বুয়েটের ছেলেটা যে রুমে থাকতো, সে রুমটার নম্বর ১০১১। তরুণদের উচিত সে রুমটাতে গিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে পুষ্পস্তবক দেয়া। যেমনটি করেছিলেন, হুমায়ুন আজাদ—রোকেয়া হলে পুলিশের আক্রমনের প্রতিবাদে। যে রুমটিতে তাকে হত্যার করা হয় সেটি ২০১১। দেশের তরুণ মেধাবী চিত্রশিল্পী ও ভাস্করদের উচিত সে কক্ষে যাওয়া। সেখানে গিয়ে ওরা হায়নাদের ছবি এঁকে সেঁটে দিবে—যেমনটি এঁকেছিলেন কামরুল হাসান, একাত্তরের সময়। সে কক্ষে থাকবে নিরপরাধ ছেলেটির ভাস্কর্য। ভাস্কর্যে ফুটে উঠুক— ছেলেটি গণিত করছিলো। সে গণিত শেষ না করতেই তাকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। আর, ১০১১ কক্ষটি হয়ে যাবে স্মৃতির কক্ষ। সেখানে কোনদিন আর কোন শিক্ষার্থী থাকবে না।
তরুণদের উচিত, ১০১১ নম্বরটিকে তাৎপর্যময় করে রাখার জন্য, অক্টোবরের এগারো তারিখ (১০/১১) সারা দেশে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা। আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মকে বোবা করে রাখার জন্য প্রতিটি সরকার ও তাঁর পাষণ্ড সাঙ্গোপাঙ্গরা অবিরাম আঘাত করে। এটা বন্ধ করতে হবে।
বুয়েটে সকল প্রকার দলীয় রাজনীতি, পেশি শক্তির প্রয়োগ, গুচ্ছশক্তির প্রয়োগ, মাস্তানি নিষিদ্ধ করতে হবে। বুয়েট থেকে শুরু করে ক্রমান্বয়ে, সারা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে কোন রাজনৈতিক নেতাদের আধিপত্য থাকবে না। নেতারা ক্যাম্পাসে আসবে ছাত্রদের মুখোমুখি হওয়ার জন্য, ছাত্রদের কাছ থেকে ফুলের তোড়া আর স্লোগান পাওয়ার জন্য নয়।
আবরারের হত্যাকে জাতীয় বাকস্বাধীনতা দিবস হিসেবে তরুণরা পালন করুক। দেশে সকল প্রকার স্টেরিওটাইপ চিন্তা ও ধারণাগুলো মুছতে হবে। একটা দেশের মানুষ কথা বলবে সবকিছু নিয়ে। কথা বলা যে দেশে অপরাধ, সে দেশে পঞ্চাশটা পদ্মাসেতু দিয়ে কিছু আসে যায় না। নির্ভীক চিত্তে যে দেশে কথা বলা যায় না, সে দেশের জিডিপি দিয়ে মানুষের কিছু আসে যায় না। নিঃঙ্কোচে সে সমাজে কথা বলা যায় না, সে সমাজে চাকচিক্য থাকতে পারে কিন্তু জীবন জিয়ে না।
আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পরও যদি আমাদের দেশটিতে বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাহলে এই ১০১১ নম্বরটি যেনো একটা স্মৃতি বহন করে। কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার হোক শুরু, এখান থেকে, এখন থেকে। জেনো, চুপ থাকলে, দানবেরই জয় হয়।
লেখাঃরউফুল আলম, নিউজার্সি, যুক্তরাষ্ট্র।