জাতীয় নাগরিক পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা সারজিস আলমের নির্বাচন সংক্রান্ত বক্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকর। নির্বাচন অনন্তকালের জন্য পেছানোর যে দাবি তিনি তুলেছেন, তা কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে না, বরং বাধাগ্রস্ত করে।
বিগত রেজিমের অপরাধীদের অবশ্যই বিচার করতে হবে, তবে তা স্বস্ব বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে করতে হবে। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। এর জন্য নির্বাচন বন্ধ রাখতে হবে—এমন যুক্তি শিশুসুলভ। তবে যারা এই যুক্তি দিচ্ছেন, তারা যে শিশুসুলভ চিন্তা থেকে দিচ্ছেন তা নয়। এটা স্পষ্ট যে আপনারা মনে করছেন নির্বাচনে জিততে পারবেন না এবং ক্ষমতায় যে স্টেক আছে তা হারিয়ে ফেলবেন। তাই নির্বাচনের বিরোধিতা করছেন।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ক্ষমতা কয়েকটি ক্লাবের মধ্যে আটকে পড়েছে, যা প্রত্যাশিত নয়। ক্ষমতার বহুমাত্রিক রূপ থাকে, আর সেই বহুমাত্রিকতা নিশ্চিত করা যায় নির্বাচনের মাধ্যমে। শুধু নির্বাচনই গণতন্ত্র নয়, তবে নির্বাচন গণতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ এবং বৃহত্তর জনমত জানার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য উপায়। এর কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার দিকে যাওয়ার একমাত্র উপায় জরুরি সংস্কারের পর গ্রহণযোগ্য ও সার্বজনীন নির্বাচন।
এই নির্বাচনে দেশের মানুষ যাকে নির্বাচিত করবে, সেই দেশ শাসন করুক—তা নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। মানুষ যদি জামায়াতকে নির্বাচিত করে, তাহলে জামায়াত সরকার গঠন করুক। যদি বিএনপিকে নির্বাচিত করে, তাহলে বিএনপি করুক। যদি নাগরিক পার্টিকে নির্বাচিত করে, তবে তারা সরকার গঠন করুক। কিন্তু কথা হলো—সরকার যেই গঠন করুক, নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে।
ইতোপূর্বে হাসিনা সরকার “উন্নয়ন ও নির্বাচন” ফ্রেমিং করে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ২০১৪, ২০১৮, এবং ২০২৪ সালে কেড়ে নিয়েছে। এখন আপনারা “বিচার বনাম নির্বাচন” ফ্রেমিং করে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে আসবেন না। বিশ্বাস করুন, পারবেন না—মাঝখান থেকে শুধু রাজনৈতিক বদনাম নিজেদের কাঁধে নেবেন।
ইতোপূর্বে হাসিনা সরকার “উন্নয়ন ও নির্বাচন” ফ্রেমিং করে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ২০১৪, ২০১৮, এবং ২০২৪ সালে কেড়ে নিয়েছে। এখন আপনারা “বিচার বনাম নির্বাচন” ফ্রেমিং করে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে আসবেন না। বিশ্বাস করুন, পারবেন না—মাঝখান থেকে শুধু রাজনৈতিক বদনাম নিজেদের কাঁধে নেবেন।
নাগরিক পার্টির প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করুন। এই ধরনের বক্তব্য ব্যক্তি সারজিসের অবস্থান, নাকি নাগরিক পার্টির অবস্থান? আপনাদের একজন মুখপাত্র আছেন, যতদূর জানি। তাকে কাজে লাগান। বিতর্কিত বিষয়গুলোতে দলীয় অবস্থান পরিষ্কার রাখলে নাগরিকদের বুঝতে সুবিধা হয় এবং এতে আপনাদের রাজনৈতিক উপকারই হবে, অপকার নয়। নিজেদের নির্বাচনবিরোধী দল হিসেবে পরিচিত করাবেন না, এবং অন্যদেরও এই অজুহাত দেবেন না।
আসিফ বিন আলী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যনরত একজন পিএইচডি গবেষক
Leave A Reply