যৌন হয়রানি নিয়ে আজকের দিনে আমরা কিছুটা সোচ্চার হইলেও আরেকটা ব্যাপার আছে যেটা নিয়ে কণ্ঠ তোলার ফুরসৎ হয় না আমাদের; যেটা কিনা প্রতিনিয়ত এমনভাবে ঘটতেই থাকে যে যারা এই কাজটা করে তারা এইটাকে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়ার মতো সাধারণ ব্যাপার মনে করে।
ব্যাপারটা হচ্ছে মেয়েদের দিকে তাকায়ে বাজেভাবে স্টেয়ার করা। আমার মনে হয় ছেলেদের দিকেও যে তাকানো হয় না ব্যাপারটা এমন না। তবে নিঃসন্দেহে মেয়েরা অনেক অনেক অনেক বেশি শিকার হয় এই জিনিসের। প্রতিদিন রাস্তাঘাটে তো বটেই, আজকাল বিশেষত জাতীয় দিবসগুলায় এবং বিভিন্ন পলিটিকাল সম্মেলন গুলার দিনে। কারণটা খুবই পরিষ্কার, সাংগঠনিক বিভিন্ন জায়গার লোকজন এক জায়গায় হয় এসব দিনগুলায়। এদের মধ্যে “একটা অংশ” অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই আসে এইটা মাথায় রেখে ‘মেয়ে দেখা যাবে অনেক’ কিছু কিছু ‘ছেলে দেখা যাবে অনেক’ এই মানসিকতা অন্তত আংশিকভাবে নিয়ে।
ভাড়া করায় আসুক আর আদর্শ বুকে নিয়া আসুক সেই আলাপে না গিয়ে যদি এইটুকু দেখি যে বেশ কিছু পোলাপান এই স্টেয়ার করার কাজটা খুব ভালোভাবেই সম্পন্ন করে যায় এই দিনগুলায়। আর তখন কি হয়? যেই মেয়েগুলা প্রতিদিন রাস্তাঘাটে বাজে চোখের শিকার হচ্ছে সেই শিকার হওয়ার পরিমাণ অনেক অনেক হারে বেড়ে যায়! এজন্য এখন জাতীয় দিবস বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন হোক, আজকের মতো ছাত্রফ্রন্টের সম্মেলন হোক; মানে যেই আয়োজনে প্রচুর মানুষ নানা জায়গা থেকে আসবে সেই সব আয়োজন যখন হয় তখন মেয়েদের জন্য বের হওয়া একটা ট্রমাটিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়!
এখন আসি ক্যাম্পাস এলাকায় সম্মেলনের ব্যাপারে। চিন্তা করেন এই যেগুলা বললাম এই জিনিস যদি ক্যাম্পাসের মধ্যে হয় তখন কি পরিমাণ স্টুডেন্টের, বিশেষত নারী শিক্ষার্থীদের নিজের ক্যাম্পাসে এই জিনিসের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা কত বেড়ে যায়! সম্ভাবনার কথা বাদই দেন। আজকে আমার দিকে বাজেভাবে স্টেয়ার করেছে মিছিল এর স্রোতের মাঝে কয়েকজন মিলে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে।
জাতীয় নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের প্রচারণাকারী পিকাপ থেকে নিশ্চিতভাবে বহিরাগত ছোকরার দল ক্যাম্পাসের বাসের নিচতলার দিকে তাকায়ে নিজেদের মধ্যে স্পষ্টতই আজেবাজে আলোচনা করতে দেখেছি। চোখের ভাষায় এগুলা খুবই স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। মধুর ক্যান্টিনের সামনে যেসব দিন বহিরাগতদের (ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ, ইডেন ছাত্রলীগ ইত্যাদি শাখার লোকজন আসে) ভীড় লেগে থাকে সেসব দিনেও এইভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাওয়ার ঘটনা অনেক বেশি হারে ঘটতে থাকে। মুখে কিছু বলে না, চুপেচুপে নিজেদের মধ্যে বলে! ব্যাপারগুলা অসম্ভব অস্বস্তির! আমার কাছে যৌন নিপীড়নের থেকে কম কিছু লাগে না এইসব! কিন্তু তাকানোর প্রতিবাদে কখনওই কিছু করা যায় না!
এই জিনিসগুলা হয়, সবসময় হয়,সবখানে হয়, এত মানুষের আয়োজন করলে অনেক বেশি হয় সাধারণ সময়ের চেয়ে। সেই আয়োজন ক্যাম্পাসে করলে ভয়াবহতা অনেক অনেক বেড়ে যায়।
ক্যাম্পাস সম্মেলন কেন্দ্র না তো, তাইনা! আর সম্মেলন কেন্দ্র হিসাবে জায়েজ করে ফেলে থাকলেও আমার কথা হচ্ছে ক্লাস টাইমে কিভাবে প্রশাসন পারমিট করে দেশব্যাপী কোন সংগঠনের সম্মেলন? ক্লাসে কি পরিমাণে আওয়াজ যায় এবং সময় নষ্ট হয় এতে, এ নিয়ে কোন ধারণাই কি রাখে না কমনসেন্সলেস প্রশাসন! নাকি মধুর ক্যান্টিনের রেগুলার আওয়াজ শোনায়ে অভ্যস্ত করে ফেলসে দেখে মনে করে সেইটাও জায়েজ, এগুলাও জায়েজ! মধুর ক্যান্টিনের সারা বছরের আওয়াজে ভাই অতিষ্ট প্রথম থেকেই! এইটা তো বন্ধ হওয়ার না! আর প্রথম থেকেই দেইখা আসতেসি, তো কিভাবে আর দাবি করি বন্ধ করার! এইসব বললে বলবেন আবার- তো আসছো ক্যান ঢাবিতে! এইডাই সায়েন্স এর জায়গায় বলবে এইডাই তো গৌরবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!
এখন বলি,কিছু মানুষ এতক্ষণে গাইল্লাতে শুরু করসে আন্দোলনের সময়কার চিল্লাপাল্লা করার ব্যাপারে কাউন্টার নিয়া! ভাই কোন কিছুর প্রতিবাদে প্রটেস্ট কইরা চিল্লাপাল্লা করা আর কোন সংগঠনের অফিসিয়াল/আন-অফিসিয়াল রেগুলার বেসিসের প্রোগ্রামের মধ্যে মোটা দাগের পার্থক্য আছে। আন্দোলনের ব্যাপারটা এই জায়গায় আলাদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জায়গা একদম গোড়া থেকেই। আন্দোলনে বহুত গেসি। আমার অন্তত কোন আন্দোলনে হ্যারাসড ফিল হয় নাই আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে। কিন্তু পলিটিকাল প্রোগ্রাম (দাবি আদায়ের না বরং নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার কিংবা আধিপত্য বিস্তারের), সম্মেলনের জায়গা না। অন্তত ক্লাস চলাকালীন সময়ে না!
ক্যাম্পাসে আন্দোলন চলুক, আন্দোলনে চিল্লাপাল্লা চলুক! কোন দেশব্যাপী সংগঠনের বাৎসরিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক রাজনৈতিক *লাউড* অনুষ্ঠানের জায়গা না হোক বিশ্ববিদ্যালয়!
অরুণিমা তাহসিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক