পিএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করার কারনে পাঁচ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অনেক সমস্যা তো আছে বটেই তবে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পরীক্ষায় অবতীর্ন হতে বাধ্য করা সবচেয়ে বড় সমস্যা গুলির অন্যতম। যে কোন দেশে আপনি অতি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিলে সেই দেশের শিক্ষার মানের অবনতি হওয়া অনিবার্য। শুনতে খুব অবাক লাগছে? নিয়মিত পরীক্ষা নেওয়াতো একটি ভালো শিক্ষা ব্যবস্থার অংশবিশেষ, তাই না? মোটেও না।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক শিক্ষা ব্যবস্থার মান নির্ণয় করার অন্যতম গ্রহণযোগ্য মাপকাঠির একটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক পিসা পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় ফিনল্যান্ড দেশটি বরাবরই তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে থাকতো। এই নিয়ে ফিনিশ শিক্ষা মন্ত্রনালয় বেশ চিন্তিত হয়ে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সকল পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিলো। এখন তারা বরাবরই এই পরীক্ষায় প্রথম সারির দেশ হিসেবে অবতীর্ন হয়। শিক্ষার মান উন্নয়নের হারের দিক থেকে পিসা পরীক্ষার ইতিহাসে ফিনল্যান্ড একটি উজ্জ্বল প্রতীক।
অনেক আগে থেকেই আমার প্রিয় চলচিত্রের একটি হচ্ছে আমির খানের হিন্দি ছবি থ্রী ইডিয়টস। ওই ছবিতে আমির খান তার শিক্ষককে একবার বলে ওঠে, “চাবুকের ভয়ে সার্কাসের সিংহও লাফ দিয়ে চেয়ারে বসা শিখে ফেলে। কিন্তু, ওই সিংহকে আমরা সুশিক্ষিত বলি না, প্রশিক্ষিত বলি।”
এর কারনটা কি? নিয়মিত পরীক্ষার হার কমানো কেন মান উন্নয়নের অন্যতম কারন? কেন সার্কাসের সিংহ সুশিক্ষিত না? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে প্রায়ই সবাইকে বলতে শোনা যায় যে আমাদের মুখস্ত বিদ্যাচর্চার প্রথা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতির অন্যতম কারন। এদের সাথে আমি সহমত। তবে, নিয়মিত পরীক্ষা নিলে মুখস্ত বিদ্যা হবে অনিবার্য। আপনি যখন নিয়মিত পরীক্ষা নিবেন, তখন প্রশ্নপত্রের একটা প্যাটার্ন তৈরী হবে। হতে বাধ্য। যারা এই পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে চাবে তারা ক্রমেই বিভিন্ন বিষয়ের গভীর বিশ্লেষনে যাওয়া বাদ দিয়ে দিবে। তারা এই প্যাটার্নের প্রশ্নের সমাধান বের করার উপরে বেশি মনোযোগ দিবে।
এইসব পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীদের যে মূল্যায়ন করে থাকি তা কিন্তু না, এইসব পরীক্ষার রেসাল্ট দ্বারা ওই শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদেরও আমরা মূল্যায়ন করি। এতে করে শিক্ষকরাও বাধ্য হয় কোনো বিষয়ের গভীর পর্যালোচনা, তুলনামূলক বিশ্লেষণ ও সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করতে উদ্বুদ্ধ করা বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় পাস করা শিখাতে। যে কোন বিষয়ে শুধুমাত্র প্রশ্নের উত্তর বুঝার জন্য যতটুক জানা দরকার ঠিক ততটুক শিখানোর পর দ্রুত প্রশ্ন উত্তরের দিকে নজর দিতে। ক্রমেই শিক্ষা ব্যবস্থা পরিনত হয় মুখস্ত বিদ্যা চর্চায়। এই পরীক্ষার প্রেসার না থাকলে শিক্ষকদের স্বাধীনতা থাকে প্রকৃত ভাবে শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করার। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যদি সুশিক্ষিত না হয়ে শুধুমাত্র প্রশিক্ষিত হয়, তাহলে তা আমাদের দেশের জন্য হবে খুবই দুঃখজনক।
শামস্ ইশতিয়াক রহমান, সম্পাদক, মুক্তিফোরাম।