আমি কাশ্মীরের সেই মেয়েটিকে চিনি না যাকে গণধর্ষণ করে জলায় ফেলে রাখা হয়েছিলো। চিনলেও অবশ্য আমি তাঁর ভাষা বুঝতাম না। বাবেলের জিগুরাত বেয়ে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে চেয়েছিলো, মানুষ জানে না কিছুটা দূরত্ব রাখতে হয়, সেই থেকে মানুষ মানুষের ভাষা বোঝে না।
আমি অবশ্য সেই বালুচ মাকেও চিনি না। যিনি আজো অপেক্ষায় আছেন ছেলের লাশের জন্য। নিজহাতে গোর দিতে।
আমি তো সেই তামিল শিশুটিকেও চিনি না, অসম সেই গৃহযুদ্ধের দিনগুলিতে, যাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। পরদিন পত্রিকায় এসেছিলো রাবণরাজ্যে শান্তি এসে গেছে। শিশু হত্যা ছাড়া সাধারণত শান্তি আসে না।
আমার কি সেই সান্তালের সাথে দ্যাখা হয়েছে, যার লাশ বাহাত্তর ঘন্টা পড়েছিলো আখক্ষেতে? আমি কি সেই গারো মেয়েটির মুখে তাকিয়েছি, যাকে মাইক্রোবাসে তুলে গণধর্ষণ করা হয়েছিলো? আমি কি সেই চাকমা ছেলের নাম জানি, যার পাহাড়ি বোন কল্পনা হারিয়ে গেছে? আমি কি সেই মারমা মেয়েকে মনে রেখেছি, যাকে ধর্ষণের পরে, ফালি ফালি করে ছড়িয়েছিটিয়ে রাখা হয়েছিলো পাহাড়ে? আমি কি সেই বিহারি কিশোরীর আর্তচিৎকার শুনেছি, যার পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো? আমি কি কখনো…? আমি কি কোনোদিন…?
আমার কাছে তাই রোহিঙ্গাদেরকেও ভীষণ অপরিচিত লাগে। আমি না, তাদের ব্যাপারটা, ঠিক বুঝি না। আদিবাসি শুনলেই শেকড়বাকড়ের কথা মনে হয় আমার, তাই উৎস খুঁজি, খুঁজতে খুঁজতে বুদ্ধ আর মুহাম্মদ পর্যন্ত পৌঁছাই।
ওদিকে আমার চোখের সামনে জাতিরাষ্ট্রের আগুন জ্বলে, জতুগৃহের দিকে যায়, যেখানে নিষাদী তার ছেলেদের নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমায়। সে আগুনে বিছানা, বালিশ, মানুষের বাচ্চা পোড়ে। আমি দেখি না মানুষ মানুষকে কেটে ফেলছে, করাতকলের মতো নির্লিপ্ত, যেনো মানুষের সাথে কাঠের কোনো ফারাক নেই।
আমি একটা জন্মান্ধ উপমহাদেশে একা দাঁড়িয়ে থাকি।
২০ নভেম্বর ২০১৬
কবিঃ ইরফানুর রহমান রাফিন মুক্তিফোরামের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য