চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ঝুপড়ি।
সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মেহের লাল সরকার বিবেক তার বোন ও বান্ধবীসহ বসে আছেন। বিবেক জেনারেল ছাত্র, অর্থাৎ কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে যুক্ত নন। ঝুপড়িতে ওখানে আগমন ঘটে এক ছাত্রলীগ কর্মীর। প্রেমিকাসহ ওই বেঞ্চে বসতে গিয়ে সেখানে পানি দেখলে তিনি বিবেককে দোষারোপ করেন। বিবেক অভিযোগ অস্বীকার করলে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার জেরে ঐ ছাত্রলীগ কর্মী হলে গিয়ে আরও কয়েকজন নিয়ে এসে বিবেককে মারধর করেন। বিবেকের মাথা ফাটিয়ে দেন। ঘটনাটি বাইশে সেপ্টেম্বরের। সূত্র: দৈনিক আজাদী পত্রিকা
ঘটনাটি চবির অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি চিত্র। তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর কারণে মারধরের ঘটনা হামেশাই ঘটছে। কোনো নিরীহ গোবেচারা টাইপ ছেলেও এখানকার রাজনীতিতে ঢুকে আপাদমস্তক মাস্তান হয়ে উঠে। সুযোগ খুঁজতে থাকে, কখন কোথায় একটু নিজের দাপটটুকু প্রদর্শন করা যায়। উপরের ঘটনাটি যে ঘটিয়েছে, সে চবি ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের অনুসারী। এ বিষয়ে বিজয় গ্রুপের নেতা ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক জাহেদ আওয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ভুল বুঝাবুঝি থেকে জুনিয়ররা এটা করেছে। আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।
ত্রিশে সেপ্টেম্বরের ঘটনা। টাকা জমা নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে কথাকাটাকাটির জের ধরে মারামারি করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ বিএম ও ভিএক্স। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন এ ব্যাপারে সেইম কথাই বললেন, জুনিয়রদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে কক্ষ ভাঙচুর প্রত্যাশিত নয়। সূত্র: প্রথম আলো
এরকম অজস্র ঘটনা থেকে আরেকটা উদাহরণ দিব। একত্রিশে মার্চ। ফেসবুকে বান্ধবীর ছবিতে হাহা রিএক্ট দেয়া নিয়েও সংঘর্ষে জড়িয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ। এ বিষয়ে সিএফসি গ্রুপের নেতা (বর্তমান সভাপতি) রেজাউল হক রুবেল বলেন, জুনিয়রদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। আমরা সিনিয়রেরা বসে সমাধান করে ফেলব। সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন
চবি ছাত্রলীগকে বলা চলে মাস্তান তৈরির কারখানা। প্রথম বর্ষেই এখানে মাস্তানির পাঠ দেয়া হয়। দেয়া হয় নিশ্চিন্তে ক্ষমতা প্রদর্শন তথা ছ্যাচড়ামির ছাড়পত্র। এক শাটল ট্রেনে বসা নিয়েই কত সংঘর্ষ হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। যেকোনো মারধরের শিকার যদি কোনো পলিটিকাল ছেলে হয়, তখন দুই গ্রুপের সংঘর্ষ অনিবার্য। তাই ছাত্রলীগ কর্মীরা সাধারণত জেনারেল তথা ননপলিটিকাল ছাত্রদের সাথে মাস্তানি করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কেননা এদের কোনো ব্যাকআপ নেই, এদের নিশ্চিন্তেই চড় থাপ্পড় মারা যায়, রক্তাক্তও করা যায়। নির্লজ্জ নেতারা যথারীতি ভুল বোঝাবুঝি ও সমাধানের কথা বলেন, আর নির্লজ্জ প্রক্টর ব্যবস্থা নেয়ার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন।
জুনিয়রদের আস্কারা দিয়ে তাদেরকে নিজেদের পদ পাওয়ার স্বার্থে ব্যবহার করেন সিনিয়র নেতারা। কোনো অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধেই ন্যূনতম ব্যবস্থা নেন না তারা। নেবেনই বাঁ কেন, নিজেরাও এই সিস্টেমের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। সম্প্রতি বুয়েটে খুন হয়েছেন আবরার ফাহাদ। যে রাজনৈতিক কালচার ও বিচারহীনতার বলি হয়েছেন তিনি, আমরা দেখতে পাচ্ছি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও সেটা পূর্ণরূপে বিদ্যমান। চবি প্রশাসন ও সাধারণ ছাত্ররা কি এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য আবরার ফাহাদের মতো কারো খুন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে?
লেখক: শুভ্র কর্মকার, শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।