বাংলাদেশের হেলথ সিস্টেম ও তাতে নীতিনির্ধারক, সংবাদমাধ্যম ও ডাক্তারদের ভুমিকার আমি একজন কড়া সমালোচক। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হবার সিদ্ধান্ত বদলে আমার এককালের স্বপ্নভুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম শুধু এই কারনে, আমি জানতাম ডাক্তারদের জীবনটা কতটা কঠিন। আমার শিক্ষাজীবনে গত প্রায় এক যুগে আমি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার মত বিলাসিতা করতে পারি নি, সেই সুযোগ ছিল না। মেডিক্যাল কলেজের ভয়ংকর শ্রমসাধ্য পড়াশোনার পর চিকিৎসার মত বিলম্বে ফলপ্রসু পেশায় আসা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
আজকে ডাঃ মঈন দুটো ছোট ছোট সন্তান আমাদের সামনে রেখে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন। আমি এটাকে কেবল মৃত্যু বলবো না, এটা একটা সিস্টেম্যাটিক কিলিং। রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছেন গরীবের চিকিৎসক খ্যাত এই মেধাবী মানুষটি। যে দুর্বৃত্ত শাসকগোষ্ঠী ৩৭ লাখ টাকা দিয়ে হাসপাতালের পর্দা কেনে, কিন্তু মানুষের চিকিৎসার জন্য বিভাগীয় পর্যায়ের হাসপাতালে আইসিইউয়ের ব্যবস্থা করতে পারে না, স্যাটেলাইট ওড়াতে হাজার কোটি টাকা খরচ করতে পারে অথচ চিকিৎসকদের পিপিই দিতে পারে না, সেই দুর্বৃত্ত শাসকগোষ্ঠীর হাতে হওয়া অজস্র খুনের তালিকায় ডাঃ মঈনও আরেকজন হিসেবেই আমার কাছে গন্য হবেন।
কয়েকদিন আগে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম, এই মুহুর্তে আমাদের এক নম্বর প্রায়োরিটি ডাক্তার, নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের জীবন রক্ষা। তারা যদি না বাচেন, তাহলে কেউ বাচবে না। আমাদের শাসকেরা স্বাধীনতার ৪৯ বছরে দেশের মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য যা খরচ করেছেন তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ করেছেন মানুষের জীবন ধ্বংস করার জন্য।
১৭ কোটি মানুষের দেশে সচল ১৯২টা আইসিইউ এই রাষ্ট্রের হত্যাকারী চরিত্রেরই প্রকাশ। ডাঃ মঈন একজন আইকনিক সিম্বলে পরিনত হলেন। একটা খুনী শাসকচক্রের লোভের যুপকাষ্ঠে কিভাবে চাউলচোর গোষ্ঠী দুধে-ভাতে থাকে আর সৎ-মেধাবী মানুষদের প্রাণ যায়, শহীদ ডাঃ মঈন তার এক জ্বলন্ত উদাহরন হয়ে থাকবেন। আমি জানি না তাকে ডাক্তার সাহেবরা মনে রাখবেন কি না। আমরা যারা কোন একদিন ইনসাফের এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি,তারা অবশ্যই মনে রাখবো।
মুহাম্মদ সজল
লেখক ও এনজিও কর্মী