করোনা ভাইরাস (COVID-19) এর সর্বপ্রথম রোগী সনাক্ত হয় চিনের হুবেই প্রদেশে ১৭ই নভেম্বর ২০১৯ তারিখে। এরপর অল্প কিছুদিনেই তা মহামারীর রূপ নেয় চিনে। যখন পুরো বিশ্ব এটি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো তখন আমার দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মহোদয় কিসে ব্যাস্ত ছিলেন তা আমাদের সবারই কম বেশি জানা। বার বার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বলেছে “আমরা প্রস্তুত আছি করোনা মোকাবেলার জন্যে” এবং আমরা দেশের জনগন তাদের কথায় বিশ্বাস করে আজকে করোনার ভয়াবহতার সম্মুখীন হয়েছি। এক পরিসংখানে দেখলাম দেশে প্রবাসী এসেছেন লাখেরো বেশি কিন্তু কোয়রেনটিনে মাত্র ৩ হাজার বিদেশ ফেরত নাগরিক কে রাখা হয়। আমার প্রশ্ন বাকিদের তাহলে কি হলো? কোন আলাদিনের চেরাগের সাহাজ্যে জানা গেলো তারা সবাই সুস্থ আছেন? আমাদের টাকা পয়সা নিয়ে রসিকতা হয়েছে অনেক আগেই এখন আমাদের জীবন নিয়েও রসিকতা হচ্ছে।
আসলে আমরা বাংলাদেশের মানুষ কথা বলা ভুলে গেছি । মজার ব্যাপার হচ্ছে আমরা কিছুদিন পর সবাই কথা বলবো যখন রাস্তায় লাশ পরে থাকবে ,বাতাসে লাশের গন্ধ থাকবে, ঘরে খাবার থাকবে না, ব্যাংকে টাকা থাকবে না, কাছের মানুষটার লাশটিও যখন দেখতে পাবো না তখন আমরা কথা বলবো । আসলে তখন বলে কি লাভ হবে? আমরা আমাদের নিরব থাকার ফল দেখছি, সমানে আরও দেখবো এটাও সুঃনিশ্চিত । আমি অবাক হয়ে যাই যখন দেখি যুক্তরাষ্ট্র , ইতালি , চিনের মতো দেশ এই ভাইরাসের সাথে পেরে উঠতে হিমসিম খাচ্ছে ঠিক সেই সময় আমার দেশের সেতুমন্রী বলছেন “আমরা করোনার থেকেও শক্তিশালি” স্বাস্থ্যমন্ত্রী PPE কে PPP বলছেন। তারা কতোটুকু এই ভাইরাস নিয়ে ভেবেছেন বা জানার চেষ্টা করেছেন আগে? তা তাদের এই ধরনের মন্তব্য দেখলে আমরা বুঝতে পারি।
যারা আজ হাজার হাজার কোটি টাকা সুইস ব্যংকে রেখেছেন তাদেরও তো পালানোর কোন উপায় নেই। কতোটা ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্ঠী হয়েছে। দেশের পোষাক শ্রমিকদের একবার কাজে ফেরত আরেকবার ছুটি দেওয়ার রসিকতার গল্পটাও আমাদের সবার জানা । জাতিসংঘ তাদের এক পরিসংখানে বলেছে বাংলাদেশে ২০ লক্ষ্য মানুষ করোনায় প্রান হারাতে পারেন। জ্বী ২০ লক্ষ্য আপনি ঠিকই দেখছেন । আমরা যারা কথা বলি বা লেখার চেষ্টা করি আপনারা কি জানেন আপনাদের নিরব থাকাটা কতোটা ব্যাথিত করে আমাদের? কিন্তু তাও আপনারা চুপ থাকবেন , প্রান হারাবেন অব্যবস্থাপনার জন্যে কিন্তু কেউ টু শব্দটাও করবেন না। এই দেশের মানুষের যেই ইতিহাস শুনেছি আজ তা সত্যিই রূপকথার গল্প মনে হয়। আমি জাতির পিতার জীবন থেকে কথা বলার শিক্ষা নিয়েছি তাই ,আমি কথা বলবো!!
এই সময়ে এসে এখনও অনেক ব্যার্থতা লক্ষ্য করছি আমরা। আমি যদি প্রশ্ন করি বাংলাদেশের প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো করোনা রোগীকে চিকিৎসা প্রদান ও করোনা ভাইরাস সনাক্তের টেস্ট করার অনুমতি কেন পাচ্ছে না? তাহলে কি ভুল হবে? কিন্তু দেখছি ৫০০০ বেড হাসপাতাল নির্মাণ হচ্ছে নতুন করে। কয়েকটা হটলাইন নাম্বরে কিভাবে ১৭ কোটি মানুষকে সেবা দিবে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ? এখনও কেন ওয়ার্ড ভিত্তিক হটলাইন সেবা চালু করা হলো না? যেখানে পুরো বিশ্বে একটাই কথা “টেস্ট, টেস্ট, টেস্ট” আর আমরা পর্যাপ্ত টেস্ট কিটই সংরক্ষন করতে পারি নাই। এই মুহূর্তে সৃষ্টিকর্তাই আমার একমাত্র ভরসা । কোন এক জয়গায় পড়েছিলাম “Every nation gets the government they deserve” আজকে আমি বলতে পারি কথাটা আমার দেশের জন্যে ঠিক । আমরা তো কখনোই এক হতে পারি নাই , আমরা কোনদিন সবাই একসাথে কোন ভুল কিছুর প্রতিবাদ করি নাই । এই করোনার এভাবে ছরিয়ে পরার পিছনের আমাদের নিরবতার ভূমিকা অনেক।