প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত উনার কয়েকটা কথা…
শেখ হাসিনা বলেন, “এ ঘটনার পরই ছাত্রলীগকে বলেছি অভিযুক্তদের বহিষ্কার করতে। তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।”
মন্তব্যঃ ছাত্রলীগের যে কাউকে বহিষ্কার করা যায় উনার নির্দেশে! তাহলে ছাত্রলীগের যারা নেতা হয় তারাও নিশ্চয়ই উনার নির্দেশেই নেতা হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উনার ‘নির্দেশিত’ দেশের প্রধান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ছাত্রলীগের কমিটি তাতে যে সাধারণ সম্পাদক, সহ-সভাপতি সহ ৯-১১ জন প্রশিক্ষিত পেশাদার খুনিদের মতো আচরণ করা ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী ঢুকে গেলো সেটার দায় উনার আছে কিনা???
শেখ হাসিনা বলেন, “পুলিশকে বলেছি অপরাধীদের ধরতে। অনেকেই ধরা পড়েছে। ছাত্ররা নামার আগেই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।”
মন্তব্যঃ উনি না বললে কি পুলিশ ‘অপরাধী’দের ধরার ক্ষমতা রাখে না? কয়েকজন ২০-২২ বছরের ছাত্র নামধারী খুনি-সন্ত্রাসীকে ধরতেও উনার নির্দেশ লাগে?? তাহলে সরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় নামের আলাদা একটা দপ্তর ও পুলিশের বড় বড় কর্তাদের আমাদের ট্যাক্সের টাকায় পোষার দরকার কি??
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, “বুয়েট চাইলে নিষিদ্ধ করতে পারে। তাদের সিনেট আছে, এটা করতে পারে।”
আবার অন্যদিকে বুয়েটের ভিসি বলেছিলেন, “এটা তো পাবলিক ইউনিভার্সিটি। এখানে আমি নিজের ক্ষমতায় সবকিছু করতে পারি না। সরকারকে প্রতিটা ক্ষেত্রে বলতে হয়।”
মন্তব্যঃ ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের আলাপ কোথা থেকে কার ইশারায় ছড়ানো হয়েছে সেটা ক্লিয়ার হচ্ছে? ছাত্ররাজনীতি না থাকলেও পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরে যদি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ থাকে তাহলে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা কিভাবে কি করে সেটার উদাহরণ আমাদের চোখের সামনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। ওখানে সরকারের কোন রকমের সমালোচনা করতে গেলেই বলা হয় এখানে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ তাই এখানে এগুলো চলবে না। আর সরকারি দলের সন্ত্রসীরা বুক ফুলিয়েই ছাত্রলীগের মতো করে কাজকর্ম চালিয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, “অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় যা–ই হোক, নিশ্চিত করা হবে সর্বোচ্চ শাস্তি।”
মন্তব্যঃ উনি দেশের নির্বাহী প্রধান, অপরাধী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে বিচার বিভাগ। তাহলে উনি কেন ঘটা করে বলেন ‘সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে’? তাহলে কি বিচার বিভাগ বলে কিছু নেই!!!
শেখ হাসিনা বলেন, “বুয়েটে আমাদের একাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে, নিহত হয়েছে। কয়টার বিচার হয়েছে।”
মন্তব্যঃ উনাদের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনেরই বিচার হয়নি আর এখন তো আসামীই উনাদের নেতা-কর্মী! তাহলে বোঝা যাচ্ছে আবরারের বিচারের ভাগ্যেও আবু বকর ও বিশ্বজিৎ এর বিচারের ভাগ্যের সম্ভাবনা থাকতে পারে।
সর্বোপরি এটা বারবারই আমাদের চোখের সামনে চলে আসে যে, এই রাষ্ট্রের দল-সরকার-প্রশাসন-বিচার বিভাগ সবই আসলে চলে একব্যক্তির কথায়। আবার উনাকে কারও কাছে জবাবদিহিও করতে হয় না। তাই ছোটখাটো উপসর্গ নিয়ে আলাপ না করে রোগের কারণ নিয়ে আলাপ করুণ। আর অন্তত ৯০ এর পরের অভিজ্ঞতা থেকেও আমরা আরামসে বুঝতে পারি ব্যক্তি-দল বদল করে মানুষের ভাগ্যের বদল হয় না।
আমরা যদি আমাদের নিজেদের ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ এইদেশে নিরাপদ করতে চাই। দেশটাকে মানুষের বসবাসের উপযোগী করে তুলতে চাই তাহলে এই একব্যক্তি কেন্দ্রিক জবাবদিহিহীন ক্ষমতাকাঠামোকে প্রশ্ন না করে, এই ক্ষমতাকাঠামোকে মানুষের হাতে জবাবদিহির আওতায় আনার মতো সংস্কারের ব্যবস্থা না করে আমাদের সামনে আর বিকল্প নেই।
লেখাঃ ফরিদুল হক , রাষ্ট্রচিন্তা।