এক সঙ্গে এর আগে এত মানুষ একই রোগে আক্রান্ত হয়েছে ইতিহাসে তার নজির বিরল, ৮ই ডিসেম্বর চীনে সর্বপ্রথম করোনা’র উপসর্গ দেখা যায়, ৩১ ডিসেম্বর WHO(World Health Organization) এর কাছে তথ্য আসে, সম্পূর্ণ নতুন বলে একে ‘নভেল করোনাভাইরাস’ কোভিড -১৯ বলা হয়।
ইতিমধ্যে ‘পেশেন্ট জিরো ‘ চিহ্নিত করেছে চীনা প্রশাসন, কিন্তু এই জিরো পেশেন্ট মহিলাটিকে যদি আরো আগে চিহ্নিত করা যেত তাহলে এই ভাইরাস বিশ্বকে থাবা দিতে পারতোনা। নজিরবিহীন ঘটনা হলো ‘জিরো পেশেন্ট ‘ সুস্থ হয়েছে তবুও চীনে প্রায় চার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু বিশ্বকে লন্ডভন্ড করছে করোনা ভাইরাস, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, ও স্পেনের মতো শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর হারে তটস্থ মানবজাতি।
বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত প্রায় সাড়ে ১৬ লক্ষ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ১ লক্ষের বেশি। বিশ্ব এ রোগ প্রতিরোধে পূর্ব প্রস্তুতিসহ সাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা, জাতীয় দূর্যোগ ঘোষনা সহ বিরল প্রতিক্রিয়া দেখালেও বৈশ্বিক মহামারী জানার পরও বাংলাদেশ মুজিব বর্ষের অনুষ্ঠান পরিকল্পনার মধ্যেই ছিলো। নীতি নির্ধারকরা প্রয়োজনীয় প্রো-এক্টিভ ব্যবস্থাসহ কথা বার্তায় উদাসীনতা দেখিয়েছে! আমরা মানবজাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ও বৈশ্বিক চেতনায় সম্পৃক্ত হতে পারিনি
৮ ই মার্চে ৩ জনের করোনা সনাক্তের মাধ্যমে মুজিব বর্ষের প্রোগ্রাম স্থগিত ঘোষণা করে অন্তত সমালোচকদের ( যারা বলেছেন করোনার খবর সরকার লুকাচ্ছে) জবাব দিয়েছেন সরকার। কিন্তু বরাবরের মতোই ঢিলেঢালা সিদ্ধান্ত লক্ষ করা গেছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে- টেস্ট কিট, পিপিই, আইসিইউ, ভেন্টিলেটর… ইত্যাদি দেরি হওয়ার কারনে এ যুদ্ধের সম্মুখ শ্রেণির যোদ্ধা ডাক্তাররা পিছু হটেছেন এটা শুধু নৈতিক প্রশ্নই না বরং রাষ্ট্রের স্বাস্থ বিষয়ক ব্যর্থতারই পরিচয়।কারন WHO বৈশ্বিক মহামারী ঘোষনার পরও বাংলাদেশ প্রয়োজনীয়( কয়েক লাখ প্রবাসী প্রবেশ, আক্রান্ত দেশগুলোর সাথে বিমান চলাচল, চিকিৎসা রিজেন্টস আমদানি, সেবার ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ) পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
অবাক করার বিষয় হচ্ছে সরকার ছুটি ঘোষনা করে লকডাউন না করে শহরবাসীদের গ্রামে যাওয়ার অবাধ সুযোগ দিলেন। কারখানা খোলা রেখে এবং একপর্যায়ে শ্রমিকদের বিনা বেতনে ছুটি দিয়ে ঢাকার বাহিরে পাঠিয়ে আবার পায়ে হাঁটিয়ে ঢাকায় এনে নতুনকরে ছুটি বৃদ্ধি করে এবং গ্রামে পাঠিয়ে যা করা হলো তার খেসারত সবাইকে দিতে হবে।
গ্রামে যতই নো টেস্ট, নো করোনা থাকুক! এরপেও বাংলাদেশে ক্রমেই করোনা সংক্রমনের আক্রমণ বেড়ে চলছে। প্রায়ইতো শোনা যায় গ্রামের লোকজন করোনা নিয়ে সিরিয়াস না। কিন্তু গ্রামের যেসব এলাকায় করোনা সনাক্ত হয়েছে সেসব এলাকায় উল্টো লোকজন নিজেরাই বাঁশ ফেলে লকডাউন করে রাখছেন। এ থেকে বোঝা যায় মানুষ যদি প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হয় তাহলে শুধু সাধারনেরই নয় বরং নীতি নির্ধারকেরও টনক নড়ে। যেমন তারাও এখন হাস্যকর বক্তব্য ছেড়ে সিরিয়াস হয়েছে।
তথ্যের অবাধ প্রবাহ থাকলে আরো সচেতনতা তৈরি হতো শুরু থেকেই তথ্য গোপনের অভিযোগ ছিল। শুধু শহরেই নয় গ্রামেও টেস্টের ব্যবস্থা হলে টনক আরো বেশি নড়তে পারে একটু দেরিতে হলেও। লকডাউনের নির্দেশ দিয়ে খাদ্যের নিশ্চয়তা না দিলে কার্যত লকডাউন হয় না ! এটা বোঝার জন্য ইংরেজিতে পড়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হতে হয় না। করোনা ভাইরাস সামনে যাকে পাবে তাকেই আক্রান্ত করবে ঠিকই কিন্তু করোনায় মৃত্যুর মিছিল ধনীদের চাইতে গরীবের সংখ্যাই বেশি হবে। কারন- এদের দারিদ্র্য, লাইফ স্টাইল, পরিবেশ, খাদ্যাভাস এবং ক্ষুধার সাথে সংগ্রাম ইত্যাদির ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকে বেসিক চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত থাকার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর বেশির ভাগ অসুস্থ ছিল।
শেষ কথা – দিনমজুর,শ্রমজীবী মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ। এরা করোনা ভাইরাস উপেক্ষা করে ত্রাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টায় হন্যে হয়ে সামাজিক দুরত্ব বর্জায় রাখার চিহ্নে নিজে না দাড়িয়ে স্যান্ডেল রেখে নিজেরা জড়ো হয়, ক্যামেরার সামনে মাস্ক পড়ে, ত্রাতারাও দলবদ্ধ ছবি তুলে রাজনীতি করে কম্যুনিটিকে আরো ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আর মধ্যবিত্ত ক্ষুধার্ত পরিবারগুলো আত্মসম্মান বোধের কারনে ছবি তুলে এমন ত্রাতাদের কাছে আত্মা সম্মানকে সমর্পণ করেনা। আমাদের দেশের ছুটির মেয়াদ অন্যান্য দেশগুলোর লকডাউনের মতো বৃদ্ধি করাটা স্বাভাবিক কিন্তু ঘরে ঘরে খাদ্য পৌঁছানে সরকার পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি হবে অস্বাভাবিক। ছুটি দিয়ে লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর হয়না, লকডাউন দিয়ে পদক্ষেপ নিতে হয়। ক্ষুধার যন্ত্রণা বাড়লে করোনার লকডাউন ভাঙতে সময় লাগবেনা। গণমাধ্যমে দেখলাম সামাজিক দুরত্ব বর্জায় রেখে আন্দোলনও হচ্ছে। কাজেই গণরেশনিং চালু নাহলে, করোনা যন্ত্রণায় ক্ষুধার বিদ্রোহ নির্মম হবে!
জাসেম আলম মুক্তিফোরামের একজন সংগঠক