বাংলাদেশ নামের এই দেশ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মাথা তুলে দাড়ায়। আজকে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আমার মনে প্রশ্ন জাগছে “ আমি কি আসলেই স্বাধীন? “। লক্ষ্য যদি করি তাহলে দেখা যায় একজন মানুষের যে মৌলিক অধিকার গুলো রয়েছে তার সব কয়টি আজ আঘাত প্রাপ্ত এবং তার অস্তিত্ব শুধু সংবিধান এ লিপিবদ্ধ অবস্থায় ছাড়া অন্য কোথাও লক্ষ্য করা যায় না। আমার মন্তব্যটি আমি প্রমান করে যাব এই লেখাটিতে। আমাদের প্রধান মৌলিক অধিকার ৫ টি যথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা।

• প্রথমে আসি খাদ্য নিয়ে আমি একজন নাগরিক হিসেবে খাদ্য আমার প্রধান মৌলিক অধিকার। আমি খাদ্য পাচ্ছি ঠিকই কিন্তু তা ফরমালিন যুক্ত খাদ্য যা আমাকে ক্যান্সারের দিকে ধাবিত করে।এই খাদ্যের মূল্যও তুলনামূলক ভাবে অনেক বেশি।

• শিক্ষা নিয়ে তেমন কিছু বলার প্রোয়জন মনে করছি না কারণ আমরা সবাই জানি শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা । এই দেশে এম. পি সাহেবার বি. এ পরিক্ষা দিতে যান ভারা করা মানুষ এভাবেই চলে আসে সাটিফিকেট। হাজার হাজার GPA-5 কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ভতি পরিক্ষায় পাশ করতেই খবর হয়ে যায় আজকের শিক্ষার্থীদের এটি থেকেই আমরা বুঝতে পারি আসলে আমার দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার কি অবস্থা।

• চিকিৎসা নিয়ে কিছু কথা বলার খুব প্রোয়জন বোধ করছি । দেখুন একটি স্বাধীন দেশে আপনার চিকিৎসা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আপনার রাষ্ট্রের। আজকে সরকারি হাসপাতালগুলোয় গেলে বুঝা যায় মানুষের কষ্ট। সিট নাই হাসপাতালে ফ্লোরে চাদর বিছিয়ে কিংবা বারান্দায় হচ্ছে মানুষের চিকিৎসা। বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতো মরা মানুষ নিয়েও ব্যাবসা করে আমরা আগেও দেখেছি। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এই রাষ্ট্র একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র।

• সংবিধানের ২৭নং অনুচ্ছেদ অনুসারে, “সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।“ কিন্তু দেখেন হল মার্ক কেলেঙ্কারি, সেয়ার বাজার, রিজার্ভ এর টাকা চুরি, তনু হত্যা হতে শুরু করে অরো অনেক আছে নাম বলে শেষ করা সম্ভব ন্য এমন ঘটনাগুলোর কোনো সুষ্ঠ বিচার এই জাতি পেল না। আমার প্রশ্ন “আইনের চোখে একজন সাধারণ নাগরিক আর মন্ত্রী সাহেবের ভাইগ্নার মধ্যে কেন এই অসমতা লক্ষ্য করা যায়?” কাগজে কলমে সমান লেখা থাকলেও আসলে এই দেশে আইনের চোখে সব সময় সবাই সমান হয় না।

• ২৯নং অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হাজার চেষ্টা করেও অনেক ভালো ভালো পদপ্রার্থীরা চাকরি পান না কারণ, যেই পরিমানে দূনিতী ও স্বজনপ্রীতি আমরা লক্ষ্য করি এমনটা হওয়াই বোধহয় স্বাভাবিক।

• ৩১নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে “বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক যে কোন স্থানে অবস্থানরত অবস্থায় আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার রাখে।“ কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আদেশ ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে পুলিশের ভুমিকা আমরা উপলব্ধি করতে পাড়ি না। সুতরাং আইনের আশ্রয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেই চাইতে হবে থানা গুলোয় নয়।

• ৩২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, “আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।” এই অধিকার জাতিসংঘের মানবাধিকার-ঘোষণাপত্রে রয়েছে এবং এই অধিকারের ভিত্তিতে বিশ্বের বহু দেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে।কিন্তু দেখেন আপনি যাই করেন না কেন একদল লোক তদারকি করতেই থাকে। এইখানে আমি কোন রেফারেন্স টানতে চাই না নিজেকে প্রশ্ন করলে উত্তর পেয়ে যাবেন আপনারা কি আসলেই স্বাধীন নাকি।

• ৩৩ নং অনুচ্ছেদে ঘোষিত হয়েছে যে, “গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে যথাসম্ভব দ্রুত গ্রেপ্তারের কারণ না জানিয়ে আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শের ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না।“ আর এইদেশে আপনাকে আটক করতে ওয়ারেন্টেরও প্রোয়জন নেই। পুলিশ মানুষকে থানায় নিয়ে পিটিয়ে মেরেও ফেলে। তাহলে, “এই অইন রক্ষাকারী বাহিনী আইন লংঘনের সাহস পাচ্ছে কোথা থেকে?”

• ৩৪ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে, “সকল প্রকার জবরদস্তি-শ্রম নিষিদ্ধ; এবং এই বিধান কোনভাবে লংঘিত হইলে তাহা আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে।” ছোট ছোট বাচ্চাদের দিয়ে ভিক্ষা করানো হয় বিভিন্ন সিগনালে। খবরে এসেছিলো এই সব সিন্ডিকেট নাকি খুব প্রভাবশালী মানুষ দেখা শুনা করেন বা তারা এতোই সক্ষম যে পুলিশ এই সিন্ডিকেট ধরতে পারছে না।

• ৩৭নং অনুচ্ছেদ মোতাবেক, “আইনসাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।“ কিন্তু পারমিশনই মিলে না বিভিন্ন দলের আর সাধারণ মানুষ রাস্তায় নামলে তাদের সামাল দিতে হাতিয়ার মজুদ করা আছেই। মানে কথাটা এমন ” whatever I do with this country Don’t dare to raise an equation! ” আরেহ ভাই দেশতো আমার দাদাও যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছে যদিও সাটিফিকেট দেয়নি । আমি দেশের কিছু খারাপ দেখলে দুইটা কথা বলতে পারবো না?

• ৩৯ নং অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশের নাগরিকদের চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতার নিশ্চয়তা দিয়েছে। প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছে।কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি নিজেই চিন্তিত এই লেখা প্রকাশ হলে আমার অস্তিত্ব থাকবে কিনা সেটি নিয়ে। এই দেশে আব্রার ফাহাদের মতো মেধাবী ছাত্রটির নিজের জীবন দিয়ে দেওয়া লাগে শুধুমাত্র একটি মত প্রকাশের কারণে।
সুতরাং দেশের যে অবস্থা এটিকে আমরা সাংবিধানিক না বলে একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরাচারী রাষ্ট্র বললে ভুল হবে না। আমি আপনি স্বাধীন না ভাই বোকার স্বর্গে বেচে না থেকে মরে যাওয়াটাও অনেক সম্মানের।

আমার আজ মনে হয় জাতির পিতা বেচে থাকলে বলতেন “ আমার বিশ্বাস তোমরা এই দেশকে আবার স্বাধীন করে ছাড়বা, আমি জানি তোমরা পারবা কারণ ৭১ এ আমি যখন ছিলাম না তখন যখন পেরেছো এখনো পারবা । মনে রাখবা আমার সোনার বাংলার মানুষের ও তার অধিকারের বিরুদ্ধে যেই শক্তি আসুকনা কেন সেটা তোমাদেরই প্রতিহত করতে হবে। রক্ত যখন ৭১ এ দিয়েছি এখনো দিবো তবু এই বাংলা নিয়ে খেলার অধিকার কাওকে দিবো না।“ আজ সত্যিই জাতির পিতার অভাব অনুভব করছি।

লেখাঃ ব্যথিত নাগরিক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেসনালস এর শিক্ষার্থী

Share.

মুক্তিফোরাম একটি মুক্তিবাদী, বহুত্ববাদী এবং জনপন্থী সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে গড়ে ওঠা সংগঠিত গণমঞ্চ। এর লক্ষ্য হলো নতুন ধরণের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চা নির্মাণ। নোংরা হিসেবে রাজনীতির যে রূপকল্প এদেশের মানুষের কাছে নির্মাণ করা হয়েছে, সেটিকে চ্যালেঞ্জ করতে চায় মুক্তিফোরাম। আবার যেসব একক আদর্শ (যেমন বামপন্থা-ডানপন্থা) বা পরিচয়ের রাজনীতি (সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, জাতিবাদ) দিয়ে জনগণের সংহতি ও বৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে তার একটি এন্টিডোট হয়ে ওঠাও মুক্তিফোরামের প্রকল্প।

Leave A Reply