বাংলাদেশ। আমার ভালবাসা,বিশ্বাস আর নিঃশ্বাসের জায়গা। প্রবাসে থাকলেও প্রতিমুহূর্তে সোঁদা মাটির গন্ধ,বিল,ঝিল,হাওড়,বাঁওড়ের নিমিখ পানে ছুটে চলা এক দুরন্ত শৈশব , কৈশোরের স্মৃতি প্রতি রাতে একবার মনে করে ঘুমাই।কারন একটাই যেদেশ আমায় এত দিল তাঁর ঋণের বোঝা বইবার সক্ষমতা অর্জন। কিছু লিখে বা তথ্য দিয়ে ঋনশোধের বৃথা প্রয়াস। আমরা প্রাইশই শুনি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অনিয়ম, আন্দোলন ,দুর্নীতি নৈতিকতার স্খলন ইত্যাদি ইত্যাদি। তাঁর বিচার বা শাস্তি নাম সর্বস্য, জেল জরিমানা তারপর আবার যে লাউ সেই কদু। কিন্তু এটা ভেবে দেখিনা একটা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জবাবদিহিতার জায়গাটা কেন নেই,কেনই বা সাধারন ছাত্র ছাত্রীদের বারবার আন্দলনে নামতে হয়।
আমি সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত প্রথম পাঁচটা দেশের কথা বলি ডেনমার্ক, নিউজ ল্যান্ড, ফিনল্যান্ড , সুইডেন, সুইজারল্যান্ড। গতরাতে ইন্টারনেট এর কল্যানে আমি একটা কলাম পড়লাম সেখানে স্পষ্ট ডেনমার্ক কম দুর্নীতি গ্রস্ত হওয়ার কারন ঠিক এভাবে লেখা :
“Integrity in politics is key to fighting against corruption and here Denmark takes the lead once again. The higher rank is wastly due to Denmark’s high degree of press freedom, access to information about public expenditure, stronger standards of integrity for public officials, and independent judicial systems.”
কথাটা থেকে একদম স্পষ্ট সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, জনসাধারণের ব্যয় সম্পর্কিত তথ্য প্রণয়ন, সরকারী কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার শক্তিশালী মান এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ কতটা জরুরী। দিনের পর দিন এই জায়গা গুলো তিমির থেকে আরও তিমিরে ধাবমান।
আমরা সাধারনত ফেসবুকে ছবি,ভিডিও খাওয়া দাওয়া এসব নিয়ে ব্যাস্ত অথচ গুগল তথ্য ভাণ্ডারে কত সুন্দর তথ্য পড়ে আছে তাঁর কজনই বা খোঁজ রাখে। তাঁর আগে আর একটু বলি, যারা প্রযুক্তি দেখে এখন ও নাক সিটকায়, যারা এখন আজকের পৃথিবীর সাথে এখনও মানিয়ে নিতে চাচ্ছেনা বা পারছে না তাদেরকে আর কোন বিকল্প পথ খোঁজার সময় বা পথ আর আছে বলে মনে হয়না। কারন আমি এখন যে তথ্য টা দিতে যাচ্ছি,সেটা এই প্রযুক্তির উপরে ভিত্তি করেই দাঁড়িয়েছে। আজকের পৃথিবীর প্রথম পাঁচটা শক্তিশালী অর্থনীতিক দেশ হচ্ছে USA,CHINA,JAPAN,GERMANY,UNITED KINGDOM. কি কারনে এরা এই শক্তিশালী ভিতটা করেছে? শুধুই কি অন্য দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে?না। উত্তর একটাই প্রযুক্তি। এই লাইন টা পড়েন সবাইঃ
Germany does a better job on innovation in areas as diverse as sustainable energy systems, molecular biotech, lasers, and experimental software engineering. Indeed, as part of an effort to learn from Germany about effective innovation, U.S. states have encouraged the Fraunhofer Society, a German applied-science think tank, to set up no fewer than seven institutes in America. (Reference Harvard Business Review).
প্রযুক্তি বিপ্লব অনেক আগেই ঘটে গেছে যা আমরা এখনও বুঝে উঠতে পারছিনা। অথচ চীন আমাদের দেশ থেকে বেশি দূরে না। ট্রাম্প সাহেব কেন এদের গলাচেপে ধরেছে জানেন? কারন চীন innovation আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে যা নিকট ভবিষ্যৎ এ আমেরিকা কে টপকে যেতে পারে এজন্য তারা খুব উদ্বিগ্ন। আমরা খুদে দেশ। নেই কোন innovation নেই কোন ভাল দক্ষ মানব সম্পদ , আছে যতটুকু খুব কষ্ট সয়ে, আর যা আছে সবাই বাধ্য হয়ে বাইরে চলে যায়। কারন একটাই কাজের স্কোপই তো নাই, নাই কোন implementation এর ভাল সুযোগ। বাকীরা একটা সরকারী সেবক বা ব্যাংক এ চাকরি করে আরাম আয়েশে জীবন শেষ। এই তো , আর কি।
পোশাক শিল্প আমাদের একমাত্র ভরসার জায়গা কিন্তু অবস্থা দৃষ্টে দেখে মনে হচ্ছে ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া, এমনকি ফিলিপিন,ইন্দনেশিয়া যেভাবে কম টাকায় বড় বড় অর্ডার নিচ্ছে তাতে এই খাতের অবস্থা কেমন হবে অনুমেয়। ইতিমধ্যে অনেক কারখানা কর্মী ছাটাই করছে।তাই আমার দুশ্চিন্তা উপরতলার চাকুরীজীবী বা ব্যাবসয়ীদের নিয়ে না, তাদের নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন যারা বিএ, অনার্স পাশ করে বসে আছে, সেইসব বাবা মা দের নিয়ে যারা শতকষ্ট করে সংসারের ঘানি টেনে যাচ্ছে অথচ অর্থনৈতিক দৈন্যতা কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছে না।
আমাদের এখনি সময় একটা fusion ঘটানোর। আমরা এখন ও ইন্ডিয়ার চন্দ্রজান নিয়ে হাসি ঠাট্টা করি,কিছুদিন পর পর সেফুদা কিংবা তাহিরি এগুলো নিয়ে পড়ে থাকি অথচ সেই একি সময়ে হয়ত কোন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে রিসার্চ হয় ,আমরা যখন চাকরির আশায় কোন গাইড মুখস্ত করি ঠিক তখন ১২ বছরের কোন একটা কিশোর প্রোগ্রামিং এ বুদ হয়ে বসে থাকে, আমরা যখন পাড়ার দোকানে বন্ধুরা মিলে আড্ডা মারি ঠিক সেই একি সময়ে অন্য় কোথাও বন্ধুরা মিলে একটা ব্যবসা করার মিটিং করে। আজকের গুগল, ফেসবুক,মাইক্রোসফট, অ্যামাজন এর মত বড় কোম্পানি গুলো বেড়ে ওঠার পিছনের গল্প এরকমি। কয়েকজন বন্ধুর গল্প।
আমাদের এখনও সময় আছে শিল্পের ধারা পরিবর্তন হচ্ছে,প্রযুক্তি পরিবর্তন হচ্ছে। দেশে বসে প্রবাসীদের রেমিটেন্স আর সাধারন মানুষের থেকে কর আদায় করে জিডিপি হিসাব না করে এখন মাস্টার প্লান করার সময় এসেছে। দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে আর ভাল ভাল জায়গায় কিছু উপযুক্ত মানুষ বসিয়ে দেশটাকে আগত তিমিরের অন্ধকার থেকে বাঁচানও খুব জরুরী , এই তিমির সবাই দেখতে পায়না এটা দেখতে গেলে অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা সব জায়গাতে দক্ষ,সৎ মানব সম্পদ নিয়োগ জরুরী । প্রতিবছর সরকারের অঙ্গ সংগঠন গড়তে, নেতা-নেত্রী ঠিক করতে যে পরিমান মিটিং করা হয় তাঁর ১০% যদি বিজ্ঞানী,অর্থনীতিবিদ,শিক্ষাবিদ, রিসার্চার, নামকরা ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ারদের কে নিয়ে মিটিং করা যেত তাহলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসত। তা না হলে one man show দিয়ে কখনও knowledge inflation or fusion হবে না এবং টেকসই উন্নয়ন কখনই সম্ভব না। আমরা যে তিমির সেই তিমিরেই রয়ে যাব।
লেখকঃ টমাস রায় জুম এনার্জি জাপানের একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী