সারা পৃথিবীর দেশ গুলো যখন করোনা মোকাবেলায় চলাচলে নিয়ন্ত্রন আরোপ করছে, কারফিউ , লকডাউন নিয়ে ভাবছে তখন আমরা ঢাকায় ১০ আসনের উপ-নির্বাচন নিয়ে ব্যাস্ত! স্কুল ছুটি দেয়ায় অনেকেই পরিবার নিয়ে বেড়াতে ছুটছেন কক্সবাজার! দল বেঁধে আতসবাজি দেখতে ভিড় করছে রাস্তায়।মোটকথা করোনা বিষয়টা যে কি সেটা নিয়ে আমাদের কোন ধারনাই নেই।
নির্বাচন কমিশন বলছে হাত ধুয়ে ভোট দিতে! কোথাও আবার বিশাল মিলাদ মাহফিল হচ্ছে ! বেশ কিছু স্থানে মৌসুমি মেলা ও চলছে।
অন্যদিকে প্রবাস ফেরত লোকজনকে হোম কোয়ারেন্টাইন এর বিষয়টি সঠিক ভাবে গুরুত্বসহকারে না বোঝানোয় তারা দেশে ফিরেই সমাজের সাথে মিশে যাচ্ছেন। সরকারের উচিত প্রবাসীদের শতভাগ কোয়ারেন্টাইন এ রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
আজকে দেশের অনেককে দেখলাম মসজিদে গিয়ে জুম্মার নামাজ পড়ে যারা নামাজে যান নি মোটামুটি তাদের নিয়ে উপহাস করছেন। মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ায় কোন অসুবিধা নেই। তবে বর্তমান পরিস্থতিতে এটা বোকামি ছাড়া কিছুই না, আর গণমাধ্যমে অবিবেচকের মত সেটাকে শেয়ার করার মানে, যে সব মানুষ তাদেরকে অনুসরন করে তাদের জন্যও বিপদের।
আর আসলে মসজিদ মন্দির গির্জা বন্ধের কিছু না বিষয়টা হচ্ছে জনসমাগম। মসজিদ মন্দির গির্জা ছাড়াও যে কোন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, বাণিজ্য মেলা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, গার্মেন্টস, মিল-ফ্যাক্টরি, গণ-পরিবহন অর্থাৎ যেখানে অধিক লোকের সমাগম সেখানেই করোনার ঝুঁকি। কারন প্রবাসফেরত যে কেউ যদি এইসব স্থানে ভিড়ের ভেতর করোনা জীবাণু নিয়ে ঢুকে পড়েন তবে সেটি খুব দ্রুত অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এবং ফলাফল হয় ভয়াবহ।
আমি একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী। মালয়েশিয়াতে করোনা আক্রান্ত প্রথম রোগী ধরা পড়ে ২৫ জানুয়ারি তার পরের তিন সপ্তাহেও সংখ্যাটা ১৫-২০ জনের মধ্যে ছিল।
২৭ ফেব্রুয়ারি এখানে তাবলীগ জামাতের একটি ৪ দিন ব্যাপি অনুষ্ঠান হয় যেখানে বিভিন্ন দেশ ও সারা মালয়েশিয়া হতে প্রায় ১৬৫০০ জন মানুষ অংশগ্রহন করে এবং তার পর পরই মূলত সেই সম্মেলন হতে সারা মালয়েশিয়াতে করোনা ছড়িয়ে পড়ে কারন সম্মেলনে আগতদের মাঝে ছিল করোনা আক্রান্ত বাক্তিও। আজকে(২০ মার্চ) আমাদের এখানে রোগীর সংখ্যা ১০৩০ জন। প্রতিদিন ১০০ জন এর বেশি নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। সর্বশেষ গত পরশু ১৮ই মার্চ, তারিখ হতে সারাদেশ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। আজ আমরা জুম্মার নামাজে যেতে পারিনি বাসায় জোহরের নামাজ পড়তে হয়েছে। একবার ভেবে দেখেছেন কেন আজ আমরা বাসায়?
ঠিক একই রকম ঘটনা ঘটে দক্ষিন কোরিয়াতে একটি গীর্জা হতে সমগ্র কোরিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে করোনা।
তাই বলবো আতঙ্কিত না হয়ে, নিজে সচেতন হোন, পাশের মানুষ গুলোকে সচেতন করুন। শুধু মসজিদ মন্দির গীর্জা নয় হাট বাজার, জনসভা সহ সকল জনসমাগম হতে দূরে থাকুন। কারন করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সচেতনতা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।
দুটি ঘটনার সংবাদের লিংক দিয়ে দিলাম।
Malaysia: How Sri Petaling tabligh became Southeast Asia’s Covid-19 hotspot .
South Korea: How novel coronavirus spread through the Shincheonji religious group in South Korea.
https://edition.cnn.com/2020/02/26/asia/shincheonji-south-korea-hnk-intl/index.html
রাইহান, মুক্তিফোরামের একজন সম্পাদক।