’ সওদা করতেছে উন্নয়নের খাতিরে! এবং সেই উন্নয়নের খাতিরেই এই নারীদেরকে বিভিন্নরকম যৌন রোগ উপঢৌকন রূপে আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হচ্ছে, এবং সেইসব রোগের কারণেই তাদের মৃত্যুও হচ্ছে নীরবে নিভৃতে!
সৌদি নিয়োগকর্তা যখন তার দেশের রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে গৃহকর্মি চান, তখন তারা সেই এজেন্সিকে প্রয়োজনীয় টাকা দেন… সেই এজেন্সি আবার বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি শ্রমিকের কোন টাকা দেয়ার কথা না, কিন্তু শ্রমিকদের অভিযোগ, বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকাও আদায় করে নেয় দালালরা।
বাস্তবতা হলো, মধ্যস্বত্বভোগী এজেন্সিগুলো টাকার বিনিময়ে শ্রমিকদের ‘বিক্রি’ করে দিচ্ছে। নারী পুরুষ যারা যাচ্ছে আরব দেশগুলোতে কাজের জন্য তারা বেশিরভাগই হতদরিদ্র, তাদের দেয়া টাকাগুলো তাদের সর্বস্ব বেঁচে দেয়া টাকা, কারও থেকে চড়া সুদে লোন করা টাকা… তাদের সহায় সম্বল সব এক অন্ধকার গুহায় তলিয়ে যাচ্ছে তাদের অজান্তেই আর সেই টাকায় মুনাফা লুটছে এই দেশের দালাল শ্রেণি আর নিষ্পেষিত নিপীড়িত নির্যাতিত।
সৌদিতে এই পর্যন্ত যত নারী গেছেন তার প্রায় অর্ধেক সংখ্যক নারী দেশে চলে আসছেন, কেন? কারণ তাদের উপর চলে শারীরিক মানসিক যৌন নির্যাতন নিপীড়ন এবং তাদেরকে যেই বেতনের কথা বলে নেয়া হয়, সেই অংকের বেতন তারা পায় না, আবার কেউ কেউ তো কোন বেতনই পায় না। তাদের কোনো সাপ্তাহিক কিংবা বার্ষিক ছুটি নাই, তাদের নির্দিষ্ট কোন কর্মঘন্টা নাই, কেউ কেউ ঠিকমতো খাবারও পায় না। গৃহকর্মিদের প্রতারিত করে এজেন্সিগুলো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, এজেন্সির অনুমতি ছাড়া নারী পুরুষ কোন শ্রমিকই দেশে ফিরতে পারছে না। এই প্রতিবন্ধকতার ফলে তারা তাদের নির্যাতন নিপীড়নের কথা জানাতেও পারে না প্রকাশ্যে।
এখান থেকে তাদেরকে যেই ট্রেইনিং দেয়া হয়, সেখানে বলা হয় বিপদ দেখলে বাঁচার চেষ্টা করতে… কীভাবে, কী দিয়ে তারা বাঁচার চেষ্টা করবে ঐ হায়েনাদের থেকে? সৌদিতে তো স্বামীর নামে বিচার দিলে উলটা বৌ এর পিটানিও খাইতে হয়, আরও বেশি বহুমুখী নির্যাতনের শিকার হতে হয়। এইসব নারীদের বাঁচার উপায়টা কী আসলে?
গত বছর এপ্রিল মাসে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে যায়। তাদের সুপারিশে বিদেশে পাঠানোর আগে নারীদের কমপক্ষে এক মাস ট্রেইনিং দেওয়া এবং চুক্তির শর্ত সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার কথা, এছাড়া জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে ইস্যু করা স্মার্টকার্ডে বাংলাদেশি ও সৌদি রিক্রুটিং এজেন্সি এবং সৌদি নিয়োগকর্তার বিস্তারিত ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর রাখা, নারী গৃহকর্মিদের পাঠানোর আগে সব তথ্য সম্পর্কে দুতাবাসকে অবহিত করা এবং গৃহকর্মিদের যেকোনো সমস্যায় দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়বদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। তবে এই সুপারিশের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
আতংকগ্রস্ত ভীত নারীরা দুতাবাসের সাহায্য না নিয়ে পালিয়ে চলে যায় সেইফ হোমে, যার ফলে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পায় না, আইনি লড়াই এবং তাদের পাওনা টাকা আদায়ে সমস্যা হয়। কিন্তু তারা কেন দুতাবাসে যায় না? তাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য থাকে না বলেই তারা সঠিক জায়গায় যেতে পারে না, কিংবা কেউ কি কখনো এটা জানার চেষ্টা করেছে যে নির্যাতিত নারীরা কেন দুতাবাসে না গিয়ে সেইফ হোমে চলে যায়?
দুই দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তির দুর্বলতার কারণে অনেক নারী দেশে ফিরতে পারছে না, তাদের পাসপোর্ট নাই, ফেরার টাকা নাই, সৌদি সরকার তাদের ফেরত আসার অনুমতি দিচ্ছে না, তারা বাধ্য সেইফ হোমে থাকছে।
এইসব নারীরা দেশে ফিরে কী করবেন আসলে? তাদের অবস্থান কী হবে? যেই পরিবারের জন্য তারা প্রবাসে কাজ করতে যায়, সেই পরিবার এবং আমাদের সমাজ কি তাদেরকে সসম্মানে গ্রহণ করে? অনেকে তো পরিবার ও সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য তার সাথে হওয়া নির্যাতনের কথা শিকার করেনা তারপরও কি তারা সমাজ ও পরিবারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়? প্রায় সময় খবরের কাগজ এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায় যে তাদের কেউ অন্তঃসত্ত্বা, কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে, কেউ যৌন রোগে আক্রান্ত, কেউ কেউ নিজে থেকেই নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে চায় না, কারণ তারা জেনেই গেছে তাদের পরিবার তাদেরকে আর গ্রহণ করবে না, তারা আর সমাজের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না… এইসব নারীদের পুনর্বাসনের জন্য কোন সরকারি সংস্থা নাই… বেসরকারি কিছু সংস্থা হয়তো কাজ করছে, কিন্তু এইসব নারীদের দায়িত্ব আদতে কেউ নিচ্ছে না। এইসব নারী তাদের ঘর এবং ঘাট সব হারিয়ে চিরন্তন নিঃস্ব হয়ে মরে বেঁচে থাকে আমৃত্যু।
এসব ব্যাপারে সরকারের ভূমিকা প্রধান: নারীদেরকে শ্রমিক এবং গৃহকর্মী হিসেবে বিদেশে পাচার করা, বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে সরকারকে, শিক্ষিত নারী বড় পদে কাজ করতে যাক, রেমিটেন্স পাঠাক – সমস্যা নাই, কিন্তু গ্রামীণ দরিদ্র নারীদেরকে তাদের সারল্য ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে টাকার লোভ দেখিয়ে শ্রমিকের নামে বিদেশী পতিতালয়ে বিক্রি করা বন্ধ করতে হবে, এইসব নারীর সর্বস্ব নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা বন্ধ করতে হবে, দালালগুলোকে ধরে এনে এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া প্রয়োজন যেন কোনো বাঙালি এই নারী পাচারের কথা স্বপ্নেও ভাবতে না পারে।
এই দেশের গ্রামে গঞ্জের নারীদেরকে উক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করতে হবে, সচেতনতা ছড়াতে হবে। নারীদেরকে কারিগরি শিক্ষা দিয়ে দক্ষ কর্মী বানাতে হবে এই দেশে কাজ করার জন্য, বাংলাদেশে তাদের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে… সর্বোপরি আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে সচেতনতার সাথে নারী শ্রমিকের অভিবাসন বন্ধের দাবি তুলে সরকারের এই দেহ ব্যবসা কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।
শামীম আরা নীপা
প্রথম প্রকাশঃ উইমেন চ্যাপ্টার