“এক শেখের বেটির কারণে হাজার বাপের বেটি নিরাপদ ছিলো”- কথাটি সত্যি কিনা একটু পরিসংখ্যান দিয়ে দেখা যাক।
খুব মনোযোগ দিয়ে ফিলিপাইনের এক্স প্রেসিডেন্টের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত কর্তৃক অ্যারেস্ট ওয়ারেন্টের প্রেক্ষিতে তার গ্রেফতার নিয়ে পড়ছিলাম। তখন এই পোস্টটা চোখে পড়লো। ইনিয়ে বিনিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই ফেসবুকে এই টাইপের পোস্ট দেখছি। ফেসবুক এক্টিভিজম বাদ দিয়েছি বহুদিন হলো কিন্ত আজকে কিছু কথা না লিখলেই না।
প্রথমেই বলি ইন্টেরিম গভর্নমেন্টকে ডিফেন্ড করা আমার উদ্দেশ্য ও কর্তব্য কোনোটাই না। জুলাইয়ের পরে ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো ক্রেডিট ফাইটে কখনো আমি জড়াই নাই। বরং আমি ডেইলি এই সরকারের ক্রিটিসিজম করি (প্রমাণ আপনারা GHRD পেজ ভিজিট করলেই পাবেন)। এছাড়াও আপনারা উপদেষ্টাদের/সমন্বয়কদের নিয়ে যেই মিমগুলা বানান সেগুলোতেও আমি হাহা রিঅ্যাক্ট দিয়ে পাশে থাকি।
এখন আসি মূল কথায়। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের যেই পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে পোস্ট করছেন, তাদের ডাটাবেস থেকেই লিখছি—
২০২৩ সালে রেপ কেস ৫৭৪ টি (হত্যা ৩৩, সুইসাইড ৫), সেক্সচুয়াল হ্যারাসমেন্ট ১৪২ আর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স ৫০৭ টি (হত্যা ২৯২, সুইসাইড ১৪২)।
২০২৪ সালে রেপ কেস ৪০১ টি (হত্যা ৩৪, সুইসাইড ৭), সেক্সচুয়াল হ্যারাসমেন্ট ১৬৬ আর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স ৫২৩ টি (হত্যা ২৭৮, সুইসাইড ১৭৪)।
২০২৪ এর হিসাবটা আরেকটু ভেঙে দেখা যাক—
জানুয়ারি ২০২৪ থেকে জুন ২০২৪
রেপ ২৫০
জুলাই ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪
রেপ ১৫১
এখন আসি ২০২৫ এর ২ মাসের হিসাবে—
জানুয়ারি মাসে রেপ ৩৯ টি (হত্যা ৩, সুইসাইড ১), সেক্সচুয়াল হ্যারাসমেন্ট ১১ আর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স ৪০ টি (হত্যা ২১, সুইসাইড ১৩)।
এবং ফেব্রুয়ারিতে রেপ ৪৬ টি (হত্যা ১, সুইসাইড ০), সেক্সচুয়াল হ্যারাসমেন্ট ৯ আর ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স ৪৫ টি (হত্যা ২১, সুইসাইড ১৩)।
এখন যদি ১২ মাসের মধ্যে মাসিক গড় বের করি—
২০২৩ এ গড়ে প্রতি মাসে রেপ ৪৮ টি
২০২৪ এ গড়ে প্রতি মাসে রেপ হাসিনা আমলে গড়ে ৪২ টি আর ইন্টেরিম গভর্নমেন্ট এর আমলে ২৫ টি।
আর ২০২৫ এ গড়ে এখন পর্যন্ত গড়ে ৪২ টি। অর্থাৎ হাসিনা আমলের গত বছরের এক্সাক্টলি সমান। তবে হিসাবের পরিধি যদি আরেকটু বাড়াই—
২০২০ এ রেপ ১৬২৭ টি, গড়ে প্রতিমাসে ১৩৬!
২০২১ এ রেপ ১৩২১ টি, গড়ে প্রতিমাসে ১১০!
২০২২ এ রেপ ৯৩৬ টি, গড়ে প্রতিমাসে ৭৮!
হাতে সময় থাকলে গ্রাফ চার্ট দিয়েও সহজে দেখাইতাম বাট নেভারদিলেস।
অবশ্যই আমরা চাই এই সংখ্যা কমে আসুক, না হলে আগের সরকার আর এই সরকারের মধ্যে অন্তত এই সেক্টরে তফাৎ কি রইলো। ক্রিটিসাইস করবেন না কেন, অবশ্যই করবেন। ৯৯৯ ফোন ধরে না, ল এনফোর্সমেন্টের উপর মানুষ আস্থা হারাচ্ছে অ্যান্ড সো অন। কিন্ত এরকম ফ্যাক্টরস কি আগেও ছিল না? ছাত্রলীগ জড়িত শুনলেই ফাইল ক্লোজড, স্বামীকে জেলের ভেতর মারার ভয় দেখায় ল এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির অফিসার দারা স্ত্রীকে ধর্ষণ, কেস ফাইল করলে তা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়, হুমকি ধামকি—সবই তো ছিল।
আবেগী মানুষদের এইসব পোস্ট করতে দেখলে গায়ে লাগে না। কষ্ট হয় যখন দেখি জ্ঞানবুদ্ধি সম্পন্ন “ডিগ্রীধারী” মানুষজন এগুলো লিখে লাভ রিঅ্যাক্ট করে। ভাই ঠিক আছে আপনাদের ফ্যামিলি আওয়ামী রাজনীতির সাথে ছিলো, আপনারা নিজেরাও অনেক স্বপ্ন দেখছেন ঐ দুর্নীতির টাকায় বিদেশ যাবেন, দেশে হোটেলের ব্যবসা দিবেন, ঐ কানেকশনে পলিটিকাল স্কলারশিপগুলা বাগাবেন।
আপত্তি নাই আমার কিন্ত সাদাকে সাদা কালোকে কালো তো বলতে শিখেন? আগের কালে নিজ দলের ক্রিটিসাইজ করেন নাই, কিন্ত এখন যখন তথ্য-প্রমাণ সামনে আসতেছে, এখন তো স্বীকার করতে পারেন?
হয় আপনারা তখন আপা প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কানের পর্দা বন্ধ করে রাখছিলেন আর না হয় এখন এগুলো দেখেও না দেখার ভান করেছেন। সুশীল হইলে পুরাপুরি সুশীল হন, সিলেক্টিভ সুশীল হইয়েন না।
দুর্নীতি কোথায় নাই? আছে ছিলো থাকবে। কিন্তু জবাবদিহিতা থাকতে হবে। এই যে এখন কীবোর্ডের ডিলিট বাটন না চেপে লিখতে পারি এই স্বাধীনতা থাকতে হবে। এই যে প্রত্যেকদিন সরকারের একেকটা ব্যর্থতা নিয়ে লেখার জন্য ছাত্রলীগ আমাকে পেটাবে না বা পুলিশ আমাকে তুলে নিয়ে যাবে না সেই নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
পার্থক্য হইলো কেউ সঙ্কটে কুমড়া দিয়ে বেগুনি বানায় খাইতে বলে আর কেউ নীরবে হাজার ক্রিটিসিজমের মধ্যে কাজ করতে পারে।
আমি চাই ধর্ষণমুক্ত একটা দেশ, যেখানে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলায় সুরক্ষিতভাবে সম্মানের সাথে বাংলাদেশকে আগায় নিয়ে যাবে। কিন্ত এখনো যদি বলেন “আগেই ভালো ছিলাম” তাহলে বাধ্য হয়ে বলতেই হয় যে শুধু আপনি বা আপনারা আপনাদের এফিলিয়েশন এর জন্য নিরাপদে ছিলেন কিন্ত আমার অতিসাধারণ মা-বোনরা তখনও নিরাপদে ছিলো না আর এখনো পুরোপুরি নিরাপদে নেই।
এক্সটার্নাল ফ্যাক্টরস এর হিসাব বাদ দিচ্ছি। আমার ব্যক্তিগত মতামত কোনো একটা ঘটনাও স্বাভাবিক না। আমি চাই ধর্ষণমুক্ত একটা দেশ, যেখানে নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলায় সুরক্ষিতভাবে সম্মানের সাথে বাংলাদেশকে আগায় নিয়ে যাবে। কিন্ত এখনো যদি বলেন “আগেই ভালো ছিলাম” তাহলে বাধ্য হয়ে বলতেই হয় যে শুধু আপনি বা আপনারা আপনাদের এফিলিয়েশন এর জন্য নিরাপদে ছিলেন কিন্ত আমার অতিসাধারণ মা-বোনরা তখনও নিরাপদে ছিলো না আর এখনো পুরোপুরি নিরাপদে নেই।
আসেন সবার জন্য ভাবি।এই দেশটা কারো বাপের না।
ফাহিম আবরার আবিদ একজন ইরাসমাস মুন্দুস স্কলার এবং আইন বিষয়ক গবেষক
Leave A Reply