অথোরিয়াটারিয়ান লেফটদেরকে নিয়া অনেকেরই রোম্যান্টিক আবেগ আছে।
আমারও ছিলো, একসময়।
থাকাটা একেবারে অহেতুক না, হেতু আছে এইখানে।
ইন্ডিয়া-পাকিস্তান-বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে যেহেতু হিস্টোরিকালিই বিভিন্ন রাইট-উইং অথোরিটারিয়ান গাভার্নমেন্ট ছিলো, তাই এইখানে ফার লেফট-উইং অথোরিটারিয়ানিজমকে রোম্যান্টিসাইজ করাটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু এই রোম্যান্টিসাইজেশনটা, এখন বুঝতে পারি, ভয়ংকর।
টু বি ফেয়ার, ইডিওলজির দিক থেকে, এরা ইতালির ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট পার্টি বা জার্মানির নাৎসি পার্টির চেয়ে আলাদা। এরা অন্তত ওভার্টলি রেসিস্ট বা জেনোফোবিক না। রিলিজয়ন বা সেক্সুয়ালিটির প্রশ্নে এরা মোটাদাগে ‘প্রোগ্রেসিভ’।
কিন্তু রাইট-উইং অথোরিটারিয়ানদের সাথে এদের একটা মিল আছে, এরাও ওয়ান-পার্টি স্টেটে বিশ্বাস করে। এরা ডিক্টেটরশিপ অফ দ্য প্রলেতারিয়াতের কথা বলে। কিন্তু কার্যত প্রথমে সেইটা ডিক্টেটরশিপ অফ দ্য পার্টি, এবং শেষ পর্যন্ত ডিক্টেটরশিপ অফ দ্যা লিডার, নাথিং এলস।
আওয়ামি লিগ সরকার এই দেশের ইতিহাসের নজিরবিহীন স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেছে সেইটা সহজেই দ্রষ্টব্য। বড়ো আকারের কোনো গণঅভ্যুত্থান দেখা না দিলেও মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জমে আছে, চোখকান খোলা রাখলেই বুঝা যায়। সামনে তেমন গণঅভ্যুত্থানের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
দেশের সব সেন্সিবল মানুষ গণতন্ত্রের কথা বলছে। এরা জানে এখন ডিকটেটরশিপ অফ দ্য প্রলেতারিয়াতের কথা বললে লোকে তাদেরকে পাগল মনে করবে। তাই, কৌশলগত কারণে, এরাও গণতন্ত্রের কথা বলছে।
কিন্তু এরা গণতন্ত্রে একফোঁটা বিশ্বাস করে না। উত্তর কোরিয়ার নামের মধ্যে ডেমোক্রেটিক কথাটা আছে, কম্পুচিয়ার নামেও ছিলো, ইতিহাসপাঠকরা জানে এগুলো কোন জাতের গণতন্ত্র ছিলো। এরা রুথলেস ডিক্টেটরশিপরে গণতন্ত্রের নামে চালাইতে পারে।
এটা ঠিক এরা মোটাদাগে হাসিনার বিরোধিতা করে। কিন্তু কেনো করে? এই কারণে না যে হাসিনা স্বৈরাচারী, স্রেফ এই কারণেই যে উনি রাইট-উইং ঘরানার স্বৈরাচারী, তাদের স্বৈরাচারী না!
কালকে যদি কোনো কারণে হাসিনা গণতন্ত্র সম্পর্কে এদের অ্যাবসার্ড চিন্তাভাবনা মেনে নেন, এরা ৫ জানুয়ারি বা ৩০ ডিসেম্বরের ইলেকটোরাল ফার্স নিয়া একটা কথাও বলবে না, আরো ৫০ বছর আওয়ামি জুলুমশাহির শাসন মেনে নেবে।
এদের দুর্ভাগ্য, এই দেশে কোনো লেনিন-মাও-ফিদেল নাই। ফার লেফটের ইডিওলজিডাল ড্রিম বাস্তবায়ন করার ক্যাপাসিটি রাখেন এমন কোনো ক্যারিজমাটিক লিডার এখন পর্যন্ত উত্থিত হন নাই। এদের জীবিত নেতাদের সর্বোচ্চ সাফল্য ক্যাসিনো মালিক হওয়া, অর্থাৎ রাইট-উইং অথোরিটারিয়ান গাভার্নমেন্টের সাথে হাত মিলায়া আখের গোছানো।
কিন্তু তেমন নেতার উত্থানে সময় লাগে না।
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের প্রাক্কালে নিকোলাই বুখারিন, লিয়ন ট্রটস্কি, আর আলেক্সান্দ্রা কোলনতাই নিউ ইয়র্কে ছিলেন। লেনিন ছিলেন জুরিখে। রাশিয়ার ঘটনাপ্রবাহ দেখে তাঁরা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছিলেন।
সেই বলশেভিকদের এক বছরেরও কম সময় লাগছে বিপ্লবীদের একটা মার্জিনাল ফোর্স থেকে বিশাল একটা ফোর্সে পরিণত হতে। ডিসেম্বরে রাশিয়ার প্রথম সংবিধান সভা নির্বাচন হয়, তাতে সোশ্যালিস্ট রেভল্যুশনারিদের ২৯৯ আসনের বিপরীতে বলশেভিকরা পায় ১৬৯ আসন। প্রথম যেদিন সংবিধান সভা বসে, বলশেভিকরা আর্মি পাঠিয়ে সেটা ভেঙে দেয়, বিপ্লবোত্তর রাশিয়ায় গণতন্ত্রের জন্মদিনই তার মৃত্যুদিন। সেই ডিসেম্বরেই ফেলিক্স জেরঝিনস্কিকে প্রধান করে অল-রাশিয়ান এক্সট্রাঅর্ডিনারি কমিশন ফর ফাইটিং কাউন্টার-রেভল্যুশন অ্যান্ড স্যাবোটেজ গঠন করা হইছিলো। রুশ অ্যাক্রোনিম চেকা হিসেবেই বেশি পরিচিত সংস্থাটি লেনিনের জীবদ্দশাতেই ‘প্রতিবিপ্লব’ আর ‘অন্তর্ঘাত’ ঠেকানোর নামে ১,৪০,০০০ মানুষ মেরেছে। বলা হয়েছিলো এটা একটা সাময়িক ব্যবস্থা মাত্র। এই ‘সাময়িক’ ব্যবস্থা সত্তর বছর টিকে ছিলো; সময়ের সাথে চেকা থেকে ওগপু, এনকেভিডি ও কেজিবিতে রূপান্তরিত হয়ে।
সমাজতন্ত্রে আপত্তি নাই, কিন্তু গণতন্ত্রের বিনিময়ে না। আমি বামদিকে স্যান্ডার্স-করবিন পর্যন্ত যাইতে রাজি আছি, এর বেশি না, এরচে বেশি আমার পক্ষে নেয়া সম্ভব না। আপনের পক্ষে সম্ভব হইলে কন্টিনিউ সাপোর্টিং দেম, সে-ক্ষেত্রে আমার কামনা থাকবে, ইওর ড্রিম মে নেভার কাম ট্রু।
তথ্যসূত্র
(১) আর্চি ব্রাউন, দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ কমিউনিজম (ভিন্টেজ, লন্ডন, ২০১০), পৃ. ৪৮।
(২) ঐ, পৃ. ৫১-৫২
পোস্টস্ক্রিপ্টঃ আমি এই লেখাটা প্রথমে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। সেখানে আমাকে কর্তৃত্ববাদী বামপন্থা বুঝাতে ফার লেফট ব্যবহার করতে দেখে একজন আমার ভুল শুধরে দেন, সেই অনুযায়ী লেখায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হল, এটি আগের লেখাটির পরিশীলিত রূপ। ফার লেফটদের অনেকেই ডিরেক্ট ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করে, এনার্কিতে বিশ্বাস করে, দীর্ঘমেয়াদে এদের সাথে আমার চিন্তার দূরত্ব নাই। স্বল্পমেয়াদে অবশ্য আমি ডানদিকে সেন্টার রাইট থেকে বামদিকে সেন্টার লেফটের মাঝামাঝি যে-কোনো কিছু মেনে নিতে রাজি, গিভেন দ্যাট তারা ইন্ডিভিজুয়াল লিবার্টি, প্লুরালিজম, আর ডেমোক্রেসির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে। ১৯৬৮র প্রাগ বসন্তের ছবি যুক্ত করা হল, সে-বছর চেকোস্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত আধিপত্যের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান ঘটলে, ‘বিশ্ববিপ্লবের কেন্দ্র’ সোভিয়েত ইউনিয়ন ট্যাংক পাঠিয়ে সেটা দমন করে কর্তৃত্ববাদী বামপন্থাকে রক্ষা করে। তরুণরা বিশেষভাবেই ছিলো গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারিতে, ছবির মেয়েটি ট্যাংকে বসা সোভিয়েত সৈন্যকে বলছিলো, “ইভান, গো হোম!” লেখায় একটি সুগবেষিত বইয়ের তথ্য ব্যবহৃত হয়েছে, লেখক আর্চি ব্রাউন, তিনি পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক।
ইরফানুর রহমান রাফিন মুক্তিফোরামের একজন সম্পাদক