“ওর নাম ক্যাসিওপিয়া। জালিম বইমেলার কাছে ক্যাসিওপিয়ার খিদার কান্নার কোন দাম নাই। বইমেলা উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সব খাবারের দোকান বন্ধ। সস্তায় খায় যারা তারা খাওয়ার পর উদ্যানের কুকুরগুলারে খাওয়াতো। দুইটা বিস্কুট, কিংবা রুটি কিংবা ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট। সব বন্ধ। জালিমের “জ্ঞানচর্চা” সবকিছু বেদখল করে নিছে নিরাপত্তার নামে। কোথাও একটু খাবার নাই। কোথাও একটু পানি নাই। ক্যাসিওপিয়ারা তাই খিদায় কান্দে। পিপাসায় গলা শুকিয়ে তাই তাদের গলা দিয়া ঠিকমতো স্বর বের হয় না। এই জালিমদের উপর একদিন অভুক্ত পিপাসার্ত ক্যাসিওপিয়াদের অভিশাপ লাগবে। নিশ্চয়ই লাগবে।
আমি এটা কোন সাহায্য বিষয়ক পোস্ট দেই নাই। বইমেলার নামে জ্ঞান চর্চার নামে, নিরাপত্তার নামে মানুষ ও কুকুরের উপর চালানো এই জুলুমটার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছি। আপনেরা কে কি করবেন, করতে চান সেটা আপনাদের বিষয়। আমি সেটা শুনতে আমি আগ্রহী নই। আর উদ্যানের অমেধাবী, অঢাবিয়ান, অরাজনৈতিক, একদম সাধারণ মানুষগুলা, গাজা খাওয়া পোলাপাইন গুলা, নেশা করা পোলাপাইন গুলা, “যাদের দিয়া কিচ্ছু হবে না” তারা যথেষ্ট মমতায় কুকুরগুলারে ভালোবাসে। “

কথাগুুলো নিজের ফেসবুক পোষ্টে ও কমেন্টে লিখেছেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।

বাঙালির প্রাণের বইমেলা! এই প্রাণের বইমেলাকে ঘিরে অতিরঞ্জন এখন প্রাণনাশের আশঙ্কার কারণ হয়ে উঠছে দিনে দিনে। এই প্রাণনাশের আশঙ্কা মানুষের জন্য নয় তবে অনেক মানুষের খুব প্রিয় এক জীব “কুকুর” এর জন্য। স্ট্রিট ডগ গুলোর কোন ধরনের সুব্যবস্থা করার কথা খুব আশ্চর্যজনক ভাবেই কারো মাথায়ই আসে নি! একটা খুব সঙ্গত কিংবা কারো মনেই হতে পারে অসঙ্গত প্রশ্ন, বইমেলা উপলক্ষে কোনরূপ বিকল্প ব্যবস্থা না নিয়ে সেখানকার সস্তার এই খাবারের দোকানগুলো বন্ধ করে দেয়া ঠিক কতটুকু যুক্তিযুক্ত? দেশটা উন্নয়নশীল, তাই এমন হাজার হাজার মানুষ আছে যারা এই সস্তার খাবারের দোকানগুলোর ওপরই নির্ভর করেন। আর এই মানুষগুলোই আসলে এই অবলা প্রাণীগুলোকে ভালোবাসে।

কারণ বিরাট অট্টালিকায় থেকে ক্ষুধার্তের কষ্ট বুঝা যায় না কিন্তু যারা ক্ষুধার যন্ত্রণা বুঝে তারা এই প্রাণীগুলোর জন্য অফুরন্ত ভালোবাসা ধারণ করে। বইমেলার স্থান সম্প্রসারণ প্রয়োজন ছিলো বিধায় করা হয়েছে বেশ ভালো কথা, কিন্তু নিরাপত্তা দেয়ার নামে একরকমভাবে আসলে শ্রমজীবীদের পেটে ” লাথি মারা ” কতটা মানবিক? তার ওপর বইমেলার ভেতরের খাবারের দোকানগুলোর আকাশচুম্বী দাম!

মেলা প্রসঙ্গের অভুক্ত কুকুরের সহায়তায় খাবার নিয়ে মুক্তিফোরামের দুজন সদস্য

মাহাতাব উদ্দিনের লেখাটি নজরে আসার পর মুক্তিফোরাম সংগঠনের পক্ষ হতে তাৎক্ষনিক ভাবে কুকুর গুলোর জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করা হয় এসময় ব্যাক্তিগত ভাবেও কিছু মানুষজনকেও খাবার নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়।
তবে ব্যপারগুলো সাময়িক সমাধান মাত্র, হয়তোবা কেবল নিজেদের সান্তনা দেবার থেকেই করা। পুরো কাঠামোই বদলাতে হবে, আর আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। তবু একদিনে যতটুকু পারি, ততটুকু করতে ইচ্ছে করে, করলাম। আরও অনেক কাজ বাকি আছে।
সাধারনত রাস্তায় পড়ে থাকা কুকুর বিড়ালের মত প্রানীগুলোর প্রতি আমাদের সাধারণের মধ্যেও সেভাবে সচেতনতা তৈরী হয়নি।সরকারি-বেসরকারি নানা সংগঠন যারা এসব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তবে তাদের সক্ষমতাও যথেষ্ট নয়। তাই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সবার ভাবা উচিত বইমেলা, বানিজ্য মেলা সহ বিভিন্ন মাসব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজনের সময় মেলা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তার বিষয়টির পাশাপাশি নিম্ন আয়ের মানুষ ও প্রানীদের বিষয়টিও আয়োজক কতৃপক্ষের ভাবা উচিত।

বইমেলা পাঠক – প্রকাশক – লেখকের মিলনমেলা, একমাসব্যাপী এই বইমেলার জন্য বাঙালি লেখক – পাঠক সমাজ সারাবছর অপেক্ষা করে থাকে। কিন্তু নিরাপত্তার নামে যে প্রহসন হচ্ছে এতে আখেরে ক্ষতি কিন্তু আমাদেরই। নেচার’স জাস্টিজ বলে একটা কথা আছে। প্রাণ-প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করলে প্রকৃতি এর জবাব দেবেই; আর সেই জবাব খুব অপ্রিয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই নিরাপত্তার নামে এই প্রহসনের দ্রুত অবসান ঘটিয়ে বিকল্প ব্যবস্থার ব্যপারে দ্রুত নজর দিতে হবে। আমাদের সংস্কৃতিচর্চা যাতে অপর কারো ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।

মুক্তিফোরামের পক্ষে এই রচনাটি লিখেছেন ইরাবতী চৌধুরী ও আবু রাইহান

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

Leave A Reply